বাংলাদেশের টার্গেট ৩১২

স্পোর্টস ডেস্ক : বাংলাদেশের শুরু আর শেষটা ছিল একই রকম। মাশরাফি বিন মর্তুজার অসাধারণ নৈপুণ্যে টাইগাররা পেয়েছিলেন শুভ সূচনা। আর শেষ ওভারে হ্যাটট্রিক করলেন তাসকিন আহমেদ। শেষ পাঁচ ওভারে ৬ উইকেটের পতন হয়েছে লঙ্কানদের। তবে ইনিংসের মাঝপথে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের কাছে। উপুল থারাঙ্গা, কুশল মেন্ডিসদের দাপটে বাংলাদেশি বোলাররা কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলেন।

থারাঙ্গার হাফ সেঞ্চুরি ও মেন্ডিসের সেঞ্চুরিতে ভর করে শেষ পর্যন্ত ৪৯.৫ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ৩১১ রান তুলেছে লঙ্কানরা। তাই সিরিজ জিততে বাংলাদেশের প্রয়োজন ৩১২। প্রথম ওয়ানডেতে লঙ্কানদের ৯০ রানে হারিয়েছিল মাশরাফি বাহিনী।

এদিকে টস জিতে প্রথম ব্যাট করতে নেমে দলীয় ১৮ রানের মাথায় দানুশকা গুনাথিলার উইকেটটি হারিয়ে বসে শ্রীলঙ্কা। মাশরাফির দুর্দান্ত এক কাটারে লঙ্কান ওপেনার ফেরেন সাজঘরে। গুনাথিলা করতে পেরেছেন ৯ রান। তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে মাশরাফিকে স্কয়ার লেগে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মুশফিকুর রহীমের তালুবন্দি হন লঙ্কান এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান।

এরপর ক্রমশই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিল উপুল থারাঙ্গা ও কুশল মেন্ডিস জুটি। বাংলাদেশি বোলারদের কোণঠাসা করে রেখেছিলেন থারাঙ্গা-মেন্ডিস। এই জুটিতে ভর করে স্কোরবোর্ডে শতরান পেরিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। ১১১ রানের জুটি গড়েন থারাঙ্গা-মেন্ডিস। অবশেষে এই জুটি ভাঙল রান আউটে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দুর্দান্ত এক থ্রোতে কাটা পড়লেন ৬৫ রান করা উপুল থারাঙ্গা। ৭৬ বলে ৯টি চারের সাহায্যে ইনিংসটি সাজান লঙ্কান অধিনায়ক।

উপুল থারাঙ্গা আউট হওয়ার পর ক্রিজে আসেন দিনেশ চান্দিমাল। জুটি বাঁধেন কুশল মেন্ডিসের সঙ্গে। তৃতীয় উইকেটে ৮৩ রানের জুটিও গড়েন। এই জুটি ভাঙেন মোস্তাফিজুর রহমান। কাটার মাস্টার সাজঘরে ফেরান ২৪ রান করা দিনেশ চান্দিমালকে।

ব্যাট হাতে আরও একবার নিজেকে প্রমাণ করলেন কুশল মেন্ডিস। এই ম্যাচে তো ওয়ানডেতে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটাই খেলে ফেললেন। সেই সঙ্গে তুলে নিয়েছেন ওয়ানডেতে প্রথম সেঞ্চুরিটাও। মাশরাফি বিন মর্তুজার করা লঙ্কানদের ইনিংসের ৩৬তম ওভারের পঞ্চম বলটি ফাইন লেগে ঠেলে দিয়ে এক রান নিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন এই লঙ্কান। ১০২ বলে ৯টি চার ও একটি ছক্কায় তিন অঙ্কের ম্যাজিকাল ফিগারে পা রাখেন। সেঞ্চুরিয়ান মেন্ডিসকে থামালেন তাসকিন আহমেদ। নিজের বলে ফিরতি ক্যাচ নিলেন বাংলাদেশি এই পেসার। শেষ পর্যন্ত মেন্ডিস করতে পেরেছেন ১০২ রান।

দিনেশ চান্দিমাল ও কুশল মেন্ডিস সাজঘরে ফিরলে লঙ্কানদের ইনিংসে কিছুটা স্লথ গতি নেমে আসে। এরপর পঞ্চম উইকেটে আসেলা গুনারত্নেকে নিয়ে ৫৫ রানের জুটি গড়েন মিলিন্দা সিরিবর্ধনে। মেহেদী হাসান মিরাজের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে সরাসরি বোল্ডআউট হন ৩০ রান করা সিরিবর্ধনে।

আগের ম্যাচের শেষ দিকে ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছিলেন থিসারা পেরেরা। দ্বিতীয় ওয়ানডেও ৬ বলে ৯ রান করে ফেলছিলেন। কিন্তু এ যাত্রায় নিজেকে আর মেলে ধরতে পারলেন না থিসারা। রানের জন্য দৌড়াতে গিয়ে মুশফিকের দুর্দান্ত এক থ্রোতে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরতে হলো লঙ্কান এই অলরাউন্ডারকে।

বাংলাদেশের পক্ষে সেরা বোলার তাসকিন আহমেদ। ৮.৫ ওভারে ৪৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি। শেষ ওভারে তো আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথম হ্যাটট্রিকটাই তুলে নিলেন এই পেসার। বাংলাদেশের পক্ষে পঞ্চম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিক করার কীর্তি গড়েন তাসকিন। একটি করে উইকেট নিয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা, মোস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজ।

প্রসঙ্গত, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে উইনিং কম্বিনেশন ভাঙেনি বাংলাদেশ। মাঠে নামার আগে সিরিজ জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী মাশরাফি বলেন, টস জিতলে আমিও ব্যাটিং নিতাম। সিরিজ জয়ের লক্ষ্যেই মাঠে নেমেছেন টাইগাররা।

এদিকে ঘুরে দাঁড়ানোর ম্যাচে স্বাগতিক দল তিনটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছে। দ্বিতীয় ম্যাচে দল থেকে বাদ পড়েছেন লাহিরু কুমারা, সাচিথ পাথিরানা ও লাকশান সান্দাকান। তাদের পরিবর্তে একাদশে জায়গা পেয়েছেন নুয়ান কুলাসেকারা ও নুয়ান প্রদীপ আর অফস্পিনার দিলরুয়ান পেরেরা।

বাংলাদেশ একাদশ : মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান রুম্মন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ।

শ্রীলঙ্কা একাদশ : উপুল থারাঙ্গা (অধিনায়ক), দানুশকা গুনাথিলা, কুশল মেন্ডিস, দিনেশ চান্দিমাল, আসেলা গুনারত্নে, মিলিন্দা সিরিবর্ধনে, থিসারা পেরেরা, দিলরুয়ান পেরেরা, সুরাঙ্গা লাকমাল, নুয়ান কুলাসেকারা ও নুয়ান প্রদীপ।

(ওএস/এএস/মার্চ ২৮, ২০১৭)