E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাহফুজ মুজাহিদের কবিতা

২০১৬ নভেম্বর ০৯ ১৪:৩১:৫৭
মাহফুজ মুজাহিদের কবিতা






 

আধেক স্বপ্ন বাকিটা কল্পনা

মধ্যবয়সী চাঁদ চঞ্চল কিশোরীর মতোন; বেহায়া-নির্লজ্জ সজ্জ্বল
উজ্জল দ্যুতিতে পূর্ণ গর্ভবতী সুদর্শীনীর মতোন মনে হয় কখনো
সদা ভ্রম অসুখে পুড়ে খায় একাকীত্ব নিঃস্ব সময়- ক্ষণে ক্ষণে
মধ্যবয়সী বউ যেনো এক বালিকাসম কিশোরী চঞ্চলা হরিণী
মনকে বন ভেবে ঘুরে পোড়ায় ঊনত্রিশ-বসন্ত জমানো সুখ আস্তিন
তবে কি এর নাম ঘোর...! অথবা ভালোবাসা-মোহে অন্ধ সময়...

স্বপ্নরা জেগে ওঠে আজানের মোহনীয়া সূরে কল্পলোকের দেশ
কখোন দ্বি-প্রহরে অজান্তে নেমে আসে ভোর আলোক সুবাস ভরে
একি শিহরণ...! মধ্যবয়সী চাঁদের ছায়া দিয়ে গেলো অনন্ত নিরুদ্দেশ
অথচ এখনো পানপাত্রে অবশিষ্ট আছে সরাবের মতোন মাতাল অন্ধকার
চোখজুড়ে নেশার ঘোর- বুক জুড়ে তৃষ্ণার আবেগ- দূরত্ব ব্যঞ্জন যন্ত্রণা
প্রার্থণায় কেবল যাপিত বিষ্ময় ক্ষয়ে ক্ষয়ে পড়ে অশ্রুময় সময়-তিক্ততার
কতোটা দূরে আছো...? কতোটা পথ পেরুলে হেমলকসম অসহ্য মৃত্যুর ঠিকানা...?


নৃত্য-মুদ্রা : বিপরীত সমান্তরাল

জল পিপাসার্ত কামারশালায় অগ্নি-স্ফুলিঙ্গে ধেয়ে আসে ক্ষুরধার ইচ্ছেগুলো। বৃষ্টি কামনায় লৌহ শরীর ভেঙ্গে ভেঙ্গে যায় নিয়মের বন্দিশালায়। এভাবেই রোজকার দিনলিপির পবিত্র হরফ মধ্যরাতের বেহালায় তোলে সুর- নিমগ্ন ঘুমের ভেতর প্রজ্জ্বলিত হয় কামারশালার অগ্নি-ম-প। ম্লান সূর্যকে চাঁদের রূপান্তরে দৃশ্যমান করে রাখে পৃথিবীর চক্রব্যুহ। নিশিথ অন্ধকারে গড়ে ওঠে ভাঙ্গনের স্রোত। কিম্ভুত ভাবনার অথৈ নদীতে মুদ্রাক্ষরের আওয়াজ ভেসে আসে- দূরতম সন্দিহান চোখে তবুও সম্ভাবনার সূর্য ওঠে রোজ।

সুখ বঞ্চিত কোকিলারও আকুতি ছিলো বেঁচে থাকার ঘরকুটো ঘর। ঘুমচোখে স্বপ্ন আঁকে বেহায়া অন্তরÑ প্রবঞ্চনা, মিথ্যে অজুহাতে বেঁচে থাকতে শেখায়। তবে কি সেও মিথ্যুক...! কবে থেকে মিথ্যে বলতে শিখেছে গোপন পাঠশালায়...? মঞ্চ-নদীতে সাঁতার শিখে তবে কি সেও অভিনেতা হয়ে আছে জীবনের...? হে ঈশ্বর শক্তি দাও, মুক্তি দাও, বন্ধ করে দাও প্রজন্ম-পাঠ- পৃথিবী একা, তার কোনো সঙ্গী থাকতে নেই চন্দ্রের মতোন...

চৈত্র সংক্রান্তি পরে বিধ্বস্ত কোকিলের পালক জুড়ে ব্যবচ্ছেদের ক্ষত- কোকিলা ডাকে নাই তারে কোনো দিন। বোঝে নাই ব্যাথা অন্তরের ভিতর কান্দে দিনে-রাইতে; হু হু কইর‌্যা যেমুন উত্তইর‌্যা বাতাস বইতে থাকে কালবৈশাখীর কালে। রাইতের আন্ধারে কেন ঘুম আসেনা ? চোখের পলক ফালায় না মাটিতে ? চান্দের দিকে চাইয়্যা বেহায়া কোকিল কি খোঁজে ? মধ্য রাইত বইয়া যায়, চান্দের বাড়িত থিক্যা কোকিল আহে না; টুপ কইর‌্যা তারে দেহেও না পূর্ণিমার রাইতে। এমনি কইর‌্যা বুঝি ফুরাইবো দিন...! একেকটা রাইত যায় দিন আহে; দিন যায় রাইত আহে; খাড়ায়-ঘুমায়-বহে আবার কি জানি কয় মনে মনে... কোকিলা বোঝে না মধ্যরাইতে কোকিলও তারে ডাহে... আয় ঘুম আয়, আয় ঘুম আয়...

বিকেলের ক্লান্ত সূর্য্য অত্যাসন্ন ঘুমের বিভোরে আকুল। অপেক্ষার প্রহর ভেঙ্গে কোকিলার ডাকে সম্ভিত ফিরে আসে কামারশালার প্রজ্জ্বলিত লৌহবুকে। এবার বাঁকা চাঁদের হাসি ফুটবে ফসলের মাঠে। মহানন্দের গীত গাইতে থাকে দক্ষিণের সাত সমুদ্রের জল। কল-কল ছল-ছল শন-শন ঝন-ঝন বদ্ধ উন্মাদের দল।

অতঃপর কামারশালার বদ্ধ অগ্নি-ম-পে জল ঢেলে দিলে দিগুন জ্বলে উঠে শিখা। লৌহবুকের স্পর্শে মাঠে মাঠে ছড়ানো সোনালী সকাল ঘরে ফিরে আসে। আগুনের মোহে মেতে ওঠে জল কলরব...

জল-বেশ্যা


তোমরা কি প্রতিরাতে নিশুতি জলের গান শুনতে পাও
ভোর অবদি কুয়াশার চাঁদর জড়িয়ে প্রথম সূর্যোদয় দেখে
তোমরাও বুঝি আড়মোরা ভেঙে পবিত্র হতে থাকো সূর্য ঘুমে
আদিমত্তাসুখে তুমি-তোমরাও কি পুরুষের ঘামে খোঁজো সুখ
জলের মুখ- বেশ্যার বেশে নৃত্য শেখাও বেশ; প্রমত্তার বুকে

চন্দ্র কিংবা আঁধারের আলোয় সুসম্পন্ন ক্রোধে কে ডাকে রোজ
খোপায় জড়ানো শেফালী-গন্ধে নেচে উঠে রাত-বিদীর্ণ চিৎকার
মিহি-অস্ফুট বুকের ভেতর অন্ধ কানের ঢের দুরত্বে সানাইয়ের মতোন
অভিমানের আক্রোশে স্থির জলে ঢেউ খেলে পুরুষের চওড়া আস্তিন
ক্রমশ অন্ধকারে শান্ত-নিস্তব্ধ জলে ডুব-সাঁতারে ভেসে যায় দীর্ঘশ্বাস

এই যে- এইহানে, আন্ধার রাইতে চান্দের নাহাল নাইমা আহে রাজকুমার
বুদ্ধু রাজকুমার ঘোড়ায় আহে না; কত্তো শখ একডা ঘোড়া দেহুম টগবগ টগবগ
ওমা...! ও দেহি বুকের মইদ্যে খই ফোটে, কেমুন চিরিক মাইর‌্যা ওডে ডর
রাজকুমার আহে-যায়; বুকের মইদ্যে পানা ফুলের লাহান লাল-লাল স্বপন জমে
রাজকুমারের লগে যাইতাছি অচিন সবুজ গায়; লাল-শাড়ি পিন্দনে আলতা পায়
তারপর- জলের মইদ্যে তুফান আহে; আজানে বেবাক স্বপন হারাইয়া যায়
মাসির ঠাকুর-ঘন্টার মতোন বুকের মইদ্যে ডুগডুগি বাজতে থাহে ঢিপ ঢিপ ঢিপ
আবারও আহে আবারও হারায়... আবারও আহে আবারও হারায়...

জলের ¯স্নানে কতো ফোঁটা জলের দাম মিটেছে তোমাদের ? চোখের লোনায়
ক্ষয়ের স্বপ্নে কতোটুকু আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে ভাসমান বৈতরনীর কৃষ্ণকাঠ
আমি বুঝে গেছি- সেদিনের সে বিশ্বাসী চোখে দৃশ্যমান যন্ত্রণার আবেগ
তোমাদের ভাঙা ভাঙা কণ্ঠের স্পষ্ট উচ্চারণ- জল-বেশ্যাদের কোনো স্বপ্ন থাকতে নেই...

দুরন্ত শৈশব কিংবা একটি স্বপ্ন


আমিও ঘুমোবো একদিন বরেন্দ্র কিংবা শাল বিস্তৃত মাঠে
স্নানে যাবো পদ্মা অথবা যমুনায়- যাযাবর কোনো এক ঘাটে
সেদিন জারুলগন্ধ রাতে মৌবনে গুঞ্জন রটবে না জানি আজ
অনেকের শত ব্যস্ততা; মত্ত বিহ্বল গৌরবে ধোঁয়াশা বর্ণনায়

একদিন আমি ঘুমিয়েছি বরেন্দ্র ভূমির পবিত্র কর্ষণে
একদিন আমি ঘুমিয়েছি পদ্মার ঢেউয়ে ভাসমান নায়ে
একদিন আমি হেঁটেছি পথ- পিচঢালা মিহি রাজ গাঁয়ে
একদিন পদ্মার চরে বহুক্রোশ ঘুরে জেনেছি আমিও
এ আমার গৌরব- বাংলা রজনীকান্তের, জীবনানন্দের
নজরুল-রবীন্দ্র নেই ভেদাভেদ, অবসান সকল দ্বন্দ্বের
এ আমার আজন্ম শৈশব; ভাঙা-গড়া যতো অভিমানের

প্রতিদিন যারে ভালোবাসি পলিমাটি, পাহাড়গন্ধ ফুল
প্রতিদিন যারে আপন ভাবি জোনাক জ্বলা অন্ধ পুকুর
প্রতিদিন যারে কর্ষণ করি ঘর্ষণে জ্বালি আগুন এই দেহে
শাল-পাকুড়ের বনের ছায়ায় সেই মোর পিতৃভূমির গড়

ছিন্ন-ভিন্ন যাযাবর এক শৈশবে কখন ছুঁয়েছে করতোয়া
পাথরের বুকে তবুও জমেছিলো বেশ আবেগ কষ্ট ছোঁয়া
হিমালয় চুড়োয় মুক্তো-সকাল অবাক মায়ের চোখে
বাবার ব্যস্ত বর্ণনা শুনে বারে বারে উঠি কেঁপে কেঁপে

কোথায় হারালো আজ সেই সব দিনগুলি
যমুনা আজ কাঁদিছে কেবল আছে তার চরগুলি
শালবনে আজ পরে আছে শুধু মরা-মরা শাল-খুলি
পদ্মায় সেদিন বাঁধ পড়েছে, বরেন্দ্র গিয়েছে ভুলে
স্মৃতি থেকে আজ মুছে ফেলেছে সব মানুষের দল
চোখ থেকে বিদায় নিয়েছে সব মন থেকে দিয়েছে তুলে
তবুও আমি ঘুমোতে চাই বরেন্দ্র কিংবা শাল ঘেঁষা কোলে


(ওএস/এস/নভেম্বর ০৯, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test