E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

আশার বিশ্বকাপের হতাশার সমাপ্তি

২০১৯ জুলাই ০৫ ২৩:৩৪:৪৯
আশার বিশ্বকাপের হতাশার সমাপ্তি

স্পোর্টস ডেস্ক : আশা নয়, বলা চলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রাথমিক লক্ষ্যই ছিলো বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলা। কিন্তু গত মঙ্গলবার ভারতের কাছে হেরে শেষ হয়ে যায় সে সম্ভাবনা। সেমির স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ার পর আশা ছিলো পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতে অন্তত বিশ্বকাপের সমাপ্তিটা ইতিবাচকভাবে করা।

কিন্তু কিসের কি! ক্রিকেটের মক্কাখ্যাত ঐতিহাসিক লর্ডসে পাকিস্তানের কাছে যেন পাত্তাই পেল না মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। পারলো না বিশ্বকাপের শেষটা মনের মতো করতে। হতাশাজনক বোলিং-ফিল্ডিংয়ের পর ব্যাটিংটাও আশানুরূপ না হওয়ায়, শেষ ম্যাচের ফলটাও এসেছে নেতিবাচক।

ওপেনার ইমাম উল হকের সেঞ্চুরি ও বাবর আজমের ৯৬ রানের ইনিংসে করা পাকিস্তানের ৩১৫ রানের জবাবে বাংলাদেশের ইনিংস থেমেছে মাত্র ২২১ রানে। দলের ৯৪ রানের বড় জয়ে বল হাতে ৬ উইকেট নিয়েছেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। প্রায় ৫ বছর পর ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে হারাতে পারল পাকিস্তান।

তবে এত বড় জয়ের পরেও সেমিফাইনালে খেলার আশা পূরণ হচ্ছে না পাকিস্তানের। কেননা ৯ ম্যাচ শেষে তাদের পয়েন্ট নিউজিল্যান্ডের সমান ১১ হলেও, নেট রানরেটে এগিয়ে থাকার সুবাদে চতুর্থ দল হিসেবে শেষ চারের টিকিট পেয়েছে কিউইরাই। সেমিফাইনালে তাদের খেলতে হবে টেবিলের শীর্ষে থাকা দলের বিপক্ষে।

৩১৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার সৌম্য সরকার (২২) আর তামিম ইকবাল (৪) সেভাবে দলকে এগিয়ে নিতে পারেননি। এরপর হতাশ করেছেন মুশফিকুর রহীমও (১৪)। তবে চতুর্থ উইকেটে দারুণ ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন সাকিব আল হাসান আর লিটন দাস।

তাদের ৫৮ রানের জুটিটি শেষ পর্যন্ত ভেঙে দেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। ৪০ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ৩২ রান করা লিটনকে স্লোয়ার ডেলিভারিতে আউট করেন পাকিস্তানি এই পেসার। পরের সর্বনাশটাও করেন তিনি।

চলতি বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সাকিব আল হাসান আরও একটি ফিফটি তুলে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন বড় ইনিংসের পথে। কিন্তু তার ৭৭ বলে ৬ বাউন্ডারিতে গড়া ৬৪ রানের ইনিংসটি থামিয়ে দেন শাহীন আফ্রিদি, উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়ে।

তবে আউট হওয়ার আগে বিশ্বের মাত্র তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে ৬০০+ রান করার রেকর্ড গড়েন সাকিব। ৮ ইনিংসে প্রায় ৮৭ গড়ে ৬০৬ রান করেছেন সাকিব। তার আগে শুধুমাত্র শচিন টেন্ডুলকার ও ম্যাথু হেইডেনই পেরেছিলেন এক আসরে ৬০০'র বেশি রান করতে।

সাকিবের বিদায়ের পর বাংলাদেশের অলআউট হতে বেশিক্ষণ লাগেনি। শাহীন শাহ আফ্রিদি একাই নেন ৬ উইকেট, গড়েন বিশ্বকাপের ইতিহাসের কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার হিসেবে ফাইফার নেয়ার রেকর্ড। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের পক্ষে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডটাও গড়েন তিনি।

শেষদিকে বাংলাদেশের পক্ষে ব্যাট হাতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৩১, মোসাদ্দেক হোসেন ১৬ ও মাশরাফি বিন মর্তুজা করেন ১৫ রান। টাইগারদের ইনিংস থামে ৪৪.১ ওভারে ২২১ রানে। জুটে ৯৪ রানের বড় পরাজয়।

এর আগে মোস্তাফিজুর রহমানের শেষ সময়ের বোলিং ঝলকের পরও ৯ উইকেটে ৩১৫ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পেয়ে যায় পাকিস্তান। সেঞ্চুরি করেন দলটির ওপেনার ইমাম উল হক।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তানের শুরুটা তেমন ভালো হয়নি। বাংলাদেশি বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে বেশ অস্বস্তিতেই ছিল তারা। স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজকে দিয়ে বোলিং উদ্বোধন করান টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি।

প্রথম ওভার থেকে মাত্র ১ রান দেন মিরাজ। ৭ ওভারে আসে মাত্র ২৩ রান। ইনিংসের অষ্টম ওভারে নিজের চতুর্থ ওভার করতে এসে দ্বিতীয় বলেই পাকিস্তানের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ফাখর জামানকে মিরাজের ক্যাচ বানান সাইফউদ্দীন।

কিন্তু এরপর দ্বিতীয় উইকেটে বড় জুটি গড়ে তুলেন ইমাম উল হক আর বাবর আজম। ১৫৭ রানের এই জুটিটি ভাঙেন সেই সাইফউদ্দীনই। সেঞ্চুরির দোরগোড়ায় পৌঁছে যাওয়া বাবর আজমকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন টাইগার পেসার। ৯৮ বলে ১১ বাউন্ডডারিতে বাবর তখন ৯৬ রানে।

তবে ১৮০ রানে ২ উইকেট হারানোর পর আরও একটি জুটি পায় পাকিস্তান। তৃতীয় উইকেটে ইমাম আর মোহাম্মদ হাফিজ তুলেন ৬৬ রান। এই জুটি ভাঙার পরই বেশ কয়েকটি উইকেট তুলে নিয়েছে টাইগাররা।

ইমাম উল হক সবেমাত্র সেঞ্চুরিটা তুলেছেন। এক বল পরই মোস্তাফিজের দুর্দান্ত এক ডেলিভারি ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে হিটউইকেট হন পাকিস্তানি ওপেনার। ১০০ বল মোকাবিলায় গড়া তার কাটায় কাটায় ১০০ রানের ইনিংসটিতে ছিল ৭টি বাউন্ডারির মার।

পরের ওভারে এসে মেহেদী মিরাজ তুলে নেন আরেক সেট ব্যাটসম্যান হাফিজকে (২৭)। সুইপ করতে গিয়ে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ারে সাকিবের সহজ ক্যাচ হন তিনি।

১০০তম ওয়ানডে উইকেট হাত দিয়ে ডাকছিল মোস্তাফিজকে। খুব বেশি দেরি করেননি কাটার মাস্টার। আগের ওভারে ইমামকে ফিরিয়েছেন, পরের ওভারে হারিস সোহেলকে (৬) সৌম্য সরকারের ক্যাচ বানিয়ে মাইলফলক স্পর্শ করেন মোস্তাফিজ।

এর মধ্যে আবার সাউফউদ্দীনের ইয়র্কারে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন পাকিস্তানি অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ (২)। ওয়াহাব রিয়াজকেও (২) ফেরান এই পেসারই, দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে বোল্ড করে। তবে ইমাদ ওয়াসিম একটা প্রান্ত ধরে মেরে খেলছিলেন।

৪৮তম ওভারের প্রথম বলেই অসাধারণ ক্যাচ ধরেন মোস্তাফিজ। টাইগার পেসারকে সোজা ব্যাটে খেলতে গিয়েছিলেন শাদাব খান। এক হাতে দুর্দান্ত এক ফিরতি ক্যাচ নিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন মোস্তাফিজ।

তবে পাকিস্তানের কাজের কাজটা করে দিয়েছেন ইমাদ ওয়াসিম। ২৬ বলে ৬ চার আর ১ ছক্কায় ৪৩ রানের এক ঝড় তুলে ইনিংসের শেষ ওভারে মোস্তাফিজের শিকার হন তিনি।

এই মোস্তাফিজই ইনিংস শেষে টাইগারদের সেরা বোলার। ৭৫ রান খরচ করলেও তার নামের পাশে ৫টি উইকেট। ৩টি উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দীন।

(ওএস/এসপি/জুলাই ০৫, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test