E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ফারমার্স ব্যাংক বাঁচাতে চলছে বৈঠক : সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

২০১৮ ফেব্রুয়ারি ১৩ ১৪:৫৭:০৮
ফারমার্স ব্যাংক বাঁচাতে চলছে বৈঠক : সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

স্টাফ রিপোর্টার : ফারমার্স ব্যাংককে নতুনভাবে দাঁড় করাতে মূলধন জোগানে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৈঠক চলাকালে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মঙ্গলবার এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির উপস্থিত রয়েছেন।

এ ছাড়াও রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকের পর্ষদ চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ রয়েছেন। তবে পূর্ব কোনো নির্দেশনা ছাড়াই সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সাংবাদিক হারুন-অর-রশিদ বলেন, প্রতিদিনের মত আজও পেশাগত দায়িত্বের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে আসি। কিন্তু যেখান থেকে ব্যাংকে প্রবেশের পাস ইস্যু করে সেখানকার দায়িত্বরত কর্মী জানান আজ পাস দেয়া যাবে না। কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন উপরের নির্দেশ। বৈঠক চলছে তাই প্রবেশ করা যাবে না।

ফারমার্স ব্যাংক ঘিরে বড় ধরনের সমালোচনার মুখে পড়তে হয় ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে। সোমবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফারমার্স ব্যাংকের নানা অনিয়ম নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অস্বীকার করে মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান হিসেবে আমার বিরুদ্ধে অসত্য তথ্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জাতির সামনে পেশ করা হয়েছে। এতো বড় অসত্য কথার সম্মুখীন আমার ৭৭ বছর বয়সের মধ্যে কখনও হইনি। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যাতে এসব তথ্য প্রকাশ না পায় এ বিষয়ে স্পিকারের কাছে অনুশাসন চেয়েছেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর। এ সময় সংসদের সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংককে মূলধন জোগানদাতা প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন বাংলাদেশ (আইসিবি), রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের পর্ষদ চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে ডাকা হয়েছে বৈঠকের জন্য।

ফারমার্স ব্যাংককে সঙ্কট উত্তরণে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার মূলধন যোগান দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংক ও এক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে আইসিবি একাই যোগান দেবে ৪৫০ কোটি টাকা। বাকি টাকা রাষ্ট্রায়ত্ত তিনটি ব্যাংক বিভিন্ন পরিমাণে মূলধন হিসেবে যোগান দেবে। এ অর্থ যোগ হলে ফারমার্স ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন দাঁড়াবে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া আর্থিক ভিত শক্তিশালী করতে ৫০০ কোটি টাকার বন্ডও ছাড়বে ব্যাংকটি। ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে গৃহীত এ সিদ্ধান্ত এখন বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

এদিকে ফারমার্স ব্যাংক আইসিবি থেকে বিনিয়োগ মূলধন হিসেবে নিতে আগ্রহী হলেও সোনালী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক থেকে অর্থ মূলধন হিসেবে না নিয়ে ঋণ হিসেবে পেতে চায়। তবে ব্যাংকগুলো তাতে রাজি নয়। ব্যাংকগুলো চায় মূলধন হিসেবে অর্থ নিয়ে ফারমার্স ব্যাংক পরিচালনায় তাদের প্রতিনিধিকে পাঠাতে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতও এমনটি চাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফারমার্স ব্যাংকের উপদেষ্টা প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন, ব্যাংকটিকে নতুনভাবে দাঁড় করাতে তারল্য দরকার। সংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে ১১শ কোটি টাকা প্রাতিষ্ঠান বিনিয়োগের সম্ভাব্য খাত পেয়েছি। আশা করি, সমস্যা থেকে আবার ঘুরে দাঁড়াবো।

রাজনৈতিক বিবেচনায় বর্তমান সরকারের গত মেয়াদে অনুমোদন পাওয়া নতুন ৯ ব্যাংকের একটি ফারমার্স ব্যাংক। কার্যক্রমের শুরু থেকেই অনিয়ম-দুর্নীতি ও আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ে জড়িয়ে পড়ে ফারমার্স ব্যাংক। পরিচালকদের ঋণ ভাগাভাগিতে চলে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। ফলে বাড়তে থাকে খেলাপি ঋণ। তারল্য সংকটের পাশাপাশি মূলধন ঘাটতিতে দূরাবস্থায় পড়েছে ব্যাংকটি। আগ্রাসী ঋণ বিতরণের ফলে তহবিল সঙ্কটে পড়ে ব্যাংকটি। এ জন্য আমানতকারীদের অর্থ পরিশোধ যেমন করতে পারছে না, অন্যদিকে, নিয়ম মতো বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে । ব্যাংক চালাতে ব্যর্থ হওয়ায় গত ২৭ নভেম্বর পদত্যাগ করেন ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও মাহাবুবুল হক চিশতী। ব্যাংকের এমডি একেএম শামীমকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশে ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চতুর্থ প্রজন্মের এ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে ফারমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৩৭৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ, বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশই খেলাপি। এর মধ্যে আদায় অযোগ্য ঋণের পরিমাণ ২৩৮ কোটি টাকা। শীর্ষ ১০ খেলাপি গ্রাহকের কাছেই ব্যাংকটির পাওনা ১৩৪ কোটি টাকা। সর্বশেষ ব্যাংকটি এখন ৭৫ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে।

(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test