E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

স্বপন দেলওয়ারের কবিতাগুচ্ছ

২০১৬ নভেম্বর ১৫ ১২:৪১:৪৭
স্বপন দেলওয়ারের কবিতাগুচ্ছ








 


স্বপন দেলওয়ারের কবিতাগুচ্ছ


পরস্পর

গভীর রাত্রির কবিতায়
সুর আর বাজনার দ্রুততাল
ছন্দের তরঙ্গে তরঙ্গে ভাঙ্গে
ক্ষীণকটি স্বচ্ছতোয়া নদী
আর সবুজ শস্যের মাঠ
রৌদ্রছায়ার অবিরল খেলায়
একটি রূপালী দিনের সাঁকো
নিবিড় আলাপের মদিরায়
এক ফাল্গুণী সন্ধ্যার
এলোমেলো হাওয়ায় ভেসে যাওয়া
রজনীগন্ধার ঘ্রাণে বুনোচুল
আবদ্ধ জামাকাপড়ের ছোঁয়া
আবেশে উচ্ছ্বাসে আবেগে বিভোর
উড়ে যেতে যেতে মেঘের ঠিকানায়
তোমাকে আবার খুঁজে পাই
আত্মসমর্পিতা রমণী স্বাধীন
...............................
জীবনের একান্ত তন্ত্রীতে
বেজে ওঠে আকাঙ্খার সমূহ সঙ্গীত
রোমে রোমে আনন্দ কাঁপন-
প্রসাধন নাটকের মধ্য থেকে
চোখ আর চূড়ার সম্মোহন
ঘাড় কাঁধ শিরদাঁড়া জুড়ে
কানের লতির নীচে চোয়ালে
চিবুকে শতদল চুম্বনের রেশ
সোহাগী রূঢ়তার দীপ্র করতাল
শৈল-শিখর গলা উদ্দাম প্রবাহ
রৌদ্রের উষ্ণতায় উদ্বাহু সাঁতার

সফেদ মেঘের পাশে প্রাণ খোলা
হাসছে ঐ আকাশের নীল-
অতল সমুদ্র সঙ্গীতের খাচ্ছিখাবি
কুশলী আঙুলে প্রকাশিত অনুভব
জটিল চুলের বনপথ বেয়ে
অসূর্যস্পর্শা অন্ধকারের শরীর
সুরভিত প্রশ্বাসে বর্ণিল তৃষ্ণার
ওপিয়াম ঘ্রাণ-কোকেন মিথুন
শ্রাবণ রাতের সেইসব স্মৃতি
অথবা অঘ্রাণে অখণ্ড অবসর
পউষের হিমবাহী রাত্রিতে
পরস্পর-জীবনের প্রখর উত্তাপ


স্বপ্নিল

তুমি আমার একাকীতার
আনন্দ অভিজ্ঞান
আমার ভেতরে শুধু আমি ছাড়া
পৃথিবীর আর কিছু নেই যদি
আকাশের সমস্ত নীল
কাশ্মির সরোবরে অন্তর্লীন
অথবা অলিভের বনানীতে
কচি ঘাস ছায়া-
আল্পসের ধূসর শিখরে
দুপুরের রমনীয় রোদ
হয়তো বা কালের বৃন্দাবন
মন যমুনার তীরে
সুদূর সমুদ্রের দ্বীপে
বিজনতার রূপালী সৈকত উজ্জ্বল
বনঘেরা কাগজের প্রেক্ষাপট পিছে ফেলে
সূর্যাস্নানের দিনে
স্বপ্নিল সমুদ্র যাত্রা...
আমাদের অপরিসীম তৃষ্ণায়
আমূল অবগাহনের আকাঙ্খা
আলিঙ্গনে
আন্দোলনে
মোহময়
পারস্পরিক আত্ম-অনুদান
আবেশিত পল্লব ছুঁয়ে চোখে ভাসমান
গভীর সাগর থেকে ধেয়ে আসা
নীলাভ ঢেউ আর ফেনায়িত লবণের
সফেদ বিস্তার
দিগন্তে চুম্বন মগ্নতায়

আকাশ ও পৃথিবী নিমজ্জমান
গাংচিল মেঘ আর জেলে নৌকার বাদাম
এই সব দৃশ্যকল্প ছাড়া
সুনির্জন শূন্য এক নি®প্রাণ প্রান্তর
শুধু এক ঝাঁক উত্তাল রোদ
উচ্ছল বাতাসের প্রগল্ভ খুনসুটি
মাতাল শৃঙ্গারে মাতামাতি
আমাদের জন্মলাভের আকাঙ্খাকে
ক্রমশ: প্রোথিত
অংকুরিত-
বিকশিত করে
অন্তহীন পিপাসায়

আমরা আকাশ ও সমুদ্র
মাটি ও শেকড় সৈকত প্রমত্ত ঢেউ
রৌদ্র আর বাতাসের সমূহ মিলন প্রয়াস

এইসব মিলে মিশে গোপন ইশারার মতো
শ্যামলিমাময় সঙ্গ-সুখের ছায়া
প্রসারিত হয় জীবনের চারদিকে

আর আমি আগ্রাসী উচ্ছ্বাসে আদিম বর্বর
অথচ কুশলী কুমোরের হাতে
গড়ে চলি অবাধ অন্তরালহীন তোমাকে

কখনো সেই দারুচিনি বনে
প্রশান্ত সাগরের সীমানায়
অকৃত্রিম আদিবাসী মানুষের উন্মুক্ত দ্বীপে
আমরাও প্রাকৃত পথিকৃৎ

হয়তো প্রাচীন মিশরের রহস্য প্রাসাদ
এক সম্রাজ্ঞীর আত্মপীড়ন স্পৃহা
আর সম্মোহিত ক্রীতদাস
কিম্বা সিজার এ্যান্টনী-

যেটুকু সেদিন ছিলো
অনিরুদ্ধ আকাঙ্খার ছায়াচিত্র শুধু
সেইসব গোপনীয় ইচ্ছার
রতি
প্রেম
রোমাঞ্চ
ভয়
সুখ
হাসি
শিহরণ
শীৎকার-
শীৎকারে শীৎকারে ধ্বংসের আঘাতের
উন্মত্ততা
পীড়নের সোহাগের মৃত্যু ও জন্মের
পাপড়ি সরিয়ে ফুলের গভীর বুকে
নিত্য আহরণ
এই রাত্রি দিনের প্রেম
যমুনার তীরে-সুন্দরবনের গভীরে

ফেরা

নিশ্চিন্তপুরের মাঠ-পথঘাট
শালবন দূর বামে রেখে ফেরা
প্রিয়তমা তন্বী রমণীর কৌতুক
গল্প-তামাশায় বিগত দিনের
উচ্ছলতা-ধ্র“পদী দিনের ছবি
ভোরের শিশুর চোখে অনাগত
সময়কালের স্বপ্ন আর
সুবর্ণ দিনের স্মৃতি

বিশ্বাস অনুগামী ধীর পদক্ষেপে
পশ্চাতে বাধ্য প্রজার মতো
(নাকি সে ক্রীতদাস মাথানত!)
নির্জনতার দূরত্বে বাড়ছে আড়াল
যেন এক ছায়াসঙ্গী হেঁটে আসে

কখন টাঙ্গাইল রোডে নেমেছে
ভোরের বাস-মফস্বরের দিকে
সাধারণ মানুষের প্রত্যহিক চলাচল
নাকি ধীরে ধীরে চলে যাওয়া
বিস্মৃতির কুয়াশা বিভ্রম-
লক্ষ্মীপুর রায়পুর পথে চুপিসারে
গরুর গাড়ীর ছায়াছবি শেষরাতে
বিরতির টুংটাং হারিকেন সারি
পউষের হিমে কাঁথামুড়ি দিয়েছিলো

একদিন ফাল্গুনে ব্রহ্মপুত্রের বুক
জ্যোৎস্না বা রৌদ্রের নীচে
দুপুরের নগ্ন চরাচর
আমাদের হৃদয়ের দ্রাক্ষারস
সোনালী শরাবের সুখ সান্নিধ্যময়
জর্জেটে জড়ানো জমিন-
উদ্ধত ইশরায় আবক্ষ স্পন্দন

এই তো নারী তার অরণ্য পর্বত
শ্যামল উপত্যকার টানে
রূপকথার নদী বয়ে চলে
নগরীর প্রেম থেকে বহুদূর-
নিষিদ্ধ যুবকের ছায়া নেই জলে
দূরে কুয়াশায় ক্ষীণতর ধূসরতা
বিশ্বাসের গহনা এসে থামে
রূপালী সাঁকোর থেকে দূরে
মেঘনার শাখা নদী তীরে
কোন এক নিশ্চিন্তপুরের পথ...
কাশফুল-কুয়াশা শিশির ঘাসে ঘাসে
পায়ে পায়ে জড়িয়ে ওদের
নিভৃত রাত্রির উষ্ণতা সাঁতারের
স্মৃতিময় কৌতুক তামাশায়
ঘুমন্ত গ্রামের দিকে ফিরে আসা

পালদের পুকুরে তখন
কুমারী জলের লজ্জা ভেঙ্গে
এইমাত্র একটি সামান্য ঢেউ
বিশ্বাসী মানুষের হাত থেকে
ছুটে যাওয়া কোমল বৃত্তের
জন্ম পুনর্জন্ম... ওপাড়ে তখন
জাল কাঁধে দ্রাবিড়েরা ছুটে যায়
দুলে দুলে দ্রুততায় সম্মুখে
বিশ্বাস কোথাও নেই আর
লগি ঠেলে দাঁড় বেয়ে সারারাত
এখনঘুমের চুমু বিশ্রামের শৃঙ্গার
আর যন্ত্রণার শরীরী সংলাপ
গয়নায় নেচে নেচে
যেনবা নদীর বুকে
বিস্মৃতির প্রেরণায় আগামীতে
অগ্রযাত্রা-আকণ্ঠ তৃষ্ণার স্রোত
বুকভরা শূন্য চরাচরে
বরফগলা জলের নদী জাগে
তখন মাটির কলস ঢেলে
সারাগায়ে মুখে বুকে নিবারণ
বিশ্বাস নেই আর নিয়েছে বিদায়
এইভাবে নিদ্রা ও মৃত্যু...

তারার ওপারে ওরা আজ
গহনা ভাসিয়ে রূপালী নদীর বুকে
দিনভর রাতভর বহু বছরের পর
নিশ্চিন্ত ভ্রমণের আয়োজন করে
এইসব মায়ামোহ ছেড়ে
আমাদের চলে যেতে হবে
এইভাবে,কৈশোর কালের দিকে


বৈপরীত্য

পাখিরা ডাকছেÑপৃথিবী মুখর সঙ্গীতে
ফুলফোটানো সূর্য ভোরের আলোয়
রাত কাটিয়ে জাগছে তখোন
একাকী মানুষ
“চাই নিদ্রা বিভোর বিশ্রাম
একটু ঘুমুতে চাই
জগতটা পিছে ফেলে
দূরে যেতেভুলে যেতে চাই
বিভৎস বাস্তব”
বলে যায় সমূহ চেতনা
তবু ঘুম আসে না

সারাদিন কেটে গেলে নির্ঘুম
বিরাগভাজন থাকে রাত্রির কাছে

অথচ অন্যদিন
সকাল দুপুর ছেড়ে
তারস্বর পাতিকাকগুলো
কা-কা-কা-কা
এক... দুই... তিন...
কাটছে প্রহরগুলো একে একে

কতো কাজ পড়ে আছে
সমস্ত পৃথিবী ডাকে
দ্বিপ্রহর ডাকছে চীৎকারে
অতল নিদ্রা তার ছোটেনা কিছুতে

একাকী মানুষ বিষম ঘুমায়
সন্ধ্যার শঙ্খধ্বনি কিম্বা আযানের সুর
দুই মিলে মৌন অন্ধকারের বিপরীতে
“ওঠো ওঠো জাগো তুমি
নি:সঙ্গ যুবক”
সে তবু নি:সাড়
মৃত্যুময় নিদ্রা যেন তার
অথবা কি নিদ্রাময় মৃত্যু?
রাত আসে-যায়-দিন... ...

শুয়ে থাকে ঘরে একাকী মানুষ
কিছুতেই ঘুম টোটে না

যখন ঘুমাতে চায় বিনিদ্র দিনরাত
জাগরণ আবশ্যক যদিনিদ্রিত নি:সাড়


প্রাচীন জাহাজ

প্রাচীন জাহাজ চরায় ঠ্যাকে
হঠাৎ কোরে অনিচ্ছাতে
কখনো কি ছুটবে আবার
নীল সাগরে প্রবল বেগে
দূরদিগন্ত সামনে রেখে
নতুন আলোয় নতুন হাওয়ায়
নতুন মানুষ কৃষ্টি নতুন
নতুন জীবন দেখবে আবার?

হালভাঙ্গা আর পাল ছেঁড়া এই প্রাচীন জাহাজ
নিরুদ্দেশে ছুটছে বুঝি অনিচ্ছাতে অনিয়মে!
ঝড়ের মুখে ঢেউয়ের বুকে
জোয়ার ভাটার প্রতিকূলে
ভীষণ কিছু ঘটবে বলে
বসে আছি আশংকাতে
হেরে যাওয়ায় মরে যাওয়ায়
ক্ষতিগ্রস্ত কিছু মানুষ
তবে আমি হার মেনে যাই
কেমন করে এই অবেলায়?
আমার কিছু কথা আছে
কারো কাছে বলতে হবে
আমার কিছু দেবার আছে
কারো জন্যে আমার কিছু করার আছে
আমার আজও পাবার অনেক বাকী আছে

কেমন কোরে পাবো আমি
কেমন কোরে দেবো আমি
পরিপার্শ্ব যদি এমন
ঝড়-তুফানে ধ্বস্ত করে
মেনে নেবো দুর্ভাগ্যকে?
এখন আমার করুণ দশা
চরায় কিম্বা ঝড়ের ঢেউয়ে
ভাসছি কেবল বিনাদোষে
বোঝার উপায় নেই কোন আর
বন্দরে আর পৌঁছবো কিনা
এই যে জাহাজ সে জানিনা
যাবে কিনা নতুন দ্বীপে
নীলসবুজে-বছর বছর
বসন্ত আর স্বপ্ন বোনার
আশা আছে যেই-মাটিতে
জীবনেরই বীজ বোনা যায়
নির্ভাবনায়জানিনা তো সে কথাও
প্রাচীন জাহাজ ভাসবে কিনা
শান্ত সুনীল সাগর জলে

এবং আমি বসে আছি অপেক্ষাতে
সকল কিছু দেখার আশায়
দেবার আশায় পাবার আশায়
চিরতরে বাঁচার না হয়
মাঝ সাগরে ডোবার আশায়

নৈবেদ্য

তোমার আঁচলে তুলে দেবো দ্বিধাহীন প্রত্যয়
জগত যতোটা বড়ো তার চেয়ে এই প্রেমিক হৃদয়
চির-রমণীর প্রতিমা গড়া যার নরোম মাটিতে

সাত সাগরের পাড়ে যেতে যদি হয়কংকাবতী
পাতাল দেশের পাথর ঘরে তুমি মায়াবন্দিনী
রূপকথার ঐ যমপুরীতে দৈত্যরাজের প্রাণ ভোমরা
মুঠোয় চেপে সোনার কাঠি ছোঁয়াই যখন উঠবে জেগে

মনে করো বাদশা সিকান্দার দু’চোখ ভরা স্বপ্ন দুনিয়ার
হয়তো আমি নাবিক সিন্দাবাদ সমুদ্র জয়ের গল্প দেবো

আমার কীর্তির বিস্ময় ম্লান কোরে দেবে ঠিকই একদিন
শা’জাহানের গৌরব শ্বেতশুভ্র তাজমহলের শাশ্বত নির্মাণ
কিং এ্যাডওয়ার্ডের সিংহাসন-ত্যাগী হৃদয় আত্মস্থ কোরে
জীবনের শাখা প্রশাখায় প্রমত্ত ঝর্ণার মতো অবিরল
প্রবাহিত কোরো যাবো অমর কাব্য রচনার অন্তিম সাধ

সমস্ত জীবন সাধনায় যদি একটিও পঙ্ক্তি কবিতার
কিম্বা গানের কলি তোমাকে বিমুগ্ধ করে পৃথিবীর বুকে
পায় অমরতা-সেই থাক তোমার আঁচলে নৈবেদ্য আমার

অন্যভাবে বলি শোন খুলে দেবো প্রতিটি দরোজা প্রাণের
আত্মার কতোটাঅতলে স্থাপন করেছি প্রিয় রমণীকে
দেখে নিও একদিন-তুমিই অমর শিল্প আমার ফসিলে
জীবাশ্মের ধূলো ধোঁয়ায় দিব্যমান দেবীরূপ নারী প্রস্ফুটিতা
আর আগামীর প্রতœবিদ বিস্ময়ে পাথর প্রতীম রূপমুগ্ধ প্রাণ

আতুর চোখের দৃষ্টিপাতে পুড়ছে তোমার অভিজাত রূপ
আমি উন্মাদ কবি মহারাণীর দরবারে নতজানু প্রজা
ক্রমশ: সম্মোহিত বিস্মিত শিলামূর্তি কিম্বা কাঙ্গাল এক
প্রার্থনা: আমাকে গ্রহণ করো নইলে আত্মঘাতী হবো

মুখোমুখি

আমাকে চেনো না সোনা?
আমি সেই পাগলা কানাই!

তোমার আলিঙ্গনে কদম সুরভী
নিষিদ্ধ ফলের রঙে রক্তাভ ঠোঁট
সেই যে জীবনে প্রথম-
তোমার আগামী জুড়ে জেগেছিলো
প্রশান্ত সাগরের টাইফুন

পাঁচটি বছরের ব্যবধানে
এমন অচেনা কেউ হতে পারে?
কেন যে দেখেও দ্যাখো না
তোমারই জন্যে আমি কিনা
মরু সাহারাকে করেছি ঠিকানা
ভাগ্যান্বেষণে বহুদিন গৃহহারা
আমি অগাধ বিশ্বাসে বেঁচে আছি

এখনো চেনো নি প্রিয়া? নাকি ভান
সম্পর্ক চিহ্ন সব মুছে ফেলে
তুমি মুক্ত মানবী মন-
চিঠি ও উপহার কালেকশান
এইসব গোপনীয় যতেœ সারাক্ষণ!

উশখুস কোরো না সোনা
অমঙ্গল চাইনাতো-পৃথিবী জানবে না
আমাদের প্রেম; পাথর হয়েছে বুক
পুড়ে পুড়ে-ফিরে যাবো সাহারায়

হলো কি মেয়ে মুখটা আঁধার যে
এখনো চাও থাকি আমরণ অপেক্ষায়?
অথচ তোমায় হয়না সময় ফেরার।

নারী ও রমণীটি

নারী আর রমণীটি ভিন্ন ঘরে থাকে
মায়ের মায়ার ছোঁয়াÑঅকারণ ছলছল চোখ
যখোন তখোন
ব্যবধান বুকে মেলে তাপিত শূন্যতা
এমন কোথায় আর অনিন্দ্য প্রশ্রয়
তোমার সমস্ত আশ্রয়
এই পৃথিবীর
বিকাশমান উদ্ভিদের পত্রপল্লবে
উদ্বেগাকুল বিজ্ঞানী চোখ
শ্রান্তিক্লান্তিহীন সুখের নি:শ্বাস
অমূর্ত নারী এক এরকম সুরভী ছড়ায়
আর কিনা রমণীটি শরীরি ইশারায়
আচম্বিত গ্রেফতার করে
বারবণিতার হাত বাড়ায় মদের পেয়ালা
নেশা নেশা স্বপ্ন টানে
ঘুমঘোর মৃত্যু আনে ভোগ উপভোগ বাসনায়
আবেশ বলয় তার সাধ্য কার ভাঙ্গে
রোমে রোমে কোষে কোষে প্রত্যন্ত শরীরে
মাংসল চৌম্বক বিস্তারিত...

নারীর আশ্রয়ে যাও রমণী অবাস্তব
বুকে তুলে নিলে তাকে নিখোঁজ নারীও
নারী আর রমণীটি ভিন্ন ঘরে থাকে
নারীটি রমণী নয় রমণী যদিও নারীরা

অবেলায় অন্তরাল

প্রত্যাশার সুবর্ণ দুপুর যাত্রাপথে-দুর্যোগ দূরে
অবেলায় অপরিচিতা হলে কি ভেবে?

আমি তো প্রস্তুত ছিলাম
প্রভাতের সোনালী রোদ লুট করে এনে
তোমার চোখের কোণে মেখে দিতে মুগ্ধতায়
যে আলো কচি ধানের বুকে মিশে থাকে....

আমি তো প্রস্তুত আছি
জ্যোৎস্নার শুভ্রতাকে ডানা কোরে উড়ে যাবো
জীবনের যাবতীয় রঙ-রূপ
পৃথিবীর হাসি দেখে দেখে নক্ষত্রের দেশে
তোমাকে ঘাসের মতো ঠোটে নিয়ে
এ্যাতো সহজে অনাত্মীয়া হোলে কিভাবে?

আমি তো নিশ্চিত ছিলাম
নৈবেদ্য বাড়ানো দু’হাত
ব্যর্থ স্বপ্ন হোয়ে হারিয়ে যাবেনা কখনোই
সমাজ বাস্তবের অসুস্থ পাতালে

আমি তো নিশ্চিত আছি
প্রেমের পরাগ ফোঁটা আর্তচেতনায়
যে তুমি বিমগ্ন পূজারী সন্ধ্যাবাতি জ্বেলে
ধূপ-ধোঁয়ার আবরণে নিবেদিতা নারী
অকস্মাৎ নামলে প্রলয়
ব্রতভঙ্গ হবেনা একটুও
দু’হাত বাড়িয়ে ঠিকই মালা তুলে দেবে
এ্যাতো সহজেই নি:সম্পর্কীয়া হলে কি ভেবে?

প্রতাশার সুবর্ণ দুপুর যাত্রাপথেদুর্যোগ দূরে
অবেলায় অন্তরালে গেলে কি ভেবে?



বিস্ফোরণন্মুখ

আমি ভীষণ জ্বলতে চাই
ক্ষোভ দুঃখ হতাশায়
অপমানে ব্যর্থতা-বঞ্চনায়
বিবেকের তাড়নে পীড়নে
আমি এখন বারুদের ডিপো
ভয়ানক বিস্ফোরিত হতে চাই
কে দেবে প্রেরণা, স্ফুলিঙ্গ কোথায়?




পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test