E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কাজী হাসান ফিরোজ এর কবিতা

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ০৭ ১১:২৩:৪৯
কাজী হাসান ফিরোজ এর কবিতা






 



ডোর কাটা ঘুড়ি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

পাখিরা ডিম পাড়ে জীবনের প্রয়োজনে ,
অখণ্ড মনোযোগে তা'দেয় কর্তব্য জ্ঞানে ,
উড়ন্ত ছানাদের প্রতি
পাখির কোনো অধিকার থাকেনা।

প্রতিটি মানুষের অভিন্ন রংয়ের ছায়া পিছনে ঘোরে
মানুষ গুলো হয় স্বতন্ত্র রকম ,
ছায়ার প্রতি মানুষের ভালোবাসা জন্মেনা ,
ছায়ায় মানুষের কোনো ছায়া থাকেনা।

ভালোবাসার বর্ণিল ঘুড়ি
ডোর কেটে লাটাইহীন মাতাল হাওয়ায় দোলে।


অসিয়তনামা
..............................................................................

আমাদের বুভুক্ষু পেটে শুধু পানি দাঁড়ায় না এক ফোঁটাও !
একটুকরো বিস্কুট কিংবা একটা রুটি হলে
বেশ কয়েক গ্লাস পানি দাঁড়িয়ে যায়।

আমরা অকৃতজ্ঞ নই ,
উঁইপোকার মতো আকাশমুখি উঠিনা কখনো ,
আমাদের একমুঠো ভাত আর এক চিমটে নুন দিলে
গুন গাইতে কার্পণ্য করিনা।

ভুল করলে আমরা দোষ স্বীকার করি,
সংশোধনাগারে পাঠানোর প্রয়োজন হয় না,
ধর্মের নামে শপথ করে মিথ্যার চর্চা করিনা।
খুন রাহাজানির বৈধতা দেইনা ধর্মের অজুহাতে,
ধর্মের বর্ম পরিনা,
দেশ বিপন্ন হলে জীবন বাজি রাখি।

আমাদের ক্ষুধা আছে, তৃষ্ণা আছে,
যেটা বড়জোর কটা রুটি একগ্লাস পানির ;
শুনেছি বাঘ তার চাহিদার অতিরিক্ত শিকার করেনা,
কিন্তু মৌমাছির সঞ্চয় খায় মৌয়াল।

তোমরা কোন প্রজাতির প্রাণী ?
তোমাদের ভয়াল থাবায় প্রকম্পিত সুন্দরবন !
ব্যাংক, বীমা, শেয়ারবাজার, সব তোমরা গিলে খাচ্ছো !
তোমাদের নখর আর দাবিয়োনা, সবুজ বনভূমিকে করোনা মরুভূমি -

পশুকেও থামানোর ভাষা আছে, তোমাদের কীসের দোহাই দেবো ?
তোমরা ইঁদুর হলে হ্যামিলিয়নের বাঁশিওয়ালার স্মরণ করি !
সাপ হলে মনসার দুয়ারে যাই !

দোহাই তোমাদের, আমার মায়ের পরনের কাপড়টুকুও খুলে নিওনা ;
শেষ বিকেলের সূর্যের দিকে তাকিয়ে দেখো, দাপুটে ভাব নেই তার।
পাঁচতারা হোটেলে তোমরা যে সন্তান জন্ম দিচ্ছো-
তার খোঁজ রেখেছো কখনো ?
তোমাদের সন্তানেরাই আমার টিএসসি নামের কাবার বুক অপবিত্র করছে।

প্রার্থনা আমাদের শেষ অস্ত্র, চেম্বারের শেষ গুলিটি ছুড়ে দিলাম ---
দেশ বাঁচাতে তোমাদের ধবংস কামনার বিকল্প নেই -

এতো ধৈর্য্য তোমাকে কে দিলো মা ?
বঙ্গোপসাগরের প্লাবনে ভসিয়ে দাও -
'একাত্তর থেকে জমা কালিমা ধূয়ে যাক,
ভেসে যাক মহাখাদকেরা।

হে আমার প্রিয় সন্তানেরা -
ওদের কবরের পাশে আমাকে ভূলেও কবর দিওনা !
জায়গা না পাও সাগরে ভাসিয়ে দিও -
মৃত্যুর আগে যদি অন্ধ থাকি -
ওদের চোখে যেন না দেখি পৃথিবী !


প্রেম

______________________

দিনে গুনে গুনে অন্তত শতবার
আমার ঠোঁট স্পর্শ করে চায়ের পেয়ালা।
চুমুতে চুমুতে ক্ষয় হয় হাজারো সিগারেটের শরীর ,
বিরতিহীন স্ট্রেতে পোড়াই সিগারেটের ভগ্নাংশ ,
আকাশপানে ওড়া ধোঁয়া দেখি আয়েশী ভঙ্গিতে।
আসক্তি , সহাবস্থানে , প্রেম হলোনা আমার !
প্রেমিকার প্রয়াণে বহুচারী মনুষ্যকূলে
নমস্য প্রেমের অমর কীর্তি গড়ে !
পাখিকূলে জোড়ভাঙ্গা কাক আর বাঁধেনা সংসার।
কখনো তোমাকে স্পর্শ করিনি ,
স্বপ্নেও ছুঁইনি তোমার গোলাপী ঠোঁট।
তোমার হৃদয় ছুঁয়েছি ,
আর আমার হৃদয় চিরে বয়ে গেছে অসংখ্য নদী।
আমার ধমনি মানচিত্রে
প্রবাহিত নদীতে বরফের ছোঁয়া নেই ,
আগুন-মরিচের জারিত শ্রোত প্রবাহিত হয়।

___________________Π_____________________

টোকাই


শহরের শেষ বাড়িটিও যখন ঘুমিয়ে পড়ে
তখনও আমরা জেগে থাকি।
কখনো কখনো জেগে জেগে
সারারাত ভ্রাম্যমাণ যৌন শিল্পীদের শিল্পকলা দেখি।
সাক্ষ্য দেয়ার ক্ষমতাহীন সাক্ষী থাকি
পুলিশ ও নিশিরাণীদের টাকা ভাগাভাগির দৃশ্যের।
রাজপথ থেকে সচিবালয় সবখানেই আমাদের অবাধ বিচরণ।
আমরা শহরের অবৈতনিক পরিচ্ছন্নতা কর্মী।
আমরা মামাদের প্রিয় ভাগ্নে।
মামাদের রঙ্গিণ পৃথিবী দর্শনের চশমার যোগানদার আমরাই।
পার্কে প্রতিদিন নতুন সম্পর্ক গড়া এবং
ভাঙ্গার নীরব সাক্ষী থাকি।
রাতের ক্লাবপাড়ায় প্রতিদিন
সুশীলেরা করে নিশিকাব্যনাট্য মঞ্চায়ন।
স্বপ্নেও আমার বাবা-মা হয়না এমন সুশীল।
আমরা রাজনৈতিক দলের প্রধান অলংকার।
মাঝে মধ্যে আমরা জঙ্গিদের প্রধান ভরসাস্থল হয়ে উঠি।
পটুয়া র'নবী আমাদের নাম দিলো টোকাই।
রাজপথে থাকি---
রাজা - বাদশা নাম দিলে এমন কী ক্ষতি হতো ?


(কেএফ/এস/ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test