E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অভিষেকেই তারকা নেইমার

২০১৪ জুন ০৩ ১২:১৮:৪৮
অভিষেকেই তারকা নেইমার

স্পোর্টস ডেস্ক : একজন বা দুজন নয়, বিশ্বকাপে ব্রাজিল মানেই একাধিক তারকা ফুটবলারের সন্নিবেশ। সেটা ডিফেন্স থেকে শুরু করে মাঝমাঠ পেরিয়ে আক্রমণভাগ পর্যন্ত। পেলে-ভাভা-গারিঞ্চা-জিকোদের সময় ছিল পঞ্চাশ-ষাটের দশকে। মাঝে বেশ খানিকটা বিরতি। তারপরও রোমারিও, বেবেতো, কাফুদের উত্থান। এরপর রোনালদো, রোনালদিনহো, রিভালদো, রবার্তো কার্লোসদের দাপট। ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপেও এর রেশ ছিল কিছুটা। কিন্তু গত ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ দিয়েই হা-হুতাশ শুরু। যে বিশ্বকাপে ব্রাজিলের মূল তারকা ছিল কাকা ও রবিনহো। যদিও ঐ সময়ে ক্লাব পর্যায়ে রিয়াল মাদ্রিদ ও সান্তোসের হয়ে তেমন কার্যকর ভূমিকায় দেখা যায়নি এই দুজনকে। চার বছর পর এবার ঘরের মাঠেই বিশ্বকাপের আয়োজন করতে যাচ্ছে ব্রাজিল। রেকর্ড ষষ্ঠ শিরোপার জন্য পাখির চোখ করে আছে কিংবদন্তি পেলে, জিকো, রোমারিও, রোনালদোরা। কিন্তু কার কাঁধে সওয়ার হবে ব্রাজিল?

অবশ্যই নেইমার। এক বাক্যে এমন কথাই বলবেন ব্রাজিলের পাড় সমর্থকরা। কিন্তু যার উপরে এত নির্ভরতা, প্রত্যাশা; সেই নেইমারের কিন্তু এটাই প্রথম বিশ্বকাপ। আশ্চর্য আর বিস্ময়কর যে, অভিষেক বিশ্বকাপের অপেক্ষায় থাকা এমন তরুণের ওপরই নির্ভর করছে ব্রাজিলের অগ্রযাত্রা। এমন চিত্র ব্রাজিল আগে কখনও দেখেনি, তা চোখ বুজেই বলা যায়। তবে ব্রাজিল দলে এবার তারকা সঙ্কট পুরোদমে, তাও একেবারে বলা যাবে না। পৌলিনহো, ওস্কার, রামিরেস, ফার্নান্দিহো, মার্সেলো, দানি আলভেস, থিয়াগো সিলভা, দান্তেরা কি তাহলে আড়ালে চলে যাচ্ছেন। অথচ এরাই গেল মৌসুমে দাপটের সঙ্গে খেলেছেন বায়ার্ন, রিয়াল, বার্সা, ম্যানসিটি, চেলসি, পিএসজির মতো নামকরা সব ক্লাবে। আবার গোলপোস্টে রয়েছেন ৩৪ বছর বয়সী অভিজ্ঞ জুলিও সিজার। গোলপোস্ট, ডিফেন্স, মাঝমাঠে সামর্থের কোনো ঘাটতি নেই। প্রশ্ন উঠছে আক্রমণভাগ নিয়ে। যেখানে সবেধন নীলমণি ঐ নেইমারই। বাকিদের মধ্যে ফ্রেড ও জো দুজনেই খেলেন ব্রাজিলের ঘরোয়া লিগে। শুধু হাল্ক খেলে থাকেন রাশিয়ান ক্লাব জেনিত পিটার্সবার্গে। বার্সেলোনায় খেলার সুবাদে আক্রমণভাগে পুরো আলোটুকু পড়ছে ঐ নেইমারের ওপর।

২০১০ সালে জাতীয় দলে অভিষেক নেইমারের। শুরু থেকেই তার পারফরম্যান্স ছিল চোখ ধাঁধানো। অভিষেক ম্যাচেই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে করেছিলেন গোল। শুরুর এই আবহটা এখনও ধরে রেখেছেন নেইমার। হলুদ জার্সি পড়ে মাঠে নামা মানেই দুর্দান্ত কারুকাজ, সঙ্গে গোল। এখন পর্যন্ত ৪৭ ম্যাচে নেইমারের গোল ৩০, যা রীতিমতো বিস্ময়জাগানিয়া। কারণ বয়সটা যে মাত্র ২২। গত ফিফা কনফেডারেশন্স কাপেও নেইমার দেখিয়েছেন নিজের কারিকুরি। পুরো টুর্নামেন্টে করেছিলেন চার গোল। তবে ঘরোয়া লিগে খেলা ফ্রেড সর্বোচ্চ পাঁচ গোল করে জিতেছিলেন গোল্ডেন বুট। আর গোলের পাশাপাশি দুর্দান্ত নৈপুণ্যের জন্য সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব গোল্ডেন বল জিতেছিলেন নেইমার। ফাইনালে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেনকে ৩-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল স্বাগতিক সেলেকাও শিবির। ঐ ফাইনালে তিন গোলের দুটি করেছিলেন ফ্রেড, বাকি একটি নেইমার। বিশ্বকাপের ড্রেস রিহার্সলের টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন, মূল পর্বেও সেটাই করে দেখাতে মরিয়া স্কলারির শিষ্যরা।

গেল মৌসুমটা বার্সেলোনার হয়ে খুব বেশি ভালো খেলতে পারেননি নেইমার। শেষের দিকে ইনজুরি ঝামেলা তৈরি করায় খেলতে পারেননি বেশ কটি ম্যাচ। লা লিগায় তারপরও ২৬ ম্যাচে ৯ গোল করেছিলেন নেইমার। সব মিলিয়ে কাতালানদের হয়ে মৌসুম শেষ করেছিলেন ৪১ ম্যাচে ১৫ গোল করে। তবে ব্রাজিলের হয়ে নেইমারের শেষ ম্যাচটি ছিল বেশ চমকলাগানো। গত মার্চে জোহানেসবার্গে প্রীতি ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫-০ গোলে পরাজিত করেছিল ব্রাজিল। নেইমার করেছিলেন হ্যাটট্রিক।

বিশ্বকাপ ঘরের মাঠে হবে বলেই একটু বেশিই উজ্জীবিত নেইমার। সেটার শুরু ঐ সান্তোস থেকেই। ২০০৩ থেকে ২০০৯; স্বদেশী এই ক্লাবের হয়ে খেলেছেন বয়সভিত্তিক দলে। এরপর মূল দলে অভিষেক। তিন বছরে সান্তোসের হয়ে নেইমার জিতেছিলেন ছোটবড় মোট ছয়টি শিরোপা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কোপা লিবারতাদোরেসের শিরোপা। যা সান্তোস জেতে প্রায় ৪৫ বছর পর। লাতিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের এই শিরোপা শেষবারের মতো সান্তোস জিতেছিল পেলের হাত ধরে। অনেকদিন পর কাঙ্ক্ষিত শিরোপা এনে দিয়ে সান্তোস শিবিরে আলোচনার মধ্যমণি ছিলেন নেইমার। সান্তোসের হয়ে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় ২২৫ ম্যাচে ১৩৬ গোল করা নেইমার এরপর পাড়ি জমান স্পেনে।

বয়স মাত্র ২২। এরই মধ্যে তাকে ব্রাজিলের মূল কাণ্ডারি ভাবা হচ্ছে। কোচ লুইস ফিলিপ স্কোলারির আস্থাও এই তরুণ স্ট্রাইকারকে ঘিরে। ভক্ত-সমর্থকদের বড় একটি অংশের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে সেই নেইমার। অভিষেক বিশ্বকাপ, ঘরের মাঠ, দর্শকদের চাপ; সব বাধা কি অতিক্রম করতে পারবেন নেইমার দ্য সিলভা সান্তোস জুনিয়র? অপেক্ষা আর মাত্র কয়েকদিনের।

(ওএস/এইচআর/জুন ০৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test