E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নারায়ণচন্দ্র সরকারের ৫টি কবিতা

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ০৭ ১০:৫১:৫৮
নারায়ণচন্দ্র সরকারের ৫টি কবিতা







 

তোমার বড়ো হওয়ার অঙ্গীকার

তুমি অনেক বড়ো হবে-- অনেক বড়ো--
তুমি আমার একটা আবদার রাখবে ?
আমার বেদনা- ভারাক্রান্ত হৃদয়
গান যে বড়ো ভালবাসে !
তুমি আমাকে বেদনার গান শোনাবে ?
নীল বেদনার গানে আমি বিমোহিত হয়ে যাই--
অনুভূতির ভাষা হারিয়ে ফেলি !
দু'চোখে জমাকৃত অশ্রু ঝর্ণা হয়ে
পাহাড় গাত্রবেয়ে নদীবক্ষ প্লাবিত করে !

ভাদ্রের ভরা যৌবনা নদী, মাঘের শীতে ফসলের মাঠে
হলুদ সরিষাক্ষেতে মধুমক্ষিকার আনাগোনা
আমার দু'চোখে স্বপ্নের জাল বোনে !
তোমার স্পর্ধা ধূসর ধুলায় পদদলিত হলে
আমার অহঙ্কার ভূলুণ্ঠিত হবে,
আমার স্বপ্ন ভেঙে গেলে তোমার চেতনার ব্যকুলতা
বহ্নিতেজে ভস্ম হবেনা !
আর কিছু পুড়ে খাক হবেনা,
খাদ পুড়ে গিয়ে সোনা হবে খাঁটি !

কৃষ্ণকালো অন্ধকারে তুমি হতে চাও বড়ো--
তোমাতে আমাতে ভাবের বৈরিতা
চলে যে চিরসমান্তরালে,
নাগিনীর বিষতেজে আমি আজ নীলমাধব
শিরে ধরি ময়ূর পুচ্ছ , নাগমনির ন্যায়
চলার পথ করি আলোকিত !
কৃষ্ণকালোয় তোমার বড়ো হওয়ার অঙ্গীকার
উঁচু রাখে তাই আমারই শির।



বঞ্চনার সম্পদে


দামী পোশাকে ঘেরা চরিত্রহীন নষ্ট দেহ--
কজনে বিচার করে তাহা !
পয়সা থাকলেই সব কলঙ্ক ধুয়েমুছে যায় !
সততার আবরণে থেকে থকে
এই শরীরটা শুকিয়ে গেছে !
তাই বলে কাউকে অসাধু হতে বলছিনা--

পেটে খাবার নেই
চেহারায় জৌলুশ নেই--
সবাই ঘৃণা করে !
ছেড়া ময়লা পোশাকে কোনোরকম
দেহখানা ঢেকে রেখেছি !
পকেট তল্লাশি করে ছুঁচো ফিরে যায় দুখে !
চেয়ে দ্যাখো---
রাতে চুরি করে দিনে সততার খই ফুটাচ্ছে !
অন্ধকার ঘরে মদ্যপানে নোংরামী করে এসে,
রাজপথে দাঁড়িয়ে কত সুন্দর সুন্দর বুলি আওড়াচ্ছে--
যেনো, মাটির পৃথিবীতে স্বর্গের দেবদূত নেমে এসেছে !

নামীদামি বাহারী সুগন্ধি মেখে
ঘ্রাণ ছড়িয়ে রাস্তায় চলেছে,
পকেটও গরম !
ওদের কাছে ঘেঁষতে ঘেন্না করে
ভিতরটা দূর্গন্ধে ভরা,
দেখতে মাকাল ফল।

বিবেকের কঠিন দেওয়ালে ঘেরা
এই মনটিকে নিয়ে--
কারো বঞ্চনার সম্পদে
পাহাড় গড়তে পারিনি কখনো !
তাইতো, ন্যায়ের পথের অভুক্ত পথিক আমি !





কালিমাপল্লবে


প্রকৃতির খোলা মাঠে বাতাস নেচে যায়
আপন স্বাধীনতায়--
মানেনা কারো বাঁধা
শোনেনা কারো কথা ,
খেয়ালের বশে ইচ্ছা খুশি যেতে যেতে
চলে যায় অনেক দূরে !
তপন তাপিত বায়ুমণ্ডলে
অশান্ত বায়ু ঘুরপাক খেয়ে
আবার ফিরে আসে ।

আমার মনের আঙ্গিনায় খোলা বাতায়নে
বহেনা সেথায় মুক্ত হাওয়া ,
হিল্লোল খেলেনা সেথা বাঁধাহীন পথে।
তারই মাঝে বিজ্‍লির চমকে
আচম্বিতে আলো-আঁধারে চোখ ধেঁ-ধেঁ যায় !
সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে
দেখি বিস্ময়কর দৃশ্য এক !
বিশাল সমুদ্রবক্ষ চিরে
প্রশান্ত সাগরদেবী উঠে এসেছে সৈকতে ;
প্রবল তরঙ্গ উপভোগে আত্মতৃপ্তিতে বিভোর !

হঠাৎ, দমকা হাওয়ায় পাল্টে গেলো দৃশ্যপট ,
কুয়াশাচ্ছন্নের ন্যায় দখিনা পবন
একখানি মেঘ নিয়ে আসিলো ধেয়ে।
খোলা আকাশের নিচে
মনের উন্মুক্ত জানালা দিয়ে
ভিজিয়ে গেলো রিক্ত মনের শুভ্র সিক্ত বসন ;
হয়ে গেলো অনিচ্ছাকৃত অবগাহন।

ক্ষণকাল পরে মুক্ত হাওয়ায় শুষ্ক শরীরে
ফিরে এলো উষ্ণতা।
ধীরে ধীরে প্রকৃতির কোলে
প্রতীচী দিগন্ত আবীর রঙে হলো রঞ্জিত।
অভূতপূর্ব রক্তিম আভায়
সু-সজ্জিত সাঁঝের রানী আসিলো ধীরে ;
দেখিতে দেখিতে
আঁধার ঘনায়ে এলো ক্ষণকাল পরে।
নিদ্রাহীন আখিঁপ্ললব
আচ্ছাদিত হলো কালিমাপল্লবে।




সাধুর নামে ভন্ডামী



ঘেন্না লাগে----
অন্যায়ভাবে চোখরাঙানী
ব্যালের মতো ফোসফোসানী !
ক্ষমতার দাপট ? তাওনা--
অনিয়ম আর ইচ্ছা-স্বাধীন কাজ করা ? তাওনা।
বলবো কথা দাম দেবেনা
অমন নেতা হতে চাইনা ।
অফিসের ওই কর্মকর্তা
সুইপার পিয়ন আরদালী,
মানতে কভু পারবোনা--
ওদের অনিয়ম আর খবরদারি।

ক্ষমতার দম্ভ ? অনিয়ম আর লোভ-লালসা ?
ছি-ছি ! ছি ! ওসবে করবি নাকো আশা ।
ঘুষ লেনদেন মদের নেশা
খেলবিনা আর জুয়া-পাশা--
ঘেন্নাভরে ওসবকিছু ছুঁড়ে ফেলা ;
তুই সু-নিয়মের হয়ে বশ
আয়রে ফিরে বিবেকেরই আপনশালা।

ঘেন্না লাগে----
নিজের কাজে ফাঁকি দিয়ে
অন্যের কাজে চামচামী আর চাটুকারিতা,
আইনের নামে যতসব বে-আইনি
ব্যক্তিত্বের অমর্যাদা আর মানহানি,
তাচ্ছিল্য, বজ্জাতি আর বেইজ্জতি
অন্তরে বিষ মুখে হাসি
যেন অমাবস্যায় আকাশ-শশী ;
গায় মানেনা আপনি মোড়ল--
চোরের মায়ের বড় গলা
যেন, কানে বাজে বিষের বাঁশি !

পেটের দায়ে নকরি করিস,
তাহে চাকরি বলে জাহিরী ক্যান ?
যা' করিস আর তা' করিস
কর্তব্যে করবিনা যে অবহেলা ।
চাকরী গেলে থাকবেনা আর বাহাদুরী
জুটবেনা আর কাঁচাকলা ;
আদর তখন করবেনা কেউ
ভাই-বোন আর গিন্নি-শালা।

স্কুল কলেজ পাঠশালা
নয়তো কারো দূর্নীতি আর অনিয়মশালা ;
ইচ্ছা-খুশি যাওয়া-আসা
এটা নয়তো কারো স্বাধীনশালা,
গো-রাখালের গো-শালা
কর্মকর্তার কর্মশালা
সব শালা নয় একই শালা ;
না মানলে নিয়ম-কানুন
সময়মতো ঝুলবে তালা ।

ঘেন্না লাগে----
নষ্টামির ওই প্রেম-প্রীতি !
তোর নষ্টচোখে শরীর দেখে
ভাবাবেগে ব্যকুল হয়ে
বলবি তাকে ভালোবাসা ?
ওযে সাধুর নামে ভন্ডামী সব --
তুই দেখাসনে আর ভাবভঙ্গি
খেলিসনা আর ছলের খেলা ;
পোশাকে তুই সাধু সেজে
করবি যতো শয়তানি আর শঠতামী ?
সতের পোশাক পরে এবার--
নিয়ম মেনে কাজ কর গিয়ে তোর কর্মশালা ,
মনকে রেখে সৎশালা !




হৃদয়ের ফল্গুধারায়



হৃদয়ের ফল্গুধারায় প্রবহমান স্রোতের টানে
স্তুপাকারে জমাকৃত জঞ্জালগুলো পরিস্কার হলো !
ফুরফুরে বাতাসের সাথে বিষণ্ণ মনটাও সতেজ উন্মুখ--
পড়ন্ত বিকেলের ঠান্ডা হাওয়াটা
এই সদ্যপ্রসূত মুক্তমনের সহ্যক্ষমতার বাইরে।
ঘুম ক্লান্তির মাঝে হৃদয়দীপ্তিকে ডেকেছি বারেবারে
তেমন কোন সাড়া পাইনি !
অস্ফুট স্বরে কেমন যেনো শুনতে পেলাম--
'ও ঘরের আলোটা জ্বেলে দিয়ে আসি' !

দিবাবসানে ঘড়ির কাঁটাকে স্বাক্ষী রেখে
সময় চলেছে এগিয়ে--
যামিনী তার আয়ুষ্কাল সবেমাত্র অর্ধেকটা পেরিয়েছে ;
ঝিঁঝিরা আজও নূপুরের শব্দে
তার তারুণ্যে সাঁড়া জাগায়।
নিশার নিষ্কলঙ্ক কালিমায় অবসন্ন দেহে
অর্ধ-নিমীলিত নয়নে স্বপ্ন দেখি শুধুই আমি।

অকস্মাৎ তমসার ভাঙ্গিলো ঘুম,
মৃদুমন্দ গতিতে রজনী চলিলো ফিরে--
পাখির কলতানে চক্ষুরুন্মীলনে
হাল্কা আঁধারে দেখি, প্রভাত আসিছে ধীরে--
রজনীর বিদায়ে রবির আগমনে
হঠাৎ, ঝলকিয়া উঠিলো ভানু
বাঁশরীর প্রেমে মজিলো কানু ,
ব্যস্ততা বাড়িলো দিকেদিকে।



(ওএস/এস/ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test