E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আজ কবি কামাল চৌধুরীর জন্মদিন

২০১৭ জানুয়ারি ২৮ ১৩:০৯:২৯
আজ কবি কামাল চৌধুরীর জন্মদিন

নিউজ ডেস্ক : বাংলা ভাষার অন্যতম কবি কামাল চৌধুরীর ৬০তম জন্মদিন ২৮ জানুয়ারি আজ । মধ্য-সত্তরের তারুণ্যদীপ্ত দ্রোহের কবি হিসেবে খ্যাত কামাল চৌধুরীর জন্ম ১৯৫৭ সালের এই দিনে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বিজয়করা গ্রামে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা।

প্রেম ও দ্রোহের শব্দাবলি কামাল চৌধুরীর কবিতায় দৃঢ় আওয়াজ নিয়ে বেড়ে উঠলেও, আবহমান কালের বাঙালির মুক্তির চেতনাকে তিনি ধারণ করেন তার কবিতায়। আধুনিক চিন্তা, উদার দৃষ্টি, জাগতিক মূল্যবোধে অলঙ্কৃত কবি কামাল চৌধুরীর কবিতাকে দিয়েছে আলাদা মর্যাদা। যত তুচ্ছই হোক না কেন, জীবন আর যাপনের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রত্যেকটি বিষয় তার কবিতায় উপযুক্ত অলঙ্কার আর সঠিক শব্দমালায় দীপ্ত। কামাল চৌধুরীর প্রথম কবিতা ছাপা হয় দৈনিক আজাদ পত্রিকায়। ১৯৮১তে একুশের বইমেলাতেই বেরিয়েছিল কবি কামাল চৌধুরীর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘মিছিলের সমান বয়সী’। তার দ্বিতীয় কবিতা-সংকলন ‘টানাপোড়েনের দিন’। এর পর একে একে প্রকাশিত হয়েছে আরো আটটি কাব্যগ্রন্থ; ‘এই পথ এই কোলাহল’ (১৯৯৩), ‘এসেছি নিজের ভোরে’ (১৯৯৫), ‘এই মেঘ বিদ্যুতে ভরা’ (১৯৯৭), ‘ধূলি ও সাগরদৃশ্য’ (২০০০), ‘রোদ বৃষ্টি অন্ত্যমিল’ (২০০৩), ‘হে মাটি পৃথিবীপুত্র’ (২০০৬), ‘প্রেমের কবিতা’ (২০০৮), ‘পান্থশালার ঘোড়া’ (২০১০) এবং ‘মুক্তি ও স্বাধীনতার কবিতা’।

১৯৯৫ সালে তার নির্বাচিত কবিতা সংকলন প্রকাশ পেয়েছে। এরই ধারাই ২০১১ সালে বেরিয়েছে কবিতা সংকলন। ১৯৯৫-এ আলী রীয়াজের সঙ্গে যৌথভাবে সম্পাদনা করেছেন ‘সত্তর দশকের কবিদের কবিতা’।

সত্তর দশকের কবি কামাল চৌধুরী পেশায় সরকারি কর্মকর্তা। তিনি ১৯৮২ সালে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। তিনি তথ্য সচিব, শিক্ষা সচিবসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে এখন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব হিসেবে কর্মরত। সরকারের একজন সফল ও শীর্ষ কর্মকর্তা হয়েও তিনি কবিতা লেখার চর্চা করে যান নিরলসভাবে। যার স্বীকৃতস্বরুপ তিনি এরই মধ্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার (২০১০), রুদ্র পদক (২০০০), সৌহার্দ্য সত্তর (পশ্চিমবঙ্গ) সম্মাননা (২০০২), কবিতালাপ সাহিত্য পুরস্কার (২০০৫), জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার (২০০৯) এবং সিটি-আনন্দ পুরস্কার (২০১০) পেয়েছেন।

কামাল চৌধুরীর কবিতা

০১.
পড়শি রাতের শব্দ, কার নামে এই পাতাঝরা
বনপথে অভিভূত কারা আজ শব্দ অনুগামী
শীত না শোক না জš§ এই নিশি কার জন্য লেখা
লণ্ঠন জ্বালিয়ে রাখে কারা এই পথের ওপর?

অক্ষর সবুজ ঘাস সেই আজ রেখেছে শিশির
পথে পথে ছড়িয়েছে বুনোপাতা; শান্ত ধূলিময়
আকাশ নক্ষত্র তাঁবু, তার নিচে বিস্ময় বালক
লতাগুল্ম পার হয়ে হারাবে কি যাদুর কোটরে?

কোটর জননী গর্ভ, জš§ নেবে ছন্দলেখা শিশু
নবপত্র খাতা হবে, জ্যোৎস্না হবে রৌদ্রলেখা বোন
কুয়াশা চুম্বন জল, ঘাসে ঘাসে রোমাঞ্চ ধ্বনিতে
বহুদূর হেঁটে যাবে দূরাগত এক তেপান্তরে
শূন্য হবে উঠে যাবে হƒৎপিণ্ড, মহিমার বীজ
নিজের প্রশ্রয়ে তারা পুনর্বার জš§ নেবে শীতে।


০২.
রাবার গাছের ছায়া তার নিচে সকালের মেয়ে
কুয়াশায় ভেসে এসে হয়ে উঠে তরুশীর্ষে ফুল
প্রজাপতি কাছে বসে, সুন্দরের পূজারী তারাও
বিধাতা তাদের আজ পাঠিয়েছে রঙ তুলি হাতে।

এখন দিগন্তজুড়ে পটুয়ারা দৃশ্য এঁকে যাবে
প্রতিটি সবুজ পাতা তার পাশে ভোরের কামিনী
পাহাড়ের চূড়া থেকে নেমে আসা যূথবদ্ধ মেঘ
এই দৃশ্য পটভূমি শুভ্র এক গিরি তিলকের।

বিস্ময় আমার সঙ্গে, খুব ভোরে উঠেছি দুজনে
ভোরের দুহিতা দেখে আমিও কি প্রেমরোগী আজ
কার পাপ এতে বেশি, যে করেছে সৃষ্টি না যে দেখে
বিধাতা তোমার নামে এই পাপ, পবিত্র ব্যত্যয়।

চির প্রভাতের মেয়ে আমি দেখি শুধু ঊষাকাল
আমার চোখের নিচের প্রজাতি এঁকেছে ভ্রমর।


০৩.
তাদের নীরব গ্রাম, তারা শুধু ঝর্ণা নামে বাঁচে
পাখিরা বেড়াতে আসে সঙ্গে নিয়ে অতিথির ঝাঁক
পালক ভিজতে থাকে, চঞ্চু ডোবে আকণ্ঠ সলিলে
পাহাড় চূড়ায় বসে বৃষ্টি দেখে এই ধারাপাত
তার বোন তাকে ডাকে আয় তোকে শান্ত ম্লান দেব
আমরা যমজ গর্ভ, একসঙ্গে আয় ভেসে যাই।

মাধবকুণ্ডের জল। ফি-বছর অরণ্যানী ভাসে
চা বাগান পার হয়ে হেঁটে আসে গুচ্ছ গুচ্ছ রোদ
তাদের সোনালি আভা রুপোলি ধারায় মিলে মিশে
একসঙ্গে হেসে ওঠে শান্ত এক গ্রামের ওপর।

মাধবের এই কৃপা সে দিয়েছে কুণ্ডে জলধারা
দিয়েছে পাখির স্নান অতিথির মুখর উল্লাসে
বনবিবি পাহারায় তার চুলে আষাঢ়ের ঢেউ
বেড়াতে এসেছে যারা তারা শুধু মুগ্ধ চোখে দেখে।


০৪.
এপ্রিল কঠিন মাস। আজ রাতে জলোচ্ছ্বাস হবে
শব্দ কুহকের ঝাউ ভয় পেয়ে তীর থেকে দূরে
পাহাড়ের গ্রামগুলো সঙ্গে নিয়ে রাত জেগে থাকে
তাদের পাতায় শব্দ, মর্মমূলে ভাঙে ডালপালা
তীরে উঠে আসে ঢেউ, বালিতটে হাওয়া বন্ধু নাচে
আজ রাতে মৃত্যু লেখা। ত্রাণ কাজ শুরু হবে ভোরে।

উখিয়ার এক রাত্রি। সমুদ্রের উচ্ছ্বাসের নেশা
পানপাত্র ঢেলে দিয়ে মৎস্যকন্যা তারস্বরে ডাকে
সর্বনাশ হানা দেয়, ঘোর রাতে আহত বিলাপ
প্রলয়ের হাতে লেখা উপকূলে আজ দিনলিপি।

বাঁচে না সহজে গ্রাম। পাখ পাখালির ঘেরাটোপ
বালিবাঁধ ভেসে গেলে ছিন্নমূল প্রোথিত শিকড়
উদ্বাস্তু পাখির কান্না, ছিন্নভিন্ন গ্রামগুলো দেখে
ঊনত্রিশে এপ্রিলের ভয়ঙ্কর খাতা খুলে যায়। -




(ওএস/এস/জানুয়ারি ২৮, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test