E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জাতীয়তা পরিবর্তন করে অন্য দেশের হয়ে মঞ্চ কাঁপানো নক্ষত্র

২০১৫ জুন ১৮ ১৪:৪৯:৩১
জাতীয়তা পরিবর্তন করে অন্য দেশের হয়ে মঞ্চ কাঁপানো নক্ষত্র

শোভন সাহা : বিশ্ব ফুটবলে নিজের দেশের না হয়ে অন্য দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা যেন নতুন কোন ঘটনা না। বর্তমান ফুটবল বিশ্বে  জাতীয়তা পরিবর্তন করে অনেক খেলোয়াড় অন্য দেশের হয়ে মাঠে নামছে। বিশ্ব আসরে তো বটেই ক্লাব ফুটবলেও যেন তা হট কেক। আলফ্রেডো ডি স্টেফানো, ডিয়াগো কস্তা, পেপে, লুকাস পোডলোস্কি, মিরোস্লাভ ক্লোজা, নেভেন সুবোটিক, থিয়াগো মোত্তা, জনাথন ডি গুজম্যান, কেভিন-প্রিন্স বেয়াটং, কাকাও, ডেকো, তুলিও ছাড়াও আরো অনেক খেলোয়াড় আছেন যারা নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে এসে তাদের জাতীয় জার্সি গায়ে তুলেছেন।

আলফ্রেডো ডি স্টেফানো : ১৯২৬ সালের ৪ জুলাই আর্জেন্টিনাই আলফ্রেডো ডি স্টেফানোর জন্ম। আর্জেন্টিনার হয়ে ফুটবল মাঠ মাতিয়েছেন তিনি। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত তিনি বেছে নিয়েছিলেন স্পেনের জার্সি। তারপর আরও ১ বছর তিনি ল্যাটিন আমেরিকার অন্য দেশ কলম্বিয়ার হয়ে মাঠে নামেন এই কিংবদন্তী। নিজের প্রিয় ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে গড়েছেন অনেক কীর্তি। তার সময়ে তিনি রিয়াল মাদ্রিদকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছিলেন। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত ফুটবলকে তিনি দিয়েছেন এক অনন্য সম্মান। ১৯৬৭-১৯৯১ সাল পর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিদ, ভ্যালেন্সিয়া, বোকা জুনিয়ার্স, রিভার প্লেট সহ আরো অনেক ক্লাব। ২০১৪ সালের ৭ই জুলাই তিনি ৮৮ বছর বয়সে মারা যান।

ডিয়াগো কস্তা : স্পেন ও ব্রাজিল দুই দেশেরই হয়ে খেলেছেন ডিয়াগো কস্তা। ২৬ বছর বয়সী এই স্টাইকার ২০১৩ সালে স্পেনের নাগরিকত্ব লাভ করেন। ২০১৩-১৪ মৌসুমে অ্যাটলেটটিকো মাদ্রিদের হয়ে অসাধারণ খেলার ফল হয়ে হিসাবে ডাক পান স্পেনের জাতীয় দলে। তাছাড়া স্পেনের হয়ে নিজের জন্মভূমিতে তিনি ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে অংশগ্রহন করেন।

লুকাস পোডলোস্কি : জার্মানির পাশের দেশ পোল্যান্ডে লুকাস পোডলোস্কির জন্ম। তার বয়স যখন দুই বছর তখন তার বাবা ও মা কাজের সন্ধানে পাড়ি জমান জার্মানিতে। ছোটবেলা থেকে ফুটবলের প্রতি তার অঘাত ভালবাসা। জার্মানীর ক্লাব এফসি.কোলেনের হয়ে ক্লাব ফুটবলে যাত্রা তারপর বায়ার্ন মিউনিখ, আর্সেনাল, ইন্টার মিলানের মত বড় বড় ক্লাবের হয়ে মাঠ মাতাচ্ছেন। তাছাড়া বর্তমান জার্মানি জাতীয় দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ও তিনি। জার্মানির হয়ে তিনি ১২৫ ম্যাচে ৪৮ গোল করেছেন। ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপেও তিনি জার্মানির দলের সদস্য ছিলেন।

মিরোস্লাভ ক্লোজা : মিরোস্লাভ ক্লোজার জন্ম পোল্যান্ডে। ইচ্ছা করলেই খেলতে পারতেন পোল্যান্ডের হয়ে। ১৯৮৬ সালে যখন তার বয়স মাত্র ৮ বছর তখন তার পবিবারের সাথে তিনিও চলে আসেন জার্মানিতে। ২০০১ সালে জার্মানির জাতীয় দলের হয়ে প্রথম ডাক পান তারপর তিনি ২০০২, ২০০৬, ২০১০, ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ খেলেন এবং এখন তিনি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা(১৬টি)। জার্মানির হয়ে ১৩১ ম্যাচে ৭১টি গোল করেন। জার্মানির হয়ে ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে জয়ী দলের সদস্য ছিলেন।

কাকাও : জন্ম ব্রাজিলের সাওপাউলতে। ২০০৩ থেকে ২০১৪ সার পর্যন্ত ভিএফবি.স্টুটগার্টের হয়ে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। তিনি কখনো ব্রাজিলের বয়স ভিত্তিক বা জাতীয় দলে ডাক পাননি। ২০০৯ সালে জার্মানির জার্সি গায়ে চড়িয়ে চীনের বিপক্ষে প্রথম কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে জার্মানির জাতীয় দলের অংশ ছিলেন তিনি।

কেভিন-প্রিন্স বেয়াটং : জন্ম জার্মানিতে, খেলেছেন জার্মানির বিভিন্ন বয়স ভিত্তিক দলে। কিন্তু বরাবরই তিনি ঝামেলা পাকিয়ে শিরোনাম হন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার। ক্লাব ফুটবলে বিভিন্ন সময় আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বিভিন্ন শাস্তি ভোগ করেছেন। তাছাড়া আচারণের দিক দিয়েও তার ব্যপক সমস্যা আছে। ২০১০ সালের বিশ্বকাপে ঘানার হয়ে অংশগ্রহণ করেন তিনি। বিশ্বকাপ শেষ হবার পরপরই অবসর নেন জাতীয় দল থেকে। আবারও তিনি অবসর ভেঙ্গে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে ঘানার হয়ে মাঠে নামেন। কিন্তু দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে তার বিরুদ্ধে আবারও অভিযোগ আনা হয়।

জনাথন ডি গুজম্যান : জন্ম কানাডায়, ১৯৯৯ সালে সপরিবারে চলে আসে নেদারল্যান্ডে। তারপর নেদারল্যান্ডের বয়স ভিত্তিক অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে প্রথম ডাক পায় ২০০৮ সালে। এরপর এক এক করে সব বাধা পেরিয়ে এখন নেদারল্যান্ডের জাতীয় দলের অপরিহার্য অংশ। বিশ্বকাপেও ছিল তার দারুন ফর্ম। বর্তমানে তাকে নেদারল্যান্ডে অন্যতম স্টর ভাবা হয়। ক্লাব ফুটবলে তার প্রতিভার কোন প্রশ্নই ওঠে না। নিজের ক্ষমতা দিয়ে ইটালীর ক্লাব নেপোলীর মাঝ মাঠের প্রাণ তিনি।

পেপে : পেপে খেলার মাঠে একটু বদ রাগী এই পর্তূগালের এই রক্ষণভাগের এই তুখোড় খেলোয়াড়। বিভিন্ন সময় তার এই রাগের কারণেই পর্তুগালকে অনেক বিপদে পড়তে হয়। ব্রাজিল বিশ্বকাপে তিনি তার দলকে বিপদেই ফেলেছিলেন। ১৮ বছর বয়সে তিনি চলে আসেন পর্তুগালে তারপরই পোর্তের রক্ষণ ভাগের কান্ডারী হয়ে ওঠেন। এরপরই ২০০৭ সালে রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখান ব্রাজিলে জন্ম নেওয়া এই খেলোয়াড়। ২০০৭ সালে তিনি পর্তূগালের নাগরিকত্ব পান। ২০০৬ সালে তিনি ব্রাজিল জাতীয় দলের কোচ দুঙ্গার সাথে যোগাযোগ করেন কিন্তু দুঙ্গা তার ডাকে নির্বাক থাকেন যার পরিণতিতেই বেছে নিতে হয় ইউরোপের ব্রাজিলকেই।

থিয়াগো মোত্তা : জন্ম ব্রাজিলে। ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে ২০০৩ সালে অভিষেক হয়। তারপর দীর্ঘদিন জাতীয় দলে তাকে অবজ্ঞা করা হয়। কিন্তু ক্লাব ফুটবলে তিনি অনেক দিন ইতালির বিভিন্ন ক্লাবে খেলেন। এজন্য ২০১১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তাকে ইটালীর জার্সি গায়ে আবারও দেখা যায়।

নেভেন সুবোটিক : ফুটবল খেলায় কোচের সাথে দ্বন্দ্ব, ঝগড়া নতুন কিছু নয়। কিন্তু নেভেন সুবোটিক আমেরিকার অনূর্ধ্ব-২০ দলের২০০৭ সালের ডাচ কোচ টমাস রনজেন এর সাথে ঝগড়া করে সার্বিয়ার জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তুলে নেন। ২০০৮ সালে বসনিয়া ও হার্জেগোনিয়া তাকে তাদের জাতীয় দলে পেতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু সেই সময় বরসিয়া ডটমুন্ডের এই সেন্টার ব্যাক তখন তা প্রত্যাখ্যান করেন। এরপরই তিনি ২০০৯ সালে সার্বিয়ার জাতীয় দলের হয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন।

(ওএস/পি/জুন ১৮, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test