E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

সমর চক্রবর্তীর কবিতা

২০১৬ আগস্ট ১৩ ১৩:৪৬:১৪
সমর চক্রবর্তীর কবিতা






 

পারদ জোছনার অন্ধকার

নগরীর চাঁদ স্থির চোখে হারিয়ে যাচ্ছে সময়ের গভীর অন্ধকারে ।
শহরময় এ্যাতো আলোর কুহেলিকা যে মানুষের কোনো ছায়াই নেই !

সমুদ্রে অলৌকিক এক সেতু গড়তে বুঝতে পারি ,যে র্সূয আলো ছড়ায়
তার শরীরে কোনো অন্ধকার থাকে না ।
আবহাওয়া বদলে গেলে বদলে যায় আকাশের রঙ
চেনা দৃশ্য ভেঙে গ্যালে পড়ে থাকে কিছু মুখোশের ছবি !

মানুষের দুঃখ ঝরে যাওয়ার এ্যামন কোনো নদী নেই যে সমুদ্রে মেশে !
মানুষের এ্যামন কেনো মানুষও নেই, যার কাছে হৃদয় খুলে ফিরে পাওয়া যায় !

তবু কোথাও যেতে হবে বলেই বেরিয়ে পড়ে মানুষ
ভালোবাসতে হবে বলেই ভালোবাসে ,

আসলেই মানুষের কোনো কাজ নেই, ঝগড়া-বিবাদ অভিমানে
হাসতে হাসতে কাঁদতে কাঁদতে জীবন পার করা আর কী !!



তোমার অখণ্ড নীরবতা

এক আকাশ নীলের মতো তোমার অখণ্ড নীরবতা
ভাসতে ভাসতে বোশেখের মেঘ ।যেন
সূর্য’র আড়ালে ঘুমিয়ে আছে নির্বাক একটি হরিণ।
তার চিত্রল শরীর থেকে বিদ্যুত ঝিলিক
ছড়িয়ে পড়ে সবুজের অন্ধকার গুহায় ,

বিস্তীর্ণ আলোছায়ার বিস্ময়কর রঙের খেলায় নদীরা সমুদ্রের দিকে যেতে যেতে
উদাস-বাতাসে বারবার স্রোত বদলায় !

ঝর্ণার পাশে অগ্নিগিরী রেখে হাসে পাহাড়ের চোখ। মানুষেরা কাঁদে-
জীবন একাকী প্রার্থনায় নির্বিকার নিলীমাময় এক স্তব্ধতা



শীত চলে যাচ্ছে

শীত চলে যাচ্ছে ।ঠোঁট থেকে চুমুর ঠোঁট সরে যাবার মতো চলে যাচ্ছে শীত ।
পরিযায়ীর ঝরা পালক হাতে শীতল এক স্তব্ধতার ভেতর আমি বসে থাকি ।
ভ্রামণিক ঋতুর হৃদয় নিয়ে ঘুরতে থাকি সূর্য্যরে চারিপাশ,
তারপর তোর নিঃশ্বাসের কাছে বসে আছি ভেবে
চায়ের কাপে চুমুক দেই,দেখি
বুকের ভেতর গুচ্ছ গুচ্ছ ফুটে উঠেছে তৃষ্ণা ,যেন অসংখ্য রক্ত পলাশের ডাল !

শীত চলে যাচ্ছে ।কুয়াশার পর্দা ছিড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে উদোম বুকের শ্যামল নারী
শরিষা ফুলের ক্ষেতে তোর মুখ মনে পড়ে
দুঃখ হারিয়ে যাবার আগে
পানশালায় দুলে উঠি আমি শেষবার, যেন নতুন ঘড়ির পেন্ডুলাম !
বসন্ত এসে গ্যাছে অথচ -অনেক আলোকবর্ষ দুরে আমার বসন্ত গ্রাম




বিছানায় পড়ে আছে শুধু তোর ছায়া

আলিঙ্গণের ক্লান্তির পর হৃদয়ে হিম ঝরার মতো সারা শরীরে জেঁকে বসেছে শীত ।
আমি তোর হৃদয়ের বহুবর্ণ রুমে ছেঁড়া একটা মাদুর পেতে শুয়ে আছি সোনা,
অথচ বাহুর মধ্যে তুই নেই ,কুয়াশায় ঢেকে আছে বাড়ি -ঘর -নগর-অফিস-চোখের
পাশেই উষ্ণতার চাদর আগলে জ্বলে আছে আগুন ,আমার বুকের ভেতর অখণ্ড
শীত,আমি কাঁপছি, শুন্যতাকে ভেঙে আরেক নৈঃশব্দ্য আলিঙ্গনে আমি কাঁপছি ..

আকাশে রোদ্দুর নেই,বিছানায় পড়ে আছে শুধু তোর ছায়া





জলডানার মাছ

বড়শীতে নিজেকে গেঁথে তোমার অনিচ্ছার দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছি বারবার
তারপর ডুবে থাকি জলে ।ও মাছ আমাকে গেলো
ছিপ হাতে বসে নেই কেউ ঘাটে !
জলে ও স্থলে ডুবে থাকার সময় ফুরালো !

জলের প্রতিবিম্বে জলে দ্যাখো স্বচ্ছ আকাশ দ্যাখা যায়
আকাশের কোনো প্রতিবিম্ব নেই বলেই সূর্যকে ঢেকে রাখে পৃথিবীর পিঠ
মানুষ তার ছায়া নিয়ে ছোটে ,দিন-রাত্রির আয়নায়
কেউ কেউ কদাচিৎ নিজেকে সামান্য চেনে !

আর সব টুকুই অচেনা --পৃথিবীর রঙ মাখে সময়ের চোখ ;
আকাশে শাদা মেঘের প্রচ্ছদে বহুবর্ণ স্বপ্নের ছোঁপ চেনেনা ঘাতক !


আমি এক নির্দয় ছুরিকে ভালোবেসেছি

আমি এক নির্দয় ছুরিকে ভালোবেসেছি ।খুন হবো জেনেও
সহাস্যে চুম্বন করেছি আগুনের মরুভূমি । সব কিছু মেনেও
আমি কেবল তার টেবিলের আপেল হয়ে পড়ে থাকি !

প্রতিদিন নৈশভোজে নির্দয় ছুরি,শত খণ্ড করে আমাকে !
একটু একটু করে দাঁতের সাহায্যে ঠোঁট থেকে
তুলে নেয় মুখে , আমি সবিস্ময়ে দেখি,অবয়বহীন

একটি আকাশ অসংখ্য তারার শরীর নিয়ে জ্বলছে
অন্ধকারের উজ্জ্বল হৃদয়ে; ছুরিটি আমি গোপনে বুকে গেঁথে রাখি !

ডানায় ছায়া ঝুলিয়ে

ডানায় ছায়া ঝুলিয়ে নিলীমার গহ্বরে ডুবে যাচ্ছে চাঁদ
স্বপ্নসঙ্গমে জেগে আছি পূর্ণ একটি আলোর গোলোকে
আয়নার আড়ালে ক্রমাগত ভেঙে যাচ্ছে আলো
অন্ধকারেই টের পাই, স্বমেহনে ঝরে পড়ছে সকল আনন্দ !

সারারাত বুকের ভেতর ছুরি চলে, ঝরে নাতো রক্ত
হরিৎ অরণ্যে এসে বার বার পাখিগুলো ফিরে যায় !

কিছু স্বপ্ন লুকিয়ে রাখি। কিছু কষ্ট থাক ডুবে, অতল থেকে
আর তুলবো না তাদের। তুমিও ডুবে যাও নির্বাক চাঁদ -
উড়ে যাওয়া পাখির চোখ আমি আর দেখবো না ফিরে
ভুলে যাবো একদিন,এই উদ্যান জন্মেছিলো তোমার নিঃশ্বাস আর জলের সঙ্গমে




শুধু ঊষ্ণতার জন্য

যৌথ নিঃশ্বাসের রকমারি তৃষ্ণা চাদরে জড়িয়ে
কত পথ হেঁটে গেছি আমরা কুয়াশাময় ভোরের শীতের সড়কে ।

সেই চেনা ভোরগুলো ঘিরে রয়েছে আজ অচেনা অসংখ্য অজগর !
ফুলের বাগানে তাকাই বাগান উজাড় করে কারা যেন ফুলগুলোকে পিষ্ট করে গ্যাছে ।

কখনো কখনো মনের জানালা খুলে দেখি ,
কামনার পর্দা সরিয়ে বেরিয়ে আসছে সূর্য,
শরীরের ভাঁজ খুলে উদোম বুকে দাঁড়িয়ে আছে তৃষ্ণার্তপাহাড় -আর
ভাটি পাড়ি দিতে বরফগলানদীর জলে ভেসে যাচ্ছে একদল পাহাড়ী লালপিঁপড়ে !

কামারের হাঁপরের মতো পাঁজর ছিন্ন করে বেরিয়ে যায় তপ্তবাতাস
ইচ্ছে হলেও আজ আর হাঁটু মুড়ে বসতে পারি না তোমার নিঃশ্বাসের কাছে !



ছোট ছোট দুঃখবোধগুলো

আমাদের ছোট ছোট দুঃখবোধগুলো বিবসনা নগর -শিশুর মতো
বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে কৃষ্ণপক্ষের রাতের পেয়ালায় ;

নিখোঁজ সোনালি চাঁদ পুড়ে যায় জ্যোৎস্নায় , নিষাদ-বিষাদে
নৈরাশ্যের দীঘল শুন্যতা গিলে খায় ঝাঁক ঝাঁক অন্ধকারের অবসাদ !

নগর ভবনে পেণ্ডুলাম দোলে,ঘড়ির বৃত্তে স্থির হয়ে থাকে সময়
নির্ঘুম নগরী জেগে থাকে নতুন এক সূর্য্যরে অপেক্ষায়

রৌদ্রের রঙ গাঢ় হতে হতে ফিকে হয়ে যায়

আমরা পেছন ফিরি ,অতীতের পোশাকগুলো পুনরায় সেলাই করি,
সম্পর্কের মতো বোতাম এঁটে পরে নেই নতুন আশাক এবং
রাত্রির নিরবতায় নেমে আসা রহস্যময় উল্কায় খুঁজতে থাকি
আমাদের হারিয়ে যাওয়া সেই নিজস্ব ছায়াগুলোকে
যারা শেঁকড় গুচ্ছের মতো ডুবে আছে রহস্যের গভীরে - নিঃসঙ্গ অতীতে...



জামরুল পাতা

কিছুই না ,ঘর সংসার সব যেন কানামাছি খেলা
সারাদিন হাতে ঘড়ি নিয়ে ঘুরি ,ছুঁতে পারিনা সময়।

বন্ধ চোখে হাতড়াই এদিক ওদিক
কিছু নেই -নেই ধ্বনি চঞ্চল হৃদয় বৃত্ত করে নাচে ,

চোখ খুলে দেখি প্রতিবিম্বগুলো
নিজেদের আঁকবার জন্য প্রস্তুত করছে ক্যানভাস !

শূন্যতার মধ্যে নিজেকে আমি আবিষ্কার করি
ষড়ঋতুর বসন্তে আহা আমিও একদিন ঝরা জামরুল পাতা !

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test