E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রুমা পণ্ডিতের কবিতা

২০১৭ জানুয়ারি ১৭ ২৩:২৮:৩৯
রুমা পণ্ডিতের কবিতা






 

বেনারসি


আলমারিতে ঠাসাঠাসি ভিড়
মধ্যবিত্ত সুতোয়
অভিজাত নক্সার নিখুঁত অনুকরণ,
জমকাল রঙের গায়ে
বাড়তি উজ্জ্বলতা এনে দেয় নকল জরি,
পাড়ে লেগে থাকা ধুলো আর শুকনো ঘাস
এখনো ভোলেনি
সেই পথ চলার গল্প,
আঁচলে শুকিয়ে থাকা সুগন্ধি ও ঘাম
কিছুতেই মনে করতে পারে না
তাদের শেষ তারিখ
ঠাসাঠাসি ভিড়ে মধ্যবিত্ত গুঞ্জন,
বিবর্ণ আভিজাত্য নিয়ে
এরই ভেতর
একটা বহু পুরনো রাতের গল্প
পাহারা দেয়
নিরব বেনারসি।


ভবিতব্য


ভেজা হাতেও লেগে থাকে
গৃহস্থালি টুকিটাকি,
জলটুকু মুছলেও
স্যাঁতসেঁতে ভাব শুকোয় না
দুহাত ভর্তি কাটাকুটি রেখায়
নিয়তির লেখা,
হস্তরেখাবিদ হলে
হয়তো বুঝে নিতাম
রামধনুর গায়ে কেন মরচে ধরে!
কি করে সহজ সরল পথ
আচমকা হারিয়ে ফেলে দৃশ্যমানতা!
জেনে নিতাম হঠাৎ বাঁকের দিনগুলোয়
কতটা সকাল আর কতটা রাত বরাদ্দ!
পদক্ষেপ কতটা লম্বা হলে
ডিঙিয়ে যাওয়া যায় চোরাবালি!
কতটা যাচাইয়ের পর
চশমা খুলে আড়মোড়া ভাঙা যায়।

দাগ ধরে চলতে চলতেই
নজরে পড়ে
সোনায় বাঁধানো গ্রহ নিয়ন্ত্রক
রত্নটির গায়ে
বাসন মাজার সাবান শুকিয়ে আছে।


জলছবি


আমার শোওয়ার ঘরে দুটো জানলা
একটি আলমারির পেছনে চাপা পড়ে
বহু বছর অচেতন,
তাই অন্যটি বেশ আদরের
নাম দিয়েছি "দিগন্ত"
পাতলা কাপড়ের নীল পর্দা,
অসংখ্যবার সূঁচ বিঁধিয়ে
ফুটিয়েছি উড়ন্ত পাখি
অল্প হাওয়ায় পাখিটা নড়ে
ওড়ে না!

একপাল্লা দরজার নাম "অপেক্ষা"
চৌকাঠটা "নদী" হোক,
অপেক্ষার গায়ে
ছোট ছোট পেরেক দিয়ে
গেঁথে দিয়েছি সবুজ ছায়াপথ,
আসা যাওয়ায় বারবার কেঁপে ওঠে।
নদীর ওপার থেকে এপারে
লক্ষ্মীর পা, বন্দি।

আকাশগঙ্গা আমার খোলা ছাদ
প্রতিদিন কয়েক গুচ্ছ নতুন নক্ষত্র
জড়ো করি সেখানে
অন্ধকার হলেই
ওরা জোনাকি হয়ে যায়।


উপন্যাস


আজই শেষ করলাম
উপন্যাসের এক রোমাঞ্চকর অধ্যায়
ভালমন্দের যাবতীয় দায়ভার নিয়েই
সাক্ষর করলাম শেষ পংক্তির
চার আঙুল নিচে।
প্রতিবারই ওই জায়গা ছেড়ে রাখি
নিয়তির জন্য,
উনি সেখানে নিয়মিত পায়চারি করেন,
সংগে নজরদারিও।

সময়কে সাক্ষী রেখে
একটি সত্যি কথা বলে রাখি
এই অধ্যায়ের প্রতিটি পাতাতেই
আমি আছি
কিন্তু সব পাতা আমার নয়!


স্বপ্নবাড়ি

মেঘকে অনুসরণ করে
উঠে গেছি ধাপে ধাপে
রক্তিম মসৃণ সিঁড়ি
অত্যন্ত সতর্কতায়
চুপ করে গিয়েছিল নূপুরও
স্বপ্নবাড়ির দরজায়
গুণগুণ করেছিলাম মন্ত্র
প্রথম বাঁ পা রেখেছিলাম
চৌকাঠের ওপারে।

আবছা আলোর ভেতর দেখলাম
"অপেক্ষা "লেখা অজস্র চিরকুট,
কোন প্রাচীন যুগ থেকে জমে আছে
কে জানে!
ওদের মাঝে গিয়ে দাঁড়াতেই
ওরা বদলে গেল,
বৃষ্টি হয়ে নেমে এলো
নীল স্নানঘরে
ধুয়ে গেল ক্লান্তি,
দুখানি জ্বলন্ত ধুপ আর সিক্ত পবিত্রতা নিয়ে
ছুঁয়ে দিলাম প্রতিটি দেওয়াল
তারপর ঘন মেঘের ভেতর
খুঁজে পেলাম জন্মান্তরের পরিচয়।

(আরপি/এস/জানুয়ারি ১৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test