E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মুন্নু জুটের শেয়ারে ৩০ কার্যদিবসেই লাভ ২৫৬ কোটি টাকা

২০১৯ সেপ্টেম্বর ১০ ১৬:৫১:০৯
মুন্নু জুটের শেয়ারে ৩০ কার্যদিবসেই লাভ ২৫৬ কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার : ‘অস্বাভাবিকভাবে’ বেড়েই চলেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মুন্নু জুট স্টাফলার্সের শেয়ার দাম। মাত্র ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে কোম্পানির শেয়ার দাম বেড়েছে তিনগুণ হয়েছে। এতে মন্দাবাজারেও কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডারদের লাভ হয়েছে ২৫৬ কোটি টাকার ওপরে।

মোটা অঙ্কের এই লাভের মধ্যে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা লাভ আছেন ১১০ কোটি টাকার ওপরে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লাভে আছেন ১২৯ কোটি টাকার ওপরে। কোম্পানির শেয়ার দাম বৃদ্ধির সাম্প্রতিক চিত্র পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২২ জুলাই থেকে কোম্পানিটির শেয়ার দাম টানা বাড়ছে। ২২ জুলাই মুন্নু জুট স্টাফলার্সের শেয়ার দাম ছিল ৬৮৭ টাকা ৯০ পয়সা। সেখান থেকে টানা বেড়ে ৯ সেপ্টেম্বর লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২৭ টাকা ২০ পয়সায়। অর্থা দেড় মাসের কম সময় কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ১ হাজার ২৩৯ টাকা ৩০ পয়সা বা ১৮০ শতাংশ।

মাত্র ২ কোটি ৭ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ২০ লাখ ৭০ হাজার। এর মধ্যে ৪২ দশমিক ৯৮ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। এ হিসাবে শেয়ারের দাম বাড়ার ফলে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের লাভ হয়েছে ১১০ কোটি ২৫ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।

প্রতিষ্ঠানটির বাকি শেয়ারের মধ্যে ৫০ দশমিক ৩৭ শতাংশ রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এ হিসাবে মুন্নু জুটের শেয়ারে বিনিয়োগ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৩০ কার্যদিবসে লাভ হয়েছে ১২৯ কোটি ২১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের লাভ হয়েছে ১৬ কোটি ৯০ লাখ ৫৭ হাজার টাকা।

অন্যভাবে বলা যায়, ২২ জুলাইয়ের পর এখনো পর্যন্ত শেয়ারবাজারে লেনদেন হয়েছে ৩০ কার্যদিবস। অর্থাৎ মাত্র ৩০ কার্যদিবসেই কোম্পানির শেয়ার দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৮০ গুণ। অর্থাৎ একজন বিনিয়োগকারী ২২ জুলাই কোম্পানিটির ১০ লাখ টাকার শেয়ার কিনে ধরে রাখলে বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ লাখ টাকায়। সে হিসাবে ১০ লাখ টাকা ৩০ কার্যদিবস খাটিয়েই লাভ পাওয়া যাচ্ছে ১৮ লাখ টাকা।

শেয়ারের এমন দাম বাড়লেও সম্প্রতি কোম্পানিটি কোনো মূল্য সংবেদশীল তথ্য প্রকাশ করেনি। যে কারণে শেয়ারবাজারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে কোম্পানিটিকে নোটিশ পাঠানো হয়।

নোটিশের জবাবে গত ২০ আগস্ট কোম্পানিটি ডিএসইকে জানায় শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পিছনে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।

এরপরও কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। তবে ২০ আগস্টের পর এ বিষয়ে ডিএসই থেকে আর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তবে ২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ডিএসই’র পর্ষদ সভায় মুন্নু জুট স্টাফলার্স’র বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে এবং ডিএসইর একাধিক সদস্য এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

সম্প্রতি বড় ধরনের কোনো মূল্য সংবেদশীল তথ্য প্রকাশ না করলেও গত ২ মে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি তৃতীয় প্রান্তিকের (২০১৮ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত) আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

ওই আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটি ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসের ব্যবসায় গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি মুনাফা করেছে।

২০১৮-১৯ হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসে শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়েছে ৫ টাকা ৭০ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২ টাকা ৯৫ পয়সা। মুনাফা এমন উল্মফন হলেও সে সময় কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়েনি। উল্টো টানা কমেছে।

এদিকে ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে বড় অঙ্কের লভ্যাংশ দিলেও ১৯৮২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত মুন্নু জুট স্টাফলার্সের লভ্যাংশের ইতিহাস খুব একটা ভালো না। ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ার হোল্ডারদের ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার এবং ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।

তবে ২০১৭-১৮ হিসাব বছরের জন্য কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের সাড়ে তিনশ’ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছিল। বড় অঙ্কের এই লভ্যাংশ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে কোম্পানিটির ১০ টাকার শেয়ার দাম ৫ হাজার ৬৩৪ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।

এ বিষয়ে ডিএসই’র এক সদস্য বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়ে তা প্রত্যাহার করে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। মুন্নু জুট স্টাফলার্সের উদ্যোক্তা শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়ে তা আবার প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এরপর থেকেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম হু হু করে বাড়ছে। কিন্তু কোম্পানিটির বিরুদ্ধে কেউ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।

তিনি বলেন, মুন্নু জুট স্টাফলার্স খুব ভালো মানের কোম্পানি না। তবে কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা খুবই কম। যে কারণে কয়েকজন মিলে খুব সহজেই কোম্পানির শেয়ারের সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানো সম্ভব। সম্প্রতি শেয়ার দাম বাড়ার পিছনে এমন কিছু আছে কি না তা দ্রুত নিয়ন্ত্রক সংস্থার খতিয়ে দেখা উচিত। এছাড়া কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা কোনো অনিয়ম করছে কি না, তাও ক্ষতিয়ে দেখা উচিত।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test