E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নক্ষত্রের আড়াল : প্রকৃতি ভালোবাসার শিক্ষক

২০১৬ অক্টোবর ২৬ ১০:০৩:৪৩
নক্ষত্রের আড়াল : প্রকৃতি ভালোবাসার শিক্ষক

সোহরাব পাশা :


কবি সুমন রায়হানের প্রথম কবিতার বই ‘হৃদয়ে যে গান আসে, প্রকাশকাল (২০১২) এক বছরের ব্যবধানে বেরোয় যেতে যেতে সমুদ্র। নক্ষত্রের আড়াল (২০১৬) বেরিয়েছে গত একুশের বই মেলায়।  কবিতার ব্যাখ্যা আসলে কবিতার মধ্য দিয়েই প্রাণ পায়। ফুলের গঠন সৌকর্য বা উপরতল যদিও বিশদভাবে বর্ণনা করা যায়; ভেতরের ঘ্রাণ টুকু বাইরে আনা যায় না। সে কেবলই ভাবনা আর অনুভবের।

কবি সুমন রায়হানের কবিতায় যেমন প্রাণ আছে, তেমনি ঘ্রাণও আছে। খ্যাতিমান কবিদের মতোই এই তরুণ কবির কবিতার অনুষঙ্গ হয়েছে, প্রেম, প্রকৃতি, দেশ এবং সময়। বিক্ষত সময়ের টানাপোড়নে কবি হৃদয় হতাশায় ব্যথিত হলেও আশাবাদী হয়ে ওঠেছেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। ‘না’ শব্দটি আর না হোক বলা/না থামুক অনন্ত যাত্রার এই পথ চলা/ অথবা একই কবিতার শেষ প্যারায় লিখেছেন। ‘দুটি চড়–ইয়ের মধুর মুহূর্ত/শেষ পর্যন্ত অন্ধকার থেকে/আলোর দিকে মুখ ফেরাবে’/(অন্ধকার থেকে আলোর দিকে)।

প্রিয়জনের সান্নিধ্য কামনায় ব্যাকুল হয়ে ওঠেছে কবির মন। দীর্ঘ না দেখার বেদনায় মন বিনীত হয়েছে মানসীর প্রতি। তার পায়ের শব্দ শোনার জন্যে, তাকে দেখার জন্যে উন্মুখ হয়েছে কবি হৃদয়- যার প্রকাশ ঘটেছে এইভাবে- ‘বেশ কতোদিন আসোনি/ এই সম্ভাবনাময় স্বপ্নের চিলেকোঠায়/কতো নিশি বয়ে গেলো শব্দহীন, কাব্যহীন’/(যদি তুমি আসো)।

প্রেম মূলত নিভৃতির, আলোর বাহিরে থাকে শব্দহীন। গোপনে আড়ালে হয় অভিসার। বিরহ যাতনায় বিভোর হয়ে থাকে। জরুরি কাজ ফেলে অকারণে মন ভ্রমন করে। প্রতিদিনের চেনা গলি অচেনা মনে হয়। ইচ্ছে করে দূরে কোথাও হারিয়ে যেতে, ভুল ষ্টেশনে নেমে পড়তে- কবি সুমন রায়হানের কবিতার পঙ্ক্তিতে এমন চিত্রই ফুটে ওঠেছে; ‘আজ আমি লোকাল বাসে/মতিঝিল থেকে বাংলা মোটরের যাত্রী/কেন ফার্মগেট এসে নামলাম/সে কথা আজ আমি এখানে বলব না’/ (জবানবন্দি)।

প্রকৃতি ভালোবাসার শিক্ষক। প্রকৃতির প্রশ্রয়ে তার ছায়াতলে গিয়ে যাপিত জীবনের বেদনা ভুলে যাই আমরা। আকাক্সক্ষার অপ্রাপ্তি আর অপূর্ণতার কষ্ট ভুলে যাই প্রকৃতির কাছে এসেই। কবি সুমন রায়হানও বারবার ফিরে এসেছেন, এই নিসর্গ, প্রকৃতির কাছে। প্রকৃতি তাকে আনন্দের গান শোনায়। কখনো কখনো নারী ও প্রকৃতি মিলেমিশে এক হয়ে যায়। ওই একই কবিতার শেষ স্তবকে তার এরকমই উচ্চারণ- ‘হে নদী, নারী ও নিসর্গ তোমরা আমাকে ক্ষমা করো/ পথ ভুল করে বারবার তোমাদের কাছে ফিরে আসার দ্বায়ভার/আমি আমার নিজের কাঁধে তুলে নিচ্ছি’/ (জবানবন্দি)

অসময়, অনৈতিক, অসুন্দরের বিরুদ্ধে কবির সাহসী উচ্চারণ শুনি তার ‘শান্তির জন্যে’ কবিতায় ‘আঙ্গুলে আগুন খেলা করে/ হে আঙুল তুমি আরেকবার জ্বলে ওঠো/তোলো তোমার বজ্রধ্বনি/’ চারপাশে দহন, ক্ষরণ ও ভাঙনের পরও কবি আশাবাদী। একই কবিতার শেষ স্তবকের আগে তিনি লিখেছেন- ৫২-তে বলেছি মাতৃভাষা দাও,/ তুমি মাতৃভাষা দিয়েছো/৭১-এ বলেছি স্বাধীনতা দাও/তুমি স্বাধীনতা দিয়েছো। শোনো, আবার বলছি ১৬ কোটি বাঙালির সপক্ষে/আমাদের শান্তি চাই/ জানি তুমি তাও ফিরিয়ে দেবে/ (শান্তির জন্যে)

কবি সুমন রায়হান যখন বলেন- ‘তোমার দুঃখগুলো এমন কেন?/ওদের এতো বলি অন্য পথে হাঁটো/ তবুও ওরা এপথ পেরোয়.../(তোমার স্বরচিত দুঃখগুলো) তখন ওই পঙ্ক্তিগুলো অনেকেরই হয়ে যায়। আর এখানেই তার সার্থকতা। কবি সুমন রায়হান বারবার তার নিজেকে অতিক্রম করার চেষ্টা করেছেন। বিষয় ভাবনা বৃত্তাবদ্ধ হয়ে থাকেনি। বক্তব্যে দুর্বোধ্যতার জটিল কুয়াশা নেই। ঘোর-প্যাচের মুখোশ পরে পাঠককে বিভ্রান্ত করেননি। উপমা উৎপ্রেক্ষায়ও সরল পথেই হেঁটেছেন। গোলকধাঁধাঁয় ফেলেননি পাঠককে। রাজিব রায়ের দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ গ্রন্থটির সৌকর্য বৃদ্ধি করেছে। ‘নক্ষত্রের আড়াল’ কবিতার বইটি পাঠক সমাদৃত হবে বলে আশা করছি। গ্রন্থের নাম : নক্ষত্রের আড়াল, লেখক : সুমন রায়হান, মূল্য : ১২৫.০০ টাকা, প্রচ্ছদ : রাজিব রায়, প্রকাশক : জামাল উদ্দিন আহমেদ, দি রয়েল পাবলিশার্স, ঢাকা।

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test