E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

'১১ বাঙালির টিম গর্বিত করেছে'

২০১৫ মার্চ ১৯ ১৪:০৬:১৬
'১১ বাঙালির টিম গর্বিত করেছে'

স্পোর্টস ডেস্ক, ঢাকা : ব্রিসবেন, সিডনি, ক্যানবেরা, মেলবোর্ন। এক এক শহর এক এক রকমের এবং নিজের নিজের মতো করে অদ্ভুত সুন্দর। আর অস্ট্রেলিয়ার গাঁ-গঞ্জ বা মফস্বলের মতো এত জনহীন, এত সবুজ আর দেখেছি বলে মনে হয় না। এক শহর থেকে আর এক শহরে যেতে যেতে মনে মনে কত যে বাড়ি, বাগান আর জঙ্গল কিনে ফেলতাম তার হিসেব নেই। মেলবোর্নে এক পাহাড়ের উপর একজন শিল্পী একা একা বিস্তর ভাস্কর্য রচনা করে পাহাড়ের গায়েই সাজিয়ে রাখতেন। কোনো দর্শক বা পয়সাকড়ির ধান্ধা ছিল না।

কালক্রমে সেটা এখন এক দ্রষ্টব্য স্থান। কাফে হয়েছে, বিশ্রামাগার হয়েছে, সরকার সযত্নে রক্ষা করছে সেই সব ভাস্কর্য এবং সেখানে ট্যুরিস্টদের আনাগোনারও অভাব নেই। আর সন্ধের কাছাকাছি সময়ে মেলবোর্নের সমুদ্রসৈকতে সবাই যায় বিশেষ প্রজাতির ছোট ছোট পেঙ্গুইন দেখতে। হাজার হাজার পেঙ্গুইন দু’দিন-তিন দিন সমুদ্রের গভীরে চলে যায় মাছ সংগ্রহ করতে। তাদের সন্তানদের জন্য পেটে মাছ ভরে নিয়ে আসে। তার পর তটভূমিতে নিজের নিজের ঘরে ফিরে বাচ্চাদের কাছে সেই মাছ উগরে দেয়। তারাও মহানন্দে খায়।

বলতে গেলে এক এক শহরের এক এক মজা এবং বহু দ্রষ্টব্য। যার হিসেব নেই। দেশটা ক্রিকেটের দেশ, টেনিসেরও। এক বন্ধু ব্র্যাডম্যানের বাড়ি নিয়ে যেতে চেয়েছিল। আমি বলেছিলাম, শুধু বাড়ি দেখে কী হবে? তাই যাইনি।

বিশ্বকাপ এবার অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডে। অনেকগুলি ম্যাচ হয়ে গিয়েছে। নক আউট দরজায় কড়া নাড়ছে। আর এখন ভারতীয়দের অধিকাংশই শুধুমাত্র ক্রিকেটকেই ধ্যানজ্ঞান করে নিয়েছে। কেন তা কে জানে! ভারতে ক্রিকেটের এই জনপ্রিয়তা গোটা ক্রিকেট-বিশ্বের কাছেও বিস্ময়। এবং এই জনপ্রিয়তা ভারতকে প্রায় ক্রিকেট-বিশ্বের এক প্রধান শক্তিতে পরিণত করেছে। আমার বিশ্বাস, ভারতে ক্রিকেট খেলোয়াড়রা যত টাকা রোজগার করে, অন্য দেশের খেলোয়াড়রা ততটা পারে না।

যত দিন সৌরভ ভারতীয় টিমে ছিলেন, প্রথমে খেলোয়াড় এবং পরে অধিনায়ক হয়ে, তত দিন ভারতীয় টিমের খেলা টিভিতে দেখার সময় বাঙালির রক্তচাপ বেড়ে যেত। সৌরভ খেলা ছেড়ে দেওয়ার পর অনেক বাঙালিই এখন আর ক্রিকেট দেখে না। আমি অবশ্যই সৌরভের প্রবল ভক্ত ছিলাম। তবে ক্রিকেট আমার কাছে এখনও আলুনি লাগে না। অনেকে ওয়ান ডে বা টি-টোয়েন্টি নিয়ে নাক সিঁটকোয়। আমার তেমন শুচিবায়ু নেই। আমি তিন ফরম্যাটেরই ভক্ত।

ভারতীয় ক্রিকেট দলে বরাবরই বাঙালির অভাব। এক সময়ে পঙ্কজ রায় ছিলেন সবেধন নীলমণি। তার পর এক-আধ জন বাঙালি একটা দুটো টেস্ট খেলেই সরে গিয়েছে। যে টিম অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছে তাতেও কোনো বাঙালিকে খেলতে দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু এগারো জন বাঙালি একটা টিমে কী দুর্ধর্ষই না খেলে দিচ্ছে মাঝে মাঝে। ইংল্যান্ডকে যেভাবে হারালো তাতে তাজ্জব হয়ে গিয়েছি। হয়তো শেষরক্ষা হবে না, তবু এগারো বাঙালির টিম বাংলাদেশ আমাদের যথেষ্ট গর্বিত করেছে।

ধোনিকে ক্যাপ্টেন হিসাবে আমার বেশ পছন্দ। ঠান্ডা মাথা, বিচক্ষণ। আর টিকিওয়ালা ধবন বা খোঁচা দাড়িওয়ালা কোহলি। গ্রুপের খেলায় ছন্দটা ম্যাচের ছন্দটাই জিতে গিয়েছে। কিন্তু মুশকিল হলো, এত ভালোর পরই আবার একটা ঝটকা না লেগে যায়! বরং এক-আধটা হেরে রাখলে জেদটা হয়তো আর একটু বাড়ত।

ভারতীয় দলের বোলারদের নিয়ে আমার একটু সন্দেহ ছিল। টেস্ট সিরিজে তাদের ভেদশক্তি যথেষ্ট প্রশ্নের মুখে পড়েছিল। পেস বা স্পিন কোনওটা তেমন কার্যকর হয়নি। কিন্তু এখন তাদের অন্য চেহারা। এখনকার খেলার নিয়মকানুন এবং সাজসরঞ্জাম সবই ব্যাটিং সহায়ক। দিন দিন বোলারদের কাজ কঠিনতর হচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে ভারতীয় বোলাররা বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত যে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে তা বিস্ময়কর।

ভারত বিশ্বকাপ জয় করবে কি না কে জানে! আমাদের প্রত্যাশা তো তাই। আর ধারাবাহিক ভালো খেলার ফলে যদি আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে থাকে তবে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ধরাশায়ী করা তেমন শক্ত নয়। তবে আমি তাকিয়ে থাকব ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচে। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

(ওএস/পি/মার্চ ১৯, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test