E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ফিরে দেখা গত ১০ বিশ্বকাপের ফাইনাল

২০১৫ মার্চ ২৮ ২০:৪১:৫৪
ফিরে দেখা গত ১০ বিশ্বকাপের ফাইনাল

স্পোর্টস ডেস্ক, ঢাকা : সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আর মাত্র কয়েকঘন্টা পরই ক্রিকেট বিশ্ব পেতে যাচ্ছে নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। তার আগে চোখ রাখা যাক এর আগে অনুষ্ঠিত ১০টি বিশ্বকাপ ফাইনালের দিকে। যেখানে নিজেদের নিংড়ে দিয়ে আবার একেকজন হয়ে উঠেছেন মহানায়ক হিসেবে।

১৯৭৫: ওয়েস্ট ইন্ডিজ-অস্ট্রেলিয়া (ওয়েস্ট ইন্ডি জয়ী ১৭ রানে)

তখন ওয়ানডে ফরম্যাটটা ছিল একেবারেই নতুন। ওয়ানডে ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হলো মাত্র ৫ বছর আগে। ঠিক এই সময়টাতেই যাত্রা শুরু করলো ক্রিকেট বিশ্বকাপ। দুই শক্তিশালী দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ-অস্ট্রেলিয়া যথারীতি ফাইনালে উঠলো। অবশ্য এর আগে গ্রুপ পর্বে এই অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটে পর্যদুস্ত করে ক্যারিবিয়রা।

ফাইনালে ৫০ রানের মধ্যেই ৩ উইকেট হারিয়ে রীতিমতো কাঁপছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন স্বয়ং অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড। তিনি ৮৫ বলে খেললেন ১০২ রানের ইনিংস। তখনকার দিনে এত কম বলে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়াটা ছিল বিস্ময়ের। বলা চলে লর্ডসে অসি বোলারদের ওপর একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন লয়েড। আর এতেই অস্ট্রেলিয়ার সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৯২। এই রান তাড়া করে আর জেতা সম্ভব হয়নি অজিদের। ফলে লয়েডের সৌজন্যে প্রথম বিশ্বকাপ ঘরে তুললো ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

১৯৭৯: ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ইংল্যান্ড (ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৯২ রানে জয়ী)

চার বছর পর আরেকটি বিশ্বকাপের ফাইনাল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে এবার অস্ট্রেলিয়ার বদলে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। ভেন্যু ওই একই, ঐতিহ্যবাহী লর্ডস। এবার নায়ক ক্লাইভ লয়েডের জায়গায় ভিভ রিচার্ডস।

অস্ট্রেলিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইংলিশরাও ক্যারিবীয়দের হাতে তুলে দিয়েছিল ব্যাট। আবারও সেই একই পরিস্থিতি, মারাত্মক ব্যাটিং বিপর্যয়ের শিকার হয়ে ৯৯ রানের মধ্যে ফিরে গেলেন গর্ডন গ্রিনিজ, ডেসমন্ড হেইন্স, আলভিন কালিচারন এবং অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড।

এরপর লর্ডসে রাজত্ব করলেন ভিভ রিচার্ডস। ১৫৭ বলে অপরাজিত ১৩৮ রানের অনিন্দ্য সুন্দর এক ইনিংস খেললেন তিনি। ভিভ এই ইনিংসটি সাজিয়েছিলেন এগার চার আর তিন ছক্কায়। স্কোরবোর্ডে ২৮৬ রান জমা করার পেছনে অবদান আছে কলিস কিংয়েরও (৮৬)। দারুন শুরু করেও তা ধরে রাখতে পারেনি ইংল্যান্ড। ঘরের মাঠে তাদের ৯২ রানের পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে।

১৯৮৩ : ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ভারত (ভারত ৪৩ রানে জয়ী)

দুর্ধর্ষ দল নিয়ে টানা তৃতীয়বার ফাইনালে উঠলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভেন্যু সেই লর্ডস। বরাবরের মতো এবারও প্রতিপক্ষ নতুন ভারত। সে সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টেক্কা দিয়ে ভারত বিশ্বকাপ ট্রফি জিতবে এমনটা ভাবাও ছিল যেন অন্যায়!

সেটা যে কতটা! ফাইনালে আগে ব্যাট করতে গিয়ে ভালভাবেই বুঝেছিল ভারত। কৃঞ্চমাচারী শ্রীকান্ত (৩৮) এবং মহিন্দর অমরনাথ (২৬) দাঁড়িয়ে না গেলে বড় লজ্জাই পেতে হতো কপিল দেবের দলকে।

১৮৩ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভয়ংকর সব ব্যাটসম্যানরা এক ফুৎকারে উড়িয়ে হ্যাট্টিক শিরোপা উদযাপন করবে এটাই ছিল পূর্বানুমান। কিন্তু আশ্চর্যনকভাবে ভারতীয় বোলারদের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছিলেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা। আর ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুটিয়ে গেল মাত্র ১৪০ রানে। অমরনাথ ১২/৩ এবং মদন লাল ৩১ রানে পেয়েছিলেন ৩টি করে উইকেট। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের পুরস্কার অমরনাথ পেয়েছিলেন ফাইনালের ম্যাচসেরা হয়ে।

১৯৮৭: অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড (অস্ট্রেলিয়া জয়ী ৭ রানে)

প্রথম তিনটি বিশ্বকাপেরই আয়োজক ছিল ক্রিকেটের আঁতুড় ঘর ইংল্যান্ড। চতুর্থ বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজক হলো ভারত-পাকিস্তান। অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের ফাইনালের আয়োজনের দায়িত্ব পড়লো কলকাতার ইডেন গার্ডেনের ওপর।

কদিন আগে সেমি ফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে ভারত হেরে যাওয়ায় ইডেনের ৭০,০০০ হাজার দর্শক গলা ফাটিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার জন্য। পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা ডেভিড বুন যথারীতি ফাইনালেও স্বরুপে। ৭৫ রান করার পাশাপাশি দুটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন জিওফ মার্শ এবং ডিন জোন্সের সঙ্গে। আর তাতেই অস্ট্রেলিয়া পেয়ে যায় ২৫৩/৫ রানে পুঁজি। চমৎকার শুরু করেও ৬ রানে হেরে দ্বিতীয়বারেরমত হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় ইংলিশদের।

১৯৯২ : পাকিস্তান-ইংল্যান্ড (পাকিস্তান জয়ী ২২ রানে)

১৯৮৭ বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরে গিয়ে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হওয়া ইংলিশরা আবার ফাইনালে উঠলো। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) এবার তাদের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। তাই প্রত্যাশাটাও আরও বেড়ে দ্বিগুণ হলো ইংলিশদের। টুর্নামেন্ট শুরুর দিকে যে তারা পাকিস্তানকে ৭৪ রানে গুড়িয়ে দিয়েছিল!

এবারই তো মোক্ষম সুযোগ শিরোপাল্লাসে ভাসার! কিন্তু বিধি বাম! ইংলিশদের আবার শিরোপা বঞ্চিত করলেন তরুণ ওয়াসিম আকরাম। ডেরেক প্রিঙ্গল ২৪ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে ফেরানোর পরও পাকিস্তানের স্কোর ৬ উইকেটে ২৪৯ রানে পৌঁছেছে, সেটা অধিনায়ক ইমরান খান (৭২), জাভেদ মিঁয়াদাদ (৫৮), ইনজামাম-উল-হক (৪২) এবং শেষের দিকে আকরামের ৩৩ রানের সৌজন্যে। বল হাতে ইয়ান বোথামকে শুণ্য রানে ফেরানো আকরাম আরও ২ উইকেট নিয়েছিলেন গতির সঙ্গে সুইং মিশিয়ে। ব্যাট হাতে ৩৩ রানের পর বল হাতে ৪৯ রানে ৩ উইকেটই ফাইনাল সেরার পুরষ্কার জিতিয়েছে আকরামকে।

১৯৯৬ : শ্রীলংকা-অস্ট্রেলিয়া (শ্রীলংকা ৭ উইকেটে জয়ী)

আবার বিশ্বকাপ ফিরলো উপমহাদেশে। এবার ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে আয়োজক হিসেবে যুক্ত হলো শ্রীলংকার নাম। ফাইনালের ভেন্যু লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়াম। উপস্থিত ৬২,০০০ দর্শক অবলোকন করেছিলেন কিভাবে ফেভারিট অস্ট্রেলিয়াকে ডুবিয়ে দিয়েছিল অরবিন্দ ডি সিলভার ব্যাট-বল।

অর্জুনা রানাতুঙ্গা টস জিতে ব্যাট তুলে দিলেন অসিদের হাতে। ৭ উইকেটে ২৪১ রান তাড়া করতে গিয়ে শুরুতেই দুই ওপেনার সনাৎ জয়াসুরিয়া এবং রমেশ কালুভিথারানাকে হারিয়ে ফেলে শ্রীলংকা।

অরবিন্দ ডি সিলভার বীরত্ব এখান থেকেই শুরু। অপরাজিত ১০৭ রানের ইনিংস খেলে লংকানদের চ্যাম্পিয়ন বানিয়ে তবেই মাঠ ছেড়েছিলেন তিনি। সহযোদ্ধা হিসেবে ডি সিলভা পাশে পেয়েছিলেন আসানকা গুরুসিনহা (৬৫) এবং রানাতুঙ্গাকে (৪৭*)। সাত উইকেটে বিশ্বকাপ জিতে গোটা ক্রিকেট বিশ্বকেই চমকে দেয় লংকানরা।

১৯৯৯ : অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান (অস্ট্রেলিয়া জয়ী ৮ উইকেটে)

দীর্ঘদিন পর বিশ্বকাপ ফাইনাল ফিরলো ক্রিকেটের মক্কা লর্ডসে। টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে স্টিভ ওয়াহর অস্ট্রেলিয়া। এবার প্রতিপক্ষ উপমহাদেশের আরেক প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। যারা পুরো টুর্নামেন্টেই দুর্দান্ত ক্রিকেট উপহার দিয়েছিল।

ফাইনালে টস জিতে পাকিস্তান আগে ব্যাট করে বিস্ময়করভাবে ১৩২ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। কোন ব্যাটসম্যানই ২৫ রানের বেশি করতে পারেননি। সেমিফাইনালের মতো ফাইনালেও শেন ওয়ার্ন ৪ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন ৩৩ রানে। অস্ট্রেলিয়ার জিততে সময় লাগে মাত্র ২০.১ ওভার। গোটা টুর্নামেন্টে খুব বেশি সুবিধা না করা ওয়ার্ন সেমি এবং ফাইনালে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতে বিরল কৃতিত্ব দেখান।

২০০৩ : অস্ট্রেলিয়া-ভারত (অস্ট্রেলিয়া ১২৫ রানে জয়ী)

এবার বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজক দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে এবং কেনিয়া। জোহান্সবার্গেও ওয়ান্ডারার্সে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার সামনে এবার ভারত। টস জিতে সৌরভ গাঙ্গুলি ব্যাট তুলে দিলেন রিকি পন্টিংয়ের হাতে।

প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ‘টিম ইন্ডিয়া’কে একাই শেষ করে দিয়েছিলেন অসি অধিনায়ক। একেবারে খুনে ইনিংস বলতে যা বোঝায় পন্টিং সেদিন তাই করেছিলেন ১২২ বলে ১৪০ রান করে। এর পাশে ডেমিয়েন মার্টিনের ৮৮ এবং অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ৫৭ রানের কল্যাণে স্কোরবোর্ডে ওঠে ৩৫৯ রান। এই রান টপকানো ভারতের জন্য ছিল দুঃসাধ্য।

২০০৭: অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলংকা (অস্ট্রেলিয়া ৫৩ রানে জয়ী)

ক্যারিবীয়ান দ্বীপপুঞ্জেও গিয়ে পাল্টালো না অস্ট্রেলিয়ার দাপট। আবার রিকি পন্টিংয়ের দল ফাইনালে। এবার তাদের সামনে সেই প্রতিপক্ষ যাদের কাছে ১৯৯৬ বিশ্বকাপ বিসর্জন দিতে হয়েছিল।

বৃষ্টিবিঘ্নিত ফাইনালে শ্রীলংকাতে ৫৩ রানে হারিয়ে সেই প্রতিশোধ নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। বার্বাডোজে আগে ব্যাট করে অজিরা তোলে ২৮১/৪ রান। ২০০৩ এর রিকি পন্টিংয়ের চেয়েও ভয়ংকর সুন্দর ইনিংস খেলেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (১০৪ বলে ১৪৯)। ফাইনাল জিততে মাহেলা জয়াবর্ধনের দলের ৩৬ ওভারে দরকার পড়ে ২৬৯ রান। কিন্তু লংকানদের থামতে হয় ৮ উইকেটে ২১৫ রানে। ২৮৭ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটিই ছিল গিলক্রিস্টের সেরা ইনিংস।

২০১১: ভারত-শ্রীলংকা (ভারত ৬ উইকেটে জয়ী)

শচীন টেন্ডুলকারের জন্য বিশ্বকাপ জিততে চাই। মহেন্দ্র সিং ধোনির দলের মধ্যে এই সংক্রমন ঘটিয়েছিল, গোটা ভারতবর্ষেও। মহেন্দ্র সিং ধোনির টিম ইন্ডিয়া টেন্ডুলকারের অধরা স্বপ্ন পুরণ করলেন একই সঙ্গে ২৮ বছরের শিরোপা বন্ধ্যাত ও ঘুচিয়েছেন।

মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে মাহেলা জয়াবর্ধনের সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটে ২৭৪ রান তোলে শ্রীলংকা। জবাবে শুরুটা ভাল হয়নি ভারতের। ১১৪ রানে তাদের হারাতে হয় ৪ উইকেট। কিন্তু তখনও ক্রিজে ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ধোনি এবং গৌতম গম্ভীর। ৯৭ রানে গম্ভীর ফিরলেও ৯১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ভারতকে দ্বিতীয়বার শিরোপা মুকুট পরিয়ে তবেই ফিরেছেন ধোনি।

(ওএস/পি/মার্চ ২৮, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test