E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

শ্যাম্পেনের ফোয়ারা, আর লুঙ্গি ড্যান্স এ মাতোয়ারা সাকিবরা

২০১৪ জুন ০৩ ১৮:১২:২২
শ্যাম্পেনের ফোয়ারা, আর লুঙ্গি ড্যান্স এ মাতোয়ারা সাকিবরা

স্পোর্টস ডেস্ক, ঢাকা : শাহরুখের এক-একটা গান কানফাটা আওয়াজে কানের পর্দায় আছড়ে পড়ছে। ‘তুঝে দেখা তো ইয়ে জানা সনম’ শেষ হল তো পরের সেকেন্ডেই ‘লুঙ্গি ডান্স’। বিটস আরও জোরালো হওয়া চাই? চলুক, ‘ছঁইয়া ছঁইয়া চল ‘ছঁইয়া ছঁইয়া’ মাঠের মতো আবার চলুক! শাহরুখ নাচছেন, টিমকে নাচাচ্ছেন। শোনা গেল, জাক কালিসের মতো সিনিয়রের পক্ষে আবেগ আটকে রাখা সম্ভব হয়নি। তাঁকে নাচতে দেখা গিয়েছে। নাচতে নাকি দেখা গিয়েছে আরও একজনকে, যাঁর জীবনে এ সব ব্যাপার বিরলতম ঘটনার মধ্যে পড়ে। তিনি গৌতম গম্ভীর, কেকেআর ক্যাপ্টেন, সঙ্গে জয়ের নায়ক অলরাউন্ডার সাকিব আল-হাসান। দু’বছর আগে যা করাতে পারেননি শাহরুখ, এ বার নাকি সেটা পেরেছেন। লোকে দেখেছে।

টিম হোটেলের বিশাল লনের একপাশে দাঁড়িয়ে ক্রিকেট ওয়েবসাইটকে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন গৌতম গম্ভীর। বেশ ঝকঝকে দেখাচ্ছে কেকেআর ক্যাপ্টেনকে। টেনশনের চোটে দাঁত দিয়ে নখ খাওয়ার এত দিনের দৃশ্য আজ উধাও। গম্ভীর এখন রিল্যাক্সড, হাসিখুশি। কলকাতা ট্রফি জিতেছে। উত্তাল আবেগের মধ্যে কেউ খেয়ালও করছে না, অষ্টম আইপিএলের উদ্বোধন, প্লে-অফ, ফাইনালসবই কলকাতায়।

সূর্যকুমার যাদবকে দেখলে মনে হবে বুঝি দিবাস্বপ্ন দেখছেন! এবং মোটেও সেটা শেষ হয়নি। অস্ফুটে কয়েকটা শব্দ বেরোচ্ছে…“তিন বারে দু’বার, অ্যাঁ?”…“উফ, কাল রাতে কী-ই না করেছি! ঠিকই আছে, বলুন? কাল আনন্দ করব না তো কবে করব?” লোকে পিঠে হাত দিয়ে দিব্যি ‘পোজ’ দিয়ে চলে যাচ্ছে, অথচ তাতে গড়পড়তা ক্রিকেটারসুলভ আপত্তির ব্যাপারস্যাপার নেই। বরং কৌতুহলী জিজ্ঞাসা আছে। কেকেআরের নতুন সূর্য জানতে চান, মঙ্গলবারের ইডেনে কত লোক আসবেন? লোকে আবার গ্যালারি থেকে ঝুলবে তো?

লাগেজ ট্রলি নিয়ে লাঞ্চরুম থেকে বেরিয়ে আসছেন কোচ ট্রেভর বেলিস। না, ইডেনে আসছেন না। ব্যক্তিগত কাজে ফিরে যাচ্ছেন দেশে। তবে ছাত্রদের এমন মহাসাফল্যের রসায়ন নিয়ে কথা বলতে কোনও দ্রোণাচার্যরই অসুবিধে থাকার কথা নয়। বেলিস ব্যতিক্রম নন। “আমরা ঠিক করে রেখেছিলাম যে, অসাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন ক্রিকেটার আমাদের না হলেও চলবে। কিন্তু এমন কিছু চরিত্র দরকার যারা প্রয়োজনে দৃঢ়তা দেখাতে পারবে। কেকেআর ভাগ্যবান, তেমন কিছু ক্রিকেটার পেয়েছে।”

দেখলে অত্যাশ্চর্যই লাগবে। ধন্ধ জাগবে, সত্যিই এ সব ঘটছে তো? এটাই সেই প্রেক্ষাপট না, যেখানে আইপিএল সেভেন নিলাম হয়েছিল?

মাত্র সাড়ে তিন মাসে কত দ্রুত জীবন পাল্টে যায়। ১২ ফেব্রুয়ারির কেকেআর, ধিক্কারের কেকেআর। যেখানে তীব্র থেকে তীব্রতম সমালোচনা অপেক্ষা করেছিল শাহরুখ খানের ফ্র্যাঞ্চাইজির দল নির্বাচন নিয়ে। মিডিয়া থেকে সমালোচককুল নির্বিচারে দাঁত-নখ বার করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল কেকেআর কর্তাদের ‘অর্থহীন’ নিলাম-নীতির ব্যাখায়। আর ২ জুনের কেকেআর, বন্দনার কেকেআর। যেখানে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রাতে উদ্দাম আবেগ আছে। শ্যাম্পেনের ফোয়ারা আছে। ট্রফি নিয়ে মর্কেল-উমেশের ‘যেমন খুশি নাচো’-র খোলাখুলি যুদ্ধ আছে। এবং অবশ্যই আছেন এসআরকে ও টিম সমেত তাঁর ভারতবিখ্যাত ‘লুঙ্গি ডান্স’।

চিন্নাস্বামী থেকে টিম হোটেলটা ঠিক কত দূর? মিনিট সাত-দশের রাস্তা। একটা রবিবার রাতে চ্যাম্পিয়ন টিমটার বাইশ গজের ‘বাসস্থান’, আর একটা বাইশ গজের বাইরের। এবং ভৌগলিক অবস্থানে পিঠোপিঠি দুই অঞ্চলে রবিবার রাতে যা যা ঘটে গেল, তার পাশে কোনও বিশেষণ, কোনও বর্ণনাই বোধহয় যথেষ্ট নয়। আরব্য রজনীর রাত বলেই বোধহয় ছেড়ে দেওয়া ভাল!

হুড খোলা গাড়িতে যখন এসআরকে দাঁড়িয়ে পড়ে ফ্লাইং কিস দিতে দিতে চিন্নাস্বামী ছাড়ছিলেন, তখনই মনে হল ঘড়ি ভুল দেখাচ্ছে। রাত দেড়টা বাজে ঠিকই, কিন্তু ওটা মোটেও মাঝরাত নয়। সবে সন্ধে! চিন্নাস্বামী থেকে তখন বেরোতে দেখা যাচ্ছে কেকেআরের অন্ধ-সমর্থক পশ্চিমবঙ্গের যুবকল্যাণ ও আবাসন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে। যিনি ফাইনাল দেখবেন বলে কলকাতা থেকে উড়ে এসেছিলেন, এবং ম্যাচ শেষে বলে গেলেন, “আমি দু’বছর আগের ফাইনালে ছিলাম। এ বারও থাকলাম। তা হলে আমি টিমটার লাকি ম্যাসকট, ঠিক তো?” আচ্ছা, ওই যে আনন্দাশ্রু নিয়ে যিনি স্টেডিয়াম ছেড়ে বেরিয়ে আসছেন, উনি কে? উনি ইউসুফ পাঠানের মা! আবেগ কণ্ঠস্বরকে অবরুদ্ধ করছে, তবু বলে চলেছেন, “আমার ছেলে তিন বার চ্যাম্পিয়ন…তিন বার..। এক বার রাজস্থান, দু’বার কলকাতার জার্সিতে!”

টিম হোটেলে তখন অদ্ভুত সব রং। সিএবি যুগ্ম-সচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় টিম কেকেআরকে অভিনন্দন জানিয়ে সবে নিজ-হোটেলে ঘুমোতে যাবেন, সোজা এসআরকের ফোন! শব্দ খরচ কম, দাবি বেশি কলকাতা জিতেছে, আপনাকে এখন আসতে হবে। ঘুমোলে চলবে না। গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি, উঠে পড়ুন! রাত আড়াইটে নাগাদ সিএবি সচিবকে ফের টিম হোটেলে ঢুকতে দেখা গেল। পরে বললেনও, “এই রাতটা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।” ঠিকই। যে দিকে তাকাবেন, সে দিকেই তো স্বপ্নের এক একটা টুকরো।

লোকে ঠিক যেমন শুনেছে কেকেআরের আর এক কর্তা জয় মেটার স্বগতোক্তি। যিনি নাকি মাঝরাত পর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, সত্যিই কেকেআর চ্যাম্পিয়ন। মাঝে মাঝেই নাকি তাঁর মনে পড়ে যাচ্ছিল নিলামের দিনটার কথা। যে দিন কেকেআর কর্তাদের প্রায় ছিঁড়ে ফেলেছিল সর্বভারতীয় মিডিয়া। আলোচনায় ঋদ্ধিমান সাহাও ছিলেন। জিতে তাঁর বীরগাথাকে কোনও ভাবেই উপেক্ষা করেনি কেকেআর। বরং কাউকে কাউকে বলতে শোনা গিয়েছে, আজ বাঙালির পক্ষে দুর্লভ দিন। কেকেআর চ্যাম্পিয়ন, আবার এক বাঙালিও চ্যাম্পিয়নের মতো খেলে বেরিয়ে গেল। কিন্তু ঋদ্ধির একাধিপত্যের পরেও পাল্টা লড়াইয়ের জীবনীশক্তি কোথা থেকে পেল কেকেআর? কী ভাবেই বা এমন টানা ন’টা জয়ে ট্রফি-অর্জন করল? নেপথ্যে অন্যতম হিসেবে শোনা গেল কেকেআর সিইও বেঙ্কি মাইসোরের নাম। টিম সংক্রান্ত বিশেষ কিছু অদলবদল তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত। আর অসহ্য চাপের ফাইনাল? এক কর্তা শোনালেন, দু’বছর আগে চেন্নাইটের টোটকা বেঙ্গালুরুতেও ব্যবহার হয়েছে। হাজির করানো হয়েছে আবার এক মোটিভেশনাল ভিডিও। যার সারমর্ম: আমরা কলকাতার জন্য কিছু করতে চাই।

করেছেন যথেষ্ট। এ বার কলকাতা করবে। ইডেন করবে।

আজ মঙ্গলবার, ইডেনে দুপুর একটা থেকে দু’টো এক ঘণ্টার কেকেআর। আবার। যেখানে প্রায় পুরো টিমটা থাকবে (নারিনের মতো কেউ কেউ যদিও ফিরে গিয়েছেন), থাকবেন শাহরুখ, থাকবেন সাকিব আল হাসান। থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। থাকবে বলিউড-টলিউডের ককটেল। ঠিক দু’বছর আগের মতো।

তা হলে?

তা হলে কী আবার? সবাই, আজ ইডেন চলো!

(ওএস/পি/জুন ০৩,২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test