E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

সমর চক্রবর্তীর কবিতা

২০১৬ নভেম্বর ২১ ২৩:২০:১৩
সমর চক্রবর্তীর কবিতা






 

বঙ্গীয় আত্মার শ্যামলগ্রাম

.....................................................................

শৈশবের বহুবর্ণ রঙ মুছে দিয়ে
বহুজাতিক এ্যান্টিনার শব্দ তরঙ্গে
সনাতন গ্রাম ভেঙে হেসে ওঠে ডিজিটাল গ্রাম;
ষড়ঋতুর কৃষিরঙ নিভে যায়
জ্বলে ওঠে চাঁদ টেকনোলজি চিৎকারে!

ভায়াগ্রার নিস্তরঙ্গ রতিখেলায়
সময় হারায় বৃত্তভেদের জলবায়ু!

ও আমার হারিয়ে যাওয়া বঙ্গীয় আত্মার শ্যামলগ্রাম-

দীর্ঘযুগের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে
জননীর কোল সম্পর্ক আশ্রয়ে
তোমার স্বপ্নতীরে
নিসর্গের উদ্যানে
আমিও এসেছিলাম, জেনেছিলাম-
জীবনের গভীরে যতো প্রেম,
যা কিছু মহীয়ান, সকলই তোমার আশ্রয়,
মহাআশ্রম তুমি, সতত জীবন চেতনা বিকাশ ধারার . . .

পৃথিবীর সমান বয়সী কবি আমি
তাকাই লক্ষ লক্ষ নির্বাণ চোখে
উৎস-ব্যাপ্তি-অনন্ত আমার ভেতর
জন্ম-জন্মান্তর স্বপ্নবান হয়ে ফুটি
শূন্যতার রঙিন ক্যাম্পাসে!

জীবন ভালোবাসি গ্রামমাখা জীবনের লোভে।

সেই যে মায়াময় বন-বিথীকা, মোহময় তরুলতা বৃক্ষ
অবারিত শস্যগন্ধা মাঠ-প্রাণের ভেতর হু হু উদার বাতাস-
তরঙ্গায়িত সুধাময়ী নদী, নদীর উপর সাঁকো
দূরে নীল গ্রাম-

ওহ আমার দুরন্ত শৈশব, ঘুর্ণয়মান লাটিম!
ঝিক্ ঝিক্ ঝম্ ঝম্
ঝিক্ ঝিক্ ঝম্ ঝম্
রেল ট্রেনের শব্দ আবেগ মূর্চ্ছনায়
নৃ-নূপুরে বাজো বুকের ভেতর।

ঘর ভর্তি ধাতব যন্ত্রণা, উলঙ্গ পিপাসা
ছুটে চলে প্রতিক্ষণ সহস্র সূর্যাস্তের আড়ালে,
যাপিত জীবনের অতি পরিচিত মুখ, কৌতুক অভিনয়ে
রাত্রির প্রলম্বিত গভীরে কেমন যেন অপরিচিত হয়ে যায়!

স্বপ্নগুলো অক্ষম ক্রাচে হাঁটে একা
মানুষ নাকি জীবন অসহায়
প্রতিদিন প্রাণপনে বেঁচে থাকার কাছে!

ও হারিয়ে যাওয়া আমার সোনার মানুষ, সোনার হৃদয়!

ঋণের মুদ্রায় বাঁধানো সোনার দাঁত
চিকচিক হেসে ওঠে এনজিও রোদে,
ধার-কর্জের প্রজাপতি ডানায় আগুনের পরিখায় ঝাপিয়ে পড়ে বুক;
অচিন স্বপ্নের প্রাচীন গুহায়
নিজরে হারিয়ে নিশ্চুপ থাকে ঐতিহ্যের খনি,
লোনা রোদে হাসে উলঙ্গ বনসাই
বৃক্ষ লতায় ঝুলে থাকে ধূর্ত মাকাল!

প্রগাঢ় অন্ধকার ভেঙে হৃদয়ে প্রেমের তুফান আনে ছাতিম ফুলের ঘ্রাণ,
মস্তিষ্কের শাণিত অস্ত্র তাড়া করে ফেরে মানুষের বেঁচে থাকার নির্ভার আয়ু!

মানুষ জানে না মানুষের অবক্ষয়-

জীবন ছুটে চলে অর্ধনগ্ন উন্মাদ ঊর্ধ্বশ্বাসে
কী সুন্দর যৌন আবেদনময়ী নারী প্রগতি
সাজানো বিল বোর্ড সাইনবোর্ডে !
এ্যাখন সময় জুড়ে হাসে কনজ্যুমার সংস্কৃতি!


ওহ আমার হুম হুম হুমনা সুর ব্যঞ্জনার গোধুলিমায়া...

অক্সিজেনের ভ্রুণ ভেঙে নাচে কার্বন-বাতাস
মুক্ত বাণ্যিজ্যের অবাধ ক্যাম্পাসে,
প্রাচ্য শরীরে পাশ্চাত্য ছায়া
খেলা করে বিড়াল-ইঁদুর ভেবে ভেবে!

বৈরাগ্য ছায়া,বৃত্তের ব্যাসার্ধ ভাঙা সাহসে

দু’পায়ে মাড়িয়ে যায় শোকাবহ জোছ্নায় উলঙ্গ কোলাহল,
ছন্দবেশে আমিও বাউল হয়ে যাই
নিসর্গের কন্ঠ চুরি করে সাজাই পাখির কন্ঠ
প্রকৃতির পুষ্পিত শরীর থেকে
খুলে নেই নৈসর্গিক সময় কিছু

মস্তিষ্কের শোষণ যান্ত্রিক দস্যুতায়
শরীর থেকে যে শিহরণ নিভে গেছে
আ-হা উঠবো কী আবার জেগে কোনো দিন-
প্রাণের আবেগ, নির্মল মায়ায়-
বঙ্গীয় সভ্যতার কৃষিরঙে!

লেবাসপরা সময় বিজ্ঞাপনের কৌশলী ভাষায়
কখোন যেন সিঁদ কেটে ঢুকে পড়ে
আমার গ্রামের বিণীত প্রথায়

আয়নায় নিজেকে তুচ্ছ মনে হয়!

চুলের ভেতর চিরুনীর আঁচড় কখোন যেন অনাদর হয়ে ওঠে
সিঁথি ভেঙে উড়ে যায় মা’র দোয়া স্পর্শের কোমল হাত!

আ-হা শৈশবের আকাশ-সুতোকাটা রঙিন ঘুড়ি!
হারিয়ে যাওয়া লতাগুল্মময় মনোভূমি, ধুলোমাখা প্রাণ
রোদমুখে ছায়া লুকানো কিশোর-কিশোরী
ফুল বৃক্ষ প্রজাপতি-প্রাচীন ইতিহাস
সকলের কাছেই ঋণী আমি,
সকলই তো আমার প্রেম
প্রেরণা প্রবাহ উচ্ছ্বাস।

উল্গু ধারার নদী নেই আমার,
রহস্যময়ী প্রেমিকার নিঃশ্বাসে
ভেঙে গ্যাছে চন্দনা মধুমতির অহঙ্কারি সংসার-

পদ্মার বুকে আগুনের বিস্তৃর্ণ ফণা!
পাললিক মানুষ বদলে যায়
পুড়ে যায় ষড়ঋতুর উজ্জ্বল স্কুল!

আমি তরঙ্গহীন তরঙ্গে ভাসি-
স্মৃতিময় শুধু সুধাময়ী করুণার প্রেমময় প্রাণ
নাই কিছুই নাই আমার-
কতো দিনরাত্রি জোছনা অমানিশা
স্নিগ্ধ সে জলের শিল্প আবেগ সাঁতারে
নিঙড়ে নিয়েছি বুকে জীবন অনুভূতির প্রাজ্ঞধারা,

হায় বারাসিয়া, কুমার গড়াই!

মুদ্রাহীন মূল্যে কে যেন নিয়েছে কিনে
শতত বাংলার বাউলা উৎসব,
ফসলের মাঠে সবুজের সেই দামামা নেই আমার,
কোথায় উঠোনে গুঞ্জরিত সেই চড়ুই শালিক!
নাই.... নাই, বিবর্ণ সকল সরল বিদীর্ণ
দাঁড়িয়ে আছে লাইনে ঐক্যে একা!

একদিন আমরা আমাদের রোদেলা উঠোন থেকেই
শিশুর হাসিমাখা ঠোঁটে পেয়েছিলাম সত্যের সন্ধান,
কোঁকড়া চুলের শ্যামলী যুবতীর হরিণী চোখ থেকে
চুরি করেছিলাম সবুজ প্রেম,
শিল্প সে সনাতন আবেগ আমার সাহস যোগায় উৎসাহের।

এইযে জীবন ভর্তি বিলাস রূপান্তর
বহুবর্ণ পিপাসা, ছুটে চলে প্রতিদিন সমান্তরাল স্বপ্নের আড়ালে-
শাণিত মস্তিষ্কে গজিয়ে ওঠে হৃদয়ের আসবাব!

বলো বন্ধু ,কী করে আজ উল্টো ঘোরাবো হৃদয়ের চাকা
ফেরাবো সোনালিময় সেই সময় ?
আজ শুধু খুঁড়ে তুলবো অতীত ইতিহাস
ফিরে যাবো ফেলে আসা দূরত্বে -যেখানে বেজছে হৃদয়ের বাঁশি!

মাটি, বন্দি হৃদয় মাটি
কত কাল-কালান্তর সভ্যতা বিবর্তনের নিচে
আড়াল করে আছো নিজস্ব ভাষা,
কত লতা, ঘাস, বৃক্ষ, শেঁকড় হারিয়ে-
নিঃসঙ্গ রোদনে ভুলে গেছে নাড়ির টান!

রূপান্তরিত সভ্যতায় তবু তুমি বারবার
হয়েছো ইতিহাসে রূপের প্রার্থনা!

মাতৃঋণের মতো শোধ হয় না মাটির ঋণ!

পাঠকের মতামত:

২৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test