E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

এবার দ.আফ্রিকার কাঁধে থাবা বসাবে টাইগাররা!

২০১৫ জুন ২৭ ১৯:৫০:৪৯
এবার দ.আফ্রিকার কাঁধে থাবা বসাবে টাইগাররা!

স্পোর্টস ডেস্ক, ঢাকা : বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর ঘরের মাঠে পাকিস্তান ও ভারতকে নাকানি-চুবানি খাইয়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজার বাংলাদেশ। পাকিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করার পর ভারতের বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনের গর্ব চূর্ণ করে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় টাইগাররা। ফর্মের তুঙ্গে থাকা লাল সবুজের জার্সিধারীরা এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলার জন্য প্রস্তুত।

ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেকের প্রায় ৩০ বছর পর বাংলাদেশ সংক্ষিপ্ত ক্রিকেটে বর্তমানে ধারাবাহিক উন্নতি করছে যেটা চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে ঘরের মাঠে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে যেকোনো প্রতিষ্ঠিত শক্তিতে টাইগাররা বলে-কয়ে হারিয়ে দিতে সক্ষম। ঘরের মাঠে টানা ১০টি ওয়ানডেতে জিতেছে বাংলাদেশ- আগামী মাসে দুটি টেস্ট এবং তিনটি ওয়ানডে খেলতে আসা দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য এই তথ্যটিই সতর্ক-বার্তা হিসেবে কাজ করবে।

দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারত (১৯৮৩ ও ২০১১) এবং ১৯৯২’র বিশ্বকাপজয়ী পাকিস্তানকে সম্প্রতি ঘরের মাঠে যেভাবে প্রবল বিক্রমে বাংলাদেশ পরাজিত করেছে সেটি বোধ হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের অতি-আশাবাদী দর্শকেরও কল্পনাতীত। বিশ্বকাপের পর প্রথমে ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে পরাজিত করে বাংলাদেশ। জয়ের ব্যবধানগুলো চোখে পড়ার মতো- ৭৯ রান, ৭ উইকেট ও ৮ উইকেটের ব্যবধানে আজহার আলির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানকে পরাজিত করে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। এরপর চলতি মাসে মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বাধীন পূর্ণশক্তির ভারতীয় ক্রিকেট দলকে রীতিমতো আকাশ থেকে মাটিতে নামিয়ে আনে লাল সবুজের জার্সিধারীরা। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষটিতে হারার আগে প্রথম দুই ওয়ানডেতে ধোনিদের ৭৯ রান ও ৬ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে সিরিজ জিতে নেয় টাইগাররা।

দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতকে পরাজিত করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আগামী ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা নিশ্চিত হওয়ার পর মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে দর্শকদের হাতে লাল সবুজের পতাকা এক মোহনীয় পরিবেশ তৈরি করে। তবে বাংলাদেশের এমন পারফরম্যান্সে বিস্ময়ের কিছু দেখছেন না বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিক। জিম্বাবুয়ের সাবেক এই ক্রিকেটার বলেন, ‘এমন ফলাফলে বিস্ময়ের কিছু নেই। কেননা, বিশ্বকাপ থেকেই আমরা ভিন্ন এক বাংলাদেশকে দেখে আসছি। খেলোয়াড়রা এখন আগের চেয়েও বেশি আত্মবিশ্বাসী এবং তারা ধারাবাহিকভাবে আগের চেয়েও বেশি ম্যাচ জিতবে পারবে- এই বিশ্বাস তাদের মধ্যে গড়ে উঠেছে।’

বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে গত মার্চে ভারতকে হারানোর মোক্ষম এক সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে সেই ম্যাচে আম্পায়ারদের বেশ কয়েকটি ‘বিতর্কিত’ সিদ্ধান্তের কারণে মাশরাফিরা হেরে মাঠ ছাড়েন। তিন মাস পর ঘরের মাঠে ধোনিদের পেয়ে মধুর প্রতিশোধ নেয় টাইগাররা।

এ সম্পর্কে হিথ স্ট্রিক বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জেতাটা বিশাল এক ব্যাপার। এর মধ্য দিয়ে তারা বিশ্বক্রিকেটকে দারূণ এক বার্তা দিতে পেরেছে।’ গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের সাফল্যের মূল চালিকাশত্তি ছিল স্পিন-অ্যাটাক। উপমহাদেশের স্পিন সহায়ক উইকেটের জন্য যেটি অবশ্যসম্ভাবী। তবে এবারই প্রথম বাংলাদেশ সেখান থেকে সরে এসেছে। বিশ্বকাপ থেকেই বাংলাদেশ ব্যাটিং ও পেসারদের ওপর ভর করে দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে আসছে।

ব্যাপারটি বোঝার জন্য বিশ্বকাপে মাহমুদুল্লাহর ব্যাক-টু ব্যাক সেঞ্চুরি, ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওপেনার তামিম ইকবালের টানা দুই সেঞ্চুরি এবং ভারতের বিপক্ষে অভিষিক্ত মুস্তাফিজুর রহমানের প্রথম দুই ম্যাচে ১১ (৫+৬) উইকেট লাভ করাটা উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। বিশেষ করে ভারতকে তো পেস বোলিং দিয়েই ধসিয়ে দেয়া হয়েছে।

ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ সিং ধোনি বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ে বিশেষ করে মুস্তাফিজুর রহমানের নৈপূণ্যে মুগ্ধ হয়ে বলেন, ‘আমাকে সবচেয়ে বেশি যেটি আকর্ষণ করেছে সেটি হলো তারা কী দুর্দান্তভাবে তাদের পেস বোলিংয়ে পরিবর্তন এনেছে। তারা ১৪০ কি.মি গতিতে বল করেনি আবার তাদের গতি ১১০ এ নেমে আসেনি। কিন্তু তারা একটা ভারসাম্য বজায় রেখেছে ও লাইন লেন্থ ঠিক রেখেছে। বিশ্বকাপে তারা পেসারদের ওপর ভর করেই ভালো করেছে। অতএব আমাদের বিপক্ষে পেসারদের ওপর নির্ভর করায় আমরা বিস্মিত হইনি।’

আগের বিশ্বকাপগুলোতে বাংলাদেশ ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলকে পরাজিত করেছে। তবে পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে সংগ্রাম করতে হয়েছে তাদের, বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে। তবে মাশরাফি এবার বিদেশের মাটিতেও দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। মাশরাফি বলেন, ‘আমরা এখন বিদেশের মাটিতেও ভালো খেলার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। ছেলেরা যেকোনো কন্ডিশনেই ভালো খেলার জন্য প্রস্তুত। আশা করি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও আসন্ন সিরিজে এই পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারবো।’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই পর্যন্ত ৩০৬ ওয়ানডে খেলে ৯৩টিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ, হেরেছে ২০৯টিতে। ওয়ানডেতে জয়ের হার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকলেও সেই তুলনায় টেস্ট অভিষেকের ১৫ বছর পরও এখনো সেখানে বিবর্ণ বাংলাদেশ। ৯১ টেস্টে মাত্র সাতটি জয় পেয়েছে লাল সবুজের জার্সিধারীরা। ৭১টি ম্যাচে হারের স্বাদ পায় টাইগাররা, বাকি ১৩টি টেস্ট ড্র হয়।

মাশরাফি এবং তার দলের মূল কাজ ও লক্ষ্য হওয়া উচিত, সংক্ষিপ্ত ক্রিকেট থেকে পাওয়া এই নতুন আত্মবিশ্বাসকে পাঁচদিনের ক্রিকেটে কাজে লাগানো এবং টেস্টেও উন্নতি করা। ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ থেকেই সেটি করতে হবে মাশরাফিদের।

(ওএস/পি/জুন ২৭, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test