E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আজ কবি সুনীতি দেবনাথের জন্মদিন

২০১৭ জানুয়ারি ২৮ ১২:০২:১৪
আজ কবি সুনীতি দেবনাথের জন্মদিন

রুবেল পারভেজ:কবি সুনীতি দেবনাথ ১৯৪৫ সালের ২৮ জানুয়ারি সিলেটের পঞ্চখণ্ডে জন্মগ্রহন করেন। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে মা-বাবার হাত ধরে উদ্বাস্তু হন। বর্তমানে তিনি ভারতের উত্তর ত্রিপুরার জেলাসদর ধর্মনগনের বাসিন্দা।

ছোটবেলা থেকেই তাঁর লেখালেখির হাতেখড়ি। তিনি একাধারে কবি, নাট্যকার, গল্পকার ও প্রাবন্ধিক। আধুনিক বাংলা কবিতায় সুনীতি দেবনাথ আপন বৈশিষ্ট্যে বীক্ষিত। মানব মনের রহস্যের উন্মোচন এক মৌলিক কবির ব্রত। সমকালের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কবি সুনীতি দেবনাথের নীরিক্ষণ মহাকালের বৈশ্বিক বিবর্তন, জীবন জিজ্ঞাসার আণবিক অন্ধকারের বিদ্যুৎ বিভাস, সামুদ্রিক স্বপ্নের ভৌগলিক ইতিহাস, জীবনের যাবতীয় পাওয়া না পাওয়ার সুদকষা তাঁর কবিতার নিত্য নৈর্মিত্তিক বিষয়।

বিশ শতকের বাঙ্গালি প্রতিভার এক মহোত্তর সৃষ্টি আধুনিক বাংলা কবিতা। হাজার বছরের ঐতিহ্য পেছনে ফেলে তা আজ আধুনিক যুগে গাত্রোত্থান করেছে।

সার কথা শেষ কথা যত যুদ্ধই হোক
নারীর জন্য চিরকাল পুরুষের প্রেম জেগে থাকে।
হোকনা যোদ্ধা মানব মুক্তির লড়াকু সৈনিক
অন্তরে আছে তার নরম প্রেম নারীর জন্য
সেও মার্কসের মত প্রেমের কবিতা লেখে
প্রিয়তমার জন্য।
( একটি অনন্য সাক্ষাৎকার)

মন্ত্রের মত অমোঘ উচ্চারণ কবিতার প্রতিটি চরণে।নিবিড় এক সত্যকে কবি তাঁর কলমের আঁচড়ে চিত্রিত করে তুলেছেন অপূর্ব মহিমায়। প্রকৃতপক্ষে নারীর জন্য আজীবন প্রতিটি পুরুষের প্রেম জেগে থাকে। বিপ্লবী কার্ল মার্কস ও প্রিয়তমার প্রেমে মুগ্ধ হয়ে কবিতা লেখেন।

কতদিন পার হয়ে গেছে কত রক্ত ঝরে গেছে তবু
ক্ষুধার আগুন নিয়ে পেটে রিয়াং পুরুষ লুসাই বস্তির
কমলা বাগানে জন খাটে। ঝকঝকে পোষাক
মোড়া লুসাই যুবতী পুরন্ত শরীরে বড় তীক্ষ্ণ
ছেঁড়া কাপড়ের রিয়াং পুরুষের যৌবনকে ব্যঙ্গ করে
ঢলে পড়ে।

তার চোখে চোখ মেলানো কঠিন
তবু চৌম্বকীয় টানে তার বেপথু যুবক! শিশির
ধোয়া রস টসটসে কমলাটি ছুঁয়ে দেয় যুবকের চোখে।
( এপার ওপার)

খেটে খাওয়া রিয়াং পুরুষ লুসাই যুবতীর ভরা যৌবনা নদীতে কামনার বুনো গন্ধের চৌম্বকীয় টানে বেসামাল।এ কবিতা বর্ণনায় কবি যেন বেগবান নদীর ফল্গুস্রোত।

লুসাই ছেলে লুসাই মেয়ে গিটার হাতে হাসতে
হাসতে পড়ছে ঢলে।
দেখ দেখ রঙেন বাহার একে দেখ ওকে দেখ,
কোথায় এলাম?
ঘরবাড়ি সব সাফসুতরো পাহাড় ঢালে ছবির মত,
মাঝে মাঝে মেঘ এসে কুশল শুধোয় কেমন আছ?
কোথায় এলাম বিদেশ নাকি-ওমা,এ যে ভাংমুন।
( পথ চলেছে ভাংমুন)

কবি ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলেরর ছোট্র রাজ্য ত্রিপুরার সমৃদ্ধ জনপদ ভাংমুনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নিবিড় বর্ণনা দিয়েছেন। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের চিত্র যেমন কবিতার বহিরাঙ্গে প্রতিমা সুন্দরের ছবি আঁকা অপরদিকে এর হৃদয়াঙ্গে ঢেলে দিয়েছে বাক নান্দনিক কলা কলির মোহাচ্ছন্নতা ধ্রুপদ রাগিনীর মীড় মূর্ছনা যা অন্তর সত্তার গড়া নিবিড় তান উল্লাসে বিকশিত। কবি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার রোষানলের শিকার হয়ে বদলি হয়ে চাকরিরত অবস্থায় পাহাড়ি জনপদে সাড়ে ছয় বছর কাটিয়েছেন। তাই তাঁর কবিতায় পাহাড়ি সৌন্দর্য অবলীলায় বর্ণিত হয়েছে।

তবু স্মৃতিবে আঁকড়ে থেকে শেষ পদচিহ্ন
একেবারে শেষ অতিক্রম চিহৃ এঁকে যেতে হয়।
স্মৃতি শুধু জীবনের খণ্ড অবকাশ।
( তবু স্মৃতিকে ঘিরেই)

স্মৃতি অবিরত নদীর ভাঙনের মত হৃদয়ের গহীন ভেতরে দোলা দিয়ে যায়। খণ্ড অবসরে মানুষ নষ্টালজিক হয়ে ওঠে।সে তখন স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে থাকার প্রবল চেষ্টা করে।মৃত্যু অবধি সে স্মৃতিরোমন্থন করে। সময় চলে যায় কিন্তু স্মৃতি থেকে যায়, আমাদের অবসরের দিনগুলোতে মনের দরজায় দারুণ করাঘাত করে।

কবি সুনীতি দেবনাথ আধুনিক কবিতার এক ক্লান্তিহীন আত্মমগ্ন কবি। তিনি কবিতায় চিত্রকল্পের অরুপ লালিত্যে কবিতাকে দৃশ্যত করে তোলেন সচেতন পাঠকের দিদৃক্ষায়। প্রাতিস্বিক তন্ময়তায় অসাধারণ সব শব্দের দ্যোতনা তাঁর কবিতায় মায়াবী পর্দার মত দুলে ওঠে। তিনি একজন ধ্যানস্থ কবি। হতাশা আর ব্যর্থতা, আত্মরতি আর যৌনতায় আক্রান্ত আমাদের আধুনিক কবিতার ধারা অতিক্রম করে স্বাতন্ত্র্য বোধে ঋদ্ধ কবি সুনীতি দেবনাথ একজন আলোকিত কবি।



সুনীতি দেবনাথের কবিতা

বিবৃতি


সমুদ্র সৈকতে হাঁটছি পায়ের ছাপে
এঁকেছি আঁকছি আলপনা বহুদিন
উন্মত্ত ঢেউ সেসব মুছে দিয়ে যায়
রাতদিন অবিরাম, কতদিন হলো?
এই আমাকে ঘিরে কতজন এলো
কতজন নতমুখে চলে গেল
তার হিসেব মেলানো ভার।
মাঝে মাঝে পুরনো তমসুকে তাদের নাম
এলোমেলো ভেসে উঠে ডুব দেয়
অন্তহীন সমুদ্রের উত্তাল জলে।
রাত্রিকেও আরেক সমুদ্র মনে হয়
এ সমুদ্র এলোমেলো সবকিছু থরে থরে
সাজাতে মগ্ন ম্লান নক্ষত্রের আবছা আলোয়
কতকিছু চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে মহাকাশে উড়ে যায়
ফেরেনা কখনো যেন আদি অন্তহীন এক রূপকথা।
প্রাচীন নক্ষত্রও চূর্ণ হয়ে মায়াবী পৃথিবীর টানে
স্তরে স্তরে জমা হয় অনুপম মৃত্তিকার নরম বুকে।
গড়ে তুলে আরেক রূপকথা রূপসী পৃথিবীর বুকে।
কত বিদ্রোহ হাজারো যন্ত্রণা লিখে চলে দিনরাত
অব্যাখ্যাত নব নব কাহিনী বিন্যাসে নতুন ইতিকথা।
অনুভূতির প্রথম প্রভাতে জেনে যাই
প্রতিবাদ প্রতিরোধ একমাত্র পথ আছে শুধু চলাচলে
সুরক্ষিত পৃথিবীর পথে চলাকালে অন্য কিছু নেই
আমার প্রতিটি কবিতা তাই সেই সার সত্যের আনুগত্য
নিয়েছে মেনে, এও জেনে গেছি এই সত্য সাধনার পথে
কাল সমুদ্রের তীরে একদিন গড়ে উঠবে আলোকিত
অপরূপ শাশ্বত জীবনের মায়াঘেরা কাঙ্ক্ষিত পৃথিবী!
সেই কবে থেকে কত বিপ্লব বিদ্রোহ প্রাণের অপচয়
একটি সোনালি স্বপ্নের আকাঙ্ক্ষায় সংগঠিত হয়েছে
হেরেছে মানুষ পিছুপা হটেনি, তাই সেই মানুষ
অনাগত ভবিষ্যতের নিশ্চিত ফলক প্রতিষ্ঠায়
এগিয়ে চলেছে চলবে সুদৃঢ় প্রত্যাশায়!



(এসডি/এস/জানুয়ারি ২৮, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test