E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মেসি কি ম্যারাডোনাকে ছুঁতে পারবেন?

২০১৪ জুলাই ১৩ ১০:০১:৩২ ২০১৪ জুলাই ১৩ ০০:০০:০০
মেসি কি ম্যারাডোনাকে ছুঁতে পারবেন?

ক্রীড়া প্রতিবেদক : রেকর্ড টানা চারবারের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার। ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে জিতেছেন একাধিক শিরোপা। গড়েছেন নানা রেকর্ড। গোলের পর গোল করাই যেন তার ধ্যানজ্ঞান। মায়াবী বা পায়ের জাদুতে মোহিত গোটা বিশ্বের সমর্থক। অনেকে তাই বলেন, তিনি এ গ্রহের নয় ভিনগ্রহের এলিয়েন। সর্বকালের সেরা ফুটবলার কি তাহলে মেসি? এমন প্রশ্ন আসতেই বাদ সাধে একটি প্রসঙ্গে। তিনি তো একটি বিশ্বকাপই জেতেননি। যা জিতে কিংবদন্তির তালিকায় রয়েছেন পেলে-ম্যারাডোনারা। সেই কাতারে যেতে হলে একটি বিশ্বকাপ অবশ্যই দরকার আর্জেন্টাইন এই অধিনায়কের। কে জানে একটি বিশ্বকাপের ট্রফি, মেসিকে অমরত্বই এনে দেবে ফুটবল বিশ্বে। তখন হয়তো সাবেক গ্রেটরাও পিছিয়ে পড়বেন তার অর্জন থেকে।

তবে অতদূরে চোখ নিতে চাচ্ছে না ভক্ত-সমর্থকরা। তাদের দাবি, আপাতত ম্যারাডোনাকেই যেন ছুঁতে পারে মেসি। তাতেই পূরণ হবে পরম আরাধ্যের স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের একেবারে দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন লিওনেল মেসি। রবিবার ব্রাজিল বিশ্বকাপ ফাইনালে মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা। প্রতিপক্ষ ভয়ঙ্কর জার্মানি। যাদের কাছে হেরেই শেষবারের মতো ফাইনালে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল লা আলবিসেলেস্তেদের। সেটা ১৯৯০ সালে। ওই বিশ্বকাপেও আর্জেন্টিনার অধিনায়ক ছিলেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। কিন্তু ফাইনালে পারেননি। নয়জনের দল নিয়েও ম্যারাডোনা লড়েছিলেন জার্মানদের বিরুদ্ধে। কিন্তু শেষের দিকে রেফারির এক বিতর্কিত পেনাল্টি সব শেষ করে দেয়। জার্মানি জেতে ১-০ গোলে। তবে এর আগের বিশ্বকাপটাই অনুপ্রেরণা হিসেবে নিতে পারে মেসি শিবির। যেবার বলতে গেলে একক প্রচেষ্টায় আর্জেন্টিনাকে শিরোপা জিতিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের ফাইনালেও আর্জেন্টিনা পেয়েছিল জার্মানিকে। কোয়ার্টার ও সেমিফাইনালে জোড়া গোল করে দলকে ফাইনালে তোলা ম্যারাডোনা চুমু এঁকেচিলেন সোনালি ট্রফিতে। যদিও ফাইনালে গোলের দেখা পাননি ম্যারাডোনা। বুরুচাগা, ভালদানো ও ব্রাউনের গোলে জার্মানিকে ৩-২ গোলে পরাজিত করেছিল আর্জেন্টিনা। তবে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব জিতেছিলেন ম্যারাডোনাই। অল্পের জন্য পাননি গোল্ডেন বুট। তার গোল ছিল পাঁচটি। ছয় গোল করে এই অ্যাওয়ার্ড জেতেন ইংল্যান্ডের গ্যারি লিনেকার।

ম্যারাডোনার মতোই এবারও মেসির অবস্থা। ছয় ম্যাচে এখন পর্যন্ত করেছেন চার গোল। গোল্ডেন বুটের দৌড়ে অনেকটাই পিছিয়ে তিনি। কারণ ছয় গোল করে শীর্ষে কলম্বিয়ার হামেস রদ্রিগেজ। পাঁচ গোল করে দ্বিতীয় স্থানে জার্মানির থমাস মুলার। তবে গোল্ডেন বল জিততে পারেন মেসি, সেটা হবে যদি বিশ্বকাপটাও জেতেন তিনি। গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচে করেছেন চার গোল। আর্জেন্টিনার এই তিন জয়ই এসেছে মেসির হাত ধরে। তবে নক আউট পর্বের তিন ম্যাচে পাননি একটি গোলের দেখাও। দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয়ের নায়ক ছিলেন অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া। কোয়ার্টার ফাইনালের নায়ক গঞ্জালো হিগুয়েন। সেমিফাইনালে গোল পাননি কেউই। হল্যান্ডের বিরুদ্ধে গোলশূন্য থাকা ম্যাচে টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনা জেতে ৪-২ ব্যবধানে। তবে এই তিন ম্যাচে গোল না পেলেও প্লে-মেকারের দায়িত্ব বেশ ভালোমতোই পালন করেছেন মেসি। অতিমাত্রায় মার্কিংয়ে থাকা মেসি তাও মাঝে মধ্যে তেড়েফুঁড়ে আক্রমণ করেছেন প্রতিপক্ষের রক্ষণে। তবে গোলের খেলা ফুটবল। মেসি গোল করুক এমনটিই চায় সমর্থকেরা। নিজের সেরা খেলাটিই কি ফাইনালের জন্য তুলে রেখেছেন বার্সেলোনার এই ক্ষুদে ফুটবল জাদুকর?

প্রতিপক্ষ জার্মানি বলেই ভয়। যারা সেমিফাইনালে স্বাগতিক ব্রাজিলকে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছে। আর্জেন্টিনা কি পারবে জার্মান গতি রুখে দিতে? ম্যারাডোনা হতে গেলে সেই কঠিন কাজটি করতেই হবে মেসিকে। না হলে ‘এত কাছে তবু দূরের’ যন্ত্রণায় ভুগতে হবে মেসিকে। দুই যুগ পর ফাইনালে এসেছে আর্জেন্টিনা। কে জানে পরবর্তী ফাইনালের জন্য কত বছর অপেক্ষা করতে হবে তাদের। ফলে এই সুযোগটি কাজে লাগাতে মরিয়া ম্যারাডোনার উত্তরসূরিরা।

কাঙ্ক্ষিত শিরোপা লড়াইয়ের এই ফাইনালের আগে কথা বলেছেন আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বর দিয়েগো ম্যারাডোনা। মেসিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেছেন, সে যদি আমাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে, তাহলে তাকে আমি লাল গালিচা সংবর্ধনা দেব। পাশাপাশি মেসিকে বিশ্বকাপ জেতার অনুপ্রেরণাও দিয়েছেন এই ফুটবল গ্রেট। ‘দে জুরদা’ এক টেলিভিশন প্রোগ্রামে ম্যারাডোনা বলেছেন, ‘আগামী রবিবার মেসি যদি ম্যারাডোনাকে ছাড়িয়ে যায়, তাহলে আমি তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেব’। পরে আরও বলেছেন, ‘সে মেধাবী খেলোয়াড়, সে জানে ম্যাচে কী করতে হবে। তবে আমার শঙ্কা অন্যখানে। মেসি এখন অনেকটাই ক্লান্ত। তবে এই মুহূর্তে ক্লান্ত হলে চলবে না। আমি মনে করি সে সবই বুঝতে পারছে।’ ফাইনালে প্রতিপক্ষ জার্মানি। কী করতে হবে তা ম্যারাডোনাও জানেন। তবে তিনি বলেছেন, ‘জার্মানি-অসম্ভব নয়’। তিনি আরও বলেছেন, ‘আর্জেন্টিনা নিজেদের কাজটি করতে পারে। আমরা দ্বিতীয় রাউন্ডে আলজেরিয়ার বিরুদ্ধে দেখেছি জার্মানিকে (১-০)। আবার সেমিফাইনালে দেখেছি ব্রাজিলের বিরুদ্ধেও (৭-১)। দুই ম্যাচে দুই চিত্র। তবে আর্জেন্টিনা এগিয়ে যাবে নিজ সাহসেই। আবারও গর্জে ওঠার পালা। রাখতে হবে জার্সির মান। শিরোপা আনতেই হবে। লড়াইটা ইউরোপ বনাম লাতিন। শুধু নিজ দেশ বলে নয়, নিজ মহাদেশের পক্ষেই কথা বলব আমি’।

(ওএস/এইচআর/জুলাই ১৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test