E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘আধুনিক ভূমি ব্যবস্থাপনার সুফল পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ’

২০১৭ ডিসেম্বর ২২ ১৩:১২:০৫
‘আধুনিক ভূমি ব্যবস্থাপনার সুফল পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ’

স্টাফ রিপোর্টার : ভূমি আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না হওয়া, তথ্যের অপর্যাপ্তততা, সঠিকভাবে ভূমিজরিপ ও রেকর্ড তৈরি না হওয়া প্রভৃতি কারণ ভূমিসেবা নিশ্চিতকরণে প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ভূমিসেবার পদ্ধতিতে দীর্ঘসূত্রিতা, আর্থিক অস্বচ্ছতা ও জটিলতা কোনোভাবেই নিরসন হচ্ছে না। ফলে সরকার দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনাকে প্রযুক্তিনির্ভর ও আধুনিক করে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও বাস্তবে এর সুফল পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত ‘ভূমিসেবা ও তথ্য প্রাপ্তিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।

ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেইঞ্জ কর্মসূচির পরিচালক কেএএম মোর্শেদের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মাহফুজুর রহমান, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) মতিন-উল হক ও পরিচালক (জরিপ) মো. শামসুল আলম, ব্র্যাকের মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক সাজেদা ফারিসা কবির প্রমুখ। ভূমিসেবাকে কীভাবে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে সহজে পৌঁছে দেয়া যায় সে লক্ষ্যে ব্র্যাকের মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচি এই সেমিনারের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমরা যদি সঠিকভাবে পরিপূর্ণ একটি ডিজিটাল জরিপ সমাপ্ত করতে পারি তাহলে ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা ও মামলা অনেকাংশে কমে যাবে। তাই ভূমি ব্যবস্থাপনাকে সুষ্ঠু করতে আমরা এখন ডিজিটাল জরিপ কাজকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি।

তিনি ব্র্যাকের ‘ভূমিবন্ধু’র উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, প্রান্তিক মানুষের স্বার্থে যেহেতু ব্র্যাক কাজ করে তাই আমি বিশ্বাস করি ‘ভূমিবন্ধু’র মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ভূমিতে তার ন্যায্য ও প্রকৃত অধিকার ফিরে পাবে।

এ জন্য তিনি একটা ইউনিয়ন নিয়ে কাজ শুরু করা এবং কাজের দৃষ্টান্ত হিসেবে একটা ‘মডেল’ দাঁড় করাতে ব্র্যাকের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।

ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ভূমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে আরও অ্যাডভোকেসি করার তাগিদ দেন। তিনি বলেন, ভূমিসেবায় দুনীতি কমিয়ে আনতে হলে নগদ লেনদেনের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে আইনের ভিত্তি থাকা দরকার।

ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) মতিন-উল হক বলেন, জমির ক্ষেত্রে অধিকাংশ মামলা হয় সীমানা বিরোধ, মেয়েদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চনা করা নিয়ে। আর এ নিয়ে সবচেয়ে বেশি দ্বন্দ্ব হয় গ্রামাঞ্চলে। তিনি সীমানা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তিতে সারা দেশে ‘ডিজিটাল সার্ভে’ করার তাগিদ দেন।

সাজেদা ফারিসা কবির বলেন, আমাদের ‘ভূমিবন্ধু’র উদ্দেশ্য স্বচ্ছতার সঙ্গে ভূমিসেবা, সঠিক তথ্য ও পরামর্শ প্রদান। এ কাজকে এগিয়ে নিতে এখন আমরা সরকারের সহযোগিতা চাই।

সেমিনারে ভূমিসেবা জনবান্ধব করতে আলোচনায় বেশ কয়েকটি সুপারিশ উঠে আসে। সেগুলো হচ্ছে- ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের মনোভাবের পরিবর্তন, ভূমিসেবা প্রদানে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব জোরদার করা, ডিজিটাল জরিপের কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নে জরিপ অধিদফতরের জনবল বাড়ানো, সরকারের সেবা সম্পর্কে জনগণকে জানানো, ভূমিসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও দীর্ঘসূত্রিতা রোধ ইত্যাদি।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রতি সাতজন মানুষের মধ্যে একজন সম্পত্তি নিয়ে ভোগান্তির শিকার হয়। এ প্রেক্ষাপটে স্থানীয় পর্যায়ে ভূমিসেবা প্রাপ্তিতে জনগণকে পরামর্শ ও সহায়তার লক্ষ্যে ব্র্যাকের মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচি ২০১৭ সালে দেশের চারটি স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে ‘ভূমিবন্ধু’ নামে ভূমিসেবা ও পরামর্শকেন্দ্র চালু করেছে। এ গুলো হচ্ছে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া, ময়মনসিংহের ত্রিশাল, নাটারের সিংড়া এবং পঞ্চগড় সদর উপজেলা।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ২২, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test