E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঋণখেলাপের জন্য ব্যাংকারদের দুষলেন অর্থমন্ত্রী

২০১৮ নভেম্বর ১৮ ১৪:৩৯:০১
ঋণখেলাপের জন্য ব্যাংকারদের দুষলেন অর্থমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার : ঋণ গ্রহীতাদেরকে ঋণখেলাপি বানাতে ব্যাংকাররাই চেষ্টা করেন বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, খুব ভালো কথা নয় কিন্তু আমি সে কথাটি বলতে চাই। আমার ধারণা যখনই কোনো একটা প্রকল্প বা উদ্যোক্তাকে একটি ব্যাংক ঋণ দেবে বলে ঠিক করল, তখন তাকে ঋণের প্রথম কিস্তি হয়তো দিয়ে দেয়া হলো। তারপর থেকেই ব্যাংকাররা চেষ্টা করেন যাতে সে (উদ্যোক্তা) ঋণখেলাপি হতে পারে। ব্যাংকাররাই এ অবস্থা তৈরি করেন। যাতে অতিসত্বর সে ঋণখেলাপি হয়ে যায়।

রবিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম) মিলনায়তনে পাঁচ দিনব্যাপী রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংক পরিচালকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে আবুল মাল আবদুল মুহিত এসব কথা বলেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ সময় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির উপস্থিত ছিলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মনে হয় ব্যাংকারদের এটা একটা অস্ত্র। যেটা ব্যবহার করেন এবং করতে চান। এই লক্ষ্যটা অত্যন্ত খারাপ লক্ষ্য।’

এ সময় ব্যাংকারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমার একটা উপদেশ হচ্ছে এ লক্ষ্য থেকে আপনারা বিরত থাকবেন। আল্লাহর ওয়াস্তে কিছু করেন এ ব্যাপারে। আপনাদের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন রয়েছে।’

আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘খেলাপি ঋণ অনবরত রিশিডিউলিং হয়। জানি না কত বার রিশিডিউলিংয়ের সুযোগ আছে? কিন্তু আমার মনে হয় ব্যাংকাররা এটা অনবরত করতে থাকেন। আমার মনে হয় এটার একটু লাগাম টানা প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রে অবসায়ন হলো সব থেকে ভালো সমাধান। কিন্তু সেটা হয় না। কারণ আপনি চান সে আপনার বাধ্য থাকুক।’

ব্যাংকিং খাত প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘একসময় ব্যাংকিং খাত সরকারি ছিল। কিন্তু এখন ব্যাংকিং খাত ব্যক্তিমালিকানায় অনেক প্রসারিত। ব্যাংকিং খাতের সিংহভাগ ব্যবসা ব্যক্তিমালিকানা খাতেই হয়ে থাকে। এক সময় ছিল সোনালী ব্যাংক সবচেয়ে বড়। এখন আর সেটা নেই। ইসলামী ব্যাংকই মনে হয় সর্বত্র বিরাজ করে। তার মানে ব্যাংকিং খাত ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে গত কয়েক বছরে।’

তিনি বলেন, ‘এ খাত নিয়ে অনেক সমালোচনা-আলোচনা বিদ্যমান। অনেকই বলতে চান-এ খাতটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে এবং এটি দুর্বল খাত হিসেবে অনেকেই বিবেচনা করেন। আর একটি কথা বলা হয়-আমাদের এখানে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি। সরকারিসহ ৬৩টি ব্যাংক রেয়েছে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ সরকারি ব্যাংক। খাত নিয়ে এটি আর একটি সমালোচনা’

খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘ব্যাংকিং খাত নিয়ে সবচেয়ে বড় সমালোচনা হচ্ছে খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে মোটামুটি দোষটা সরকারি ব্যাংকের। সেগুলোতেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি।’

প্রাইভেট ব্যাংক সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাইভেট ব্যাংক সে রকম হয়নি। তবে প্রাইভেট খাতে আরেক রকম ফাঁকিবাজি রয়েছে। প্রাইভেট খাতের এক ব্যাংকের পরিচালক সমঝোতার মাধ্যমে অন্য ব্যাংক থেকে লোন নেন। তিনি তার নিজের ব্যাংক থেকে ঋণ নেন না। এইটা নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কষ্টকর। তবে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। আমাদের উপায় বের করতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটা হয়নি।’

মুহিত বলেন, আমাদের দেশে ব্যাংক অবসায়ন বা একীভূতকরণ একেবারেই ছিল না। এক্ষেত্রে একটি আইন হয়েছে। তবে আইনটি খুব উপযুক্ত নয়। তিনি বলেন, ব্যাংক একেবারেই বন্ধ না করে দিয়ে একীভূতকরণ করা যেতে পারে। এটা খুব ভালো হবে।

ব্যাংকারদের উদ্দেশ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘একটি প্রকল্পা হয়নি। সেটাকে বাঁচানোর চেষ্টা একটু কম করেন। সেটা বন্ধ করে দিয়ে নতুন করে অন্য কিছু করার ব্যবস্থা করেন। সেটাই ভালো হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমার আমল বিদেশে বিনিয়োগের তেমন সুযোগ দিচ্ছে না। কিন্তু আগামীতে আমার মনে হয় বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া প্রয়োজন হবে। অর্থনীতিটা এখন বেশ উন্নতি করেছে তাই বিদেশে বিনিয়োগটা দোষের কিছু হবে না।’

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ১৮, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test