E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আজ বাইশে শ্রাবণ, রবীন্দ্র প্রয়াণ দিবস

২০১৬ আগস্ট ০৬ ১২:৫৩:০৩
আজ বাইশে শ্রাবণ, রবীন্দ্র প্রয়াণ দিবস

স্টাফ রিপোর্টার :বৃষ্টি নিয়ে অজস্র কাব্য-গীতি রচনা করেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি মানবের সব অনুভূতিকে বারবার খুঁজে ফিরেছেন বর্ষার ফোঁটার মাঝে। সেই বর্ষাকেই সঙ্গী করে ৭২ বছর আগে তিনি পাড়ি জমান দৃষ্টিসীমানার ওপারে। আজ সেই দিন, বাইশে শ্রাবণ।

কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ীর যে শ্যামল-সুন্দর আঙ্গিনায় জন্মেছিলেন তিনি, কেটেছে শৈশববেলা। প্রকৃতিকে কাঁদিয়ে তার এই মহাপ্রস্থানে শোকার্ত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন_ 'দুপুরের রবি পড়িয়াছে ঢলে অস্তপারের কোলে/বাংলার কবি শ্যাম বাংলার হৃদয়ের ছবি তুমি চলে যাবে বলে/ শ্রাবণের মেঘ ছুটে এলো দলে দলে।'

আশি বছরের জীবনসাধনায় তিনি তার জন্ম ও মৃত্যুকে একাকার করে তুলেছিলেন অজস্র অমরতার শাশ্বতবার্তায়। তাই জন্মদিন নিয়ে লিখেছিলেন_ 'ওই মহামানব আসে/দিকে দিকে রোমাঞ্চ/মর্ত্যধূলি ঘাসে ঘাসে'। সেই তিনি আবার জীবনসায়াহ্নে লিখেছিলেন 'মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক আমি তোমাদেরই লোক'। পঙ্ক্তিমালায় তিনি আরো বলেন, 'আমার এ জন্মদিনে মাঝে আমি হারা/আমি চাহি বন্ধুজন যারা/ তাহাদের হাতের পরশে/মর্ত্যরে অন্তিমপ্রীতি রসে/নিয়ে যাবো জীবনের চরম প্রসাদ/নিয়ে যাবো মানুষের শেষ আশীর্বাদ...'। মানুষের শেষ আশীর্বাদ নিয়ে বাঙালির অনুভূতির এই কবি আজো উজ্জ্বল ধ্রুবতারার মতো।

রবীন্দ্রনাথের তিরোধানের মধ্য দিয়ে বাংলাভাষা ও সাহিত্যের সবচেয়ে প্রদীপ্ত নক্ষত্রটি খসে পড়ে। বিধাতা-পুরুষ এ যাবৎকাল যত বাঙালি সৃষ্টি করেছেন তাদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথকে অনায়াসেই শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন করা চলে। কবিতা-গান-ছোটগল্প-উপন্যাসসহ সাহিত্যের সব শাখাতেই তিনি অবাধে বিচরণ করেছেন। এছাড়াও চিত্রকলা ও বিভিন্ন দেশ হিতৈষণামূলক কর্মকা-েও যুক্ত ছিলেন তিনি। বাংলাভাষা ও সাহিত্যকে তিনি মহিমান্বিত করেছেন, গৌরবের শীর্ষদেশে পেঁৗছে দিয়েছেন। বলতে গেলে তার একক প্রচেষ্টায় বাংলা সাহিত্য বিশ্বসাহিত্য সভায় মূল্যবান আসন লাভ করতে পেরেছিল। মানুষের হৃদয়ের আকুতিতে, প্রকৃতির বৈচিত্র্যময়তায় আর জীবন-নদীর বাঁকে বাঁকে তিনি এক জীবন-দেবতার অদৃশ্য আনাগোনা লক্ষ্য করে গেছেন। তাই জীবন-মৃত্যুকে তিনি অলক্ষ্যে কর্মরত সেই জীবন-দেবতার বিপুল রহস্যময় বিষয় বলে মনে করেন। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় 'সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর/ আমার মাঝে তোমার প্রকাশ তাই এত মধুর।' রবীন্দ্র চেতনায় এই দার্শনিক ভাব-ভাবনা বাঙালি চিত্তে সঞ্চার করেছে ঈশ্বরে-মানুষে মহামিলনের আকুতি।

জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের চৌদ্দ ভাইবোনের মধ্যে কনিষ্ঠতম ছিলেন কবি। অতি উন্নত সাংস্কৃতিক আবহে এবং জীবনের গভীরতম বোধের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছিলেন তিনি। বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয় শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেননি; গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। মাত্র এগারো বছর বয়সে তিনি মৃত্যু নিয়ে রচনা করেন অমর কাব্য। ভানুসিংহ ঠাকুর ছদ্মনামে প্রকাশিত হয় 'মরণেরে তুঁহু মম শ্যাম সমান।...তাপ বিমোচন করুণ কোর তব/ মৃত্যু অমৃত করে দান/ তুঁহু মম শ্যাম সমান...' কবিতাটি। অথচ সেই রবীন্দ্রনাথই আবার গভীর জীবন তৃষ্ণায় লিখেছেন_ 'মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে,/ মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।/ এই সূর্য করে এই পুষ্পিত কাননে/ জীবন্ত হৃদয় মাঝে যদি স্থান পাই।'

আট দশকের জীবনে কবিগুরু জীবন আর সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই, যেথায় নিজের পদধূলি দেননি জমিবাড়ির চর্তুদশ এই সন্তান। বাঙালিকে, বিশ্ববাসীকে আজো পথ খুঁজতে হয় তার কর্মের স্ফুলিঙ্গ ধরে। তাই তার মৃত্যুদিনে যতই ব্যথা থাক, জেগে ওঠে পুষ্পধ্বনি। তার ভাষায়, 'মৃত্যু হতে জাগো পুষ্পধনু/হে অতনু, বীরের তনুতে লহো তনু।' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে অসীম, অতলসম সৃষ্টিসম্ভার রেখে গেছেন, মানবজীবনের জন্য তা পরম পাথেয়। আমরা সে অসীমে মনপ্রাণ নিয়ে যেখানেই যাই, 'কোথাও দুঃখ, কোথাও মৃত্যু, কোথা বিচ্ছেদ নাই।'
তাই আমাদের প্রতিদিনের চিন্তায় চেতনায় ভাবনায় রবীন্দ্রনাথ সদা দোদীপ্যমান। রবীন্দ্রনাথ ১৯১৩ সালে প্রথম বাঙালি এবং এশীয় হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি...' গানটি তার লেখা। ভারতের জাতীয় সঙ্গীতও তারই লেখা।

রবীন্দ্রনাথ আসলে জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যে তফাৎ দেখেছেন খুব সামান্যই। সৃষ্টিই যে এই নশ্বর জীবনকে অবিনশ্বরতা দেয়, সে কথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন বলেই তিনি অমন দৃঢ়তায় বলতে পেরেছেন_ 'তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি/ সকল খেলায় করবে খেলা এই আমি... আহা,/ নতুন নামে ডাকবে মোরে, বাঁধবে নতুন বাহু-ডোরে,/ আসব যাব চিরদিনের সেই আমি।'
২২ শ্রাবণ উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করবে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে পবিত্র রমজান মাসের কারণে

অনুষ্ঠানমালাগুলো কিছুটা অনাড়ম্বর হবে। তবে ঈদের শেষে নানা আয়োজনে এই দিনটি পালিত করবে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

(ওএস/এস/আগস্ট০৬,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test