E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়াণ দিবস

২০১৬ আগস্ট ২৭ ১০:২২:৩২
আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়াণ দিবস

নিউজ ডেস্ক : তিনি লিখেছেন, ‘গাহি সাম্যের গান—/মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান...।’ মানবতার জয়গানে, দ্রোহে ও প্রেমে, মানুষের মনে তিনি জাগিয়েছেন অদম্য আশার বাণী। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম। আমাদের জাতীয় কবি।

আজ শনিবার তাঁর ৪০তম প্রয়াণবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালের এই দিনে (১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র) ঢাকায় তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) ৭৭ বছর বয়সে তিনি মারা যান। জাতি আজ অপরিমেয় শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করবে তাঁকে।

রবীন্দ্রোত্তর সাহিত্যে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি তাঁর কবিতায়, গানে, উপন্যাসে পরাধীন ভারতে বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলায় সাম্প্রদায়িকতা, সামন্তবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে আজীবন সোচ্চার ছিলেন। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর গান ও কবিতা সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছে মুক্তিকামী মানুষকে।

দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হয়েও কবি কখনো আপস করেননি। মাথা নত করেননি লোভ-লালসা, খ্যাতি, অর্থ, বিত্তবৈভবের কাছে। আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য। মানবতার মুক্তির পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধেও ছিলেন সোচ্চার। মুক্তবুদ্ধি ও চিন্তার পক্ষে কলম ধরেছেন নির্ভীক চিত্তে। তাঁর রচিত ‘চল্ চল্ চল্’ গানটি আমাদের রণসংগীত।

ছোটগল্প, উপন্যাস, গান, নাটক লিখলেও মূলত কবি হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত। আজীবন বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গি আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার উচ্চকণ্ঠের কারণে তিনি ভূষিত হন ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে—অগ্নিবীণা, সঞ্চিতা, চক্রবাক, প্রলয় শিখা, মরু ভাস্কর, দোলনচাঁপা, বিষের বাঁশি, ভাঙ্গার গান, সাম্যবাদী, পুবের হাওয়া, ব্যথার দান, রিক্তের বেদন, বাঁধনহারা, মৃত্যুক্ষুধা, কুহেলিকা ইত্যাদি।

কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ মে) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে। বাবা কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। কবির তারুণ্যের বেশ কিছু সময় কেটেছে ময়মনসিংহের ত্রিশালে। ১৯৭২ সালের ২৪ মে স্বাধীন বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। বঙ্গবন্ধু তাঁকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন। তাঁকে দেওয়া হয় জাতীয় কবির মর্যাদা। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাজী নজরুলকে ডিলিট উপাধিতে ভূষিত করে। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁকে দেওয়া হয় একুশে পদক। কবির জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে তৎকালীন পিজি হাসপাতালে।

কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানী ঢাকা, কবির স্মৃতিধন্য ময়মনসিংহের ত্রিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিত হবে নানা কর্মসূচি। আজ ভোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে কবির সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানাবে তাঁর ভক্ত ও অনুরাগীরা।

ঢাকায় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দল নানা কর্মসূচি পালন করবে। এর মধ্যে রয়েছে সকালে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়।

আগামীকাল রবিবার বিকেল ৪টায় বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে নজরুলবিষয়ক একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। একক বক্তৃতা দেবেন বিশিষ্ট গবেষক-প্রাবন্ধিক, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল আহসান চৌধুরী। প্রখ্যাত নজরুল গবেষক ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন।

(ওএস/এএস/আগস্ট ২৭, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test