E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অভিযানেও কমছে না চালের দাম

২০২০ মার্চ ২৮ ১৩:৫৩:৪১
অভিযানেও কমছে না চালের দাম

স্টাফ রিপোর্টার : করোনাভাইরাস আতঙ্ককে পুঁজি করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও র‌্যাব বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়েও এ অসাধু ব্যবসায়ীদের বাড়িয়ে দেয়া দাম কমাতে পারেনি। উল্টো চালের দাম যাতে না কমে সেজন্য একটি চক্র সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর চালের দাম কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে এই বাড়তি দাম অব্যাহত রয়েছে। চালের বাড়তি দাম নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিদফতর ও র‌্যাব অভিযান চালালে কিছু কিছু ব্যবসায়ী সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে অনেক বাজারেই চালের এক ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজধানীতে চালের দাম বাড়ার আগে কুষ্টিয়া ও নওগাঁতে চালের দাম বাড়ে। উত্তরাঞ্চলের নওগাঁ এবং কুষ্টিয়া ধান-চালের সবচেয়ে বড় মোকাম হিসেবে বিবেচিত। এই দুই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা চালের বাজারের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করেন। ফলে নওগাঁ ও কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়ালে সারাদেশেই চালের দাম বেড়ে যায়।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৮ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে নাজিরশাইল। করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার আগে এই দুই ধরনের চাল ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

সরু চালের পাশাপাশি দাম বেড়েছে গরিবের মোটা চালেরও। পাইজাম ও লতা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, যা করোনা আতঙ্কের আগে ছিল ৪২ থেকে ৪৮ টাকা কেজি। স্বর্ণা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি, যা করোনাভাইরাস আতঙ্কের আগে ছিল ৩২ থেকে ৩৫ টাকা।

চালের এই দাম বাড়ার বিষয়ে রামপুরার ব্যবসায়ী ইব্রাহিম বলেন, সপ্তাহ দুই আগে করোনাভাইরাস আতঙ্ক মানুষের কেনাকাটা বেড়ে যায়। এ সময় হঠাৎ করেই আড়তে সব ধরনের চালের দাম বেড়ে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মিনিকেট চালের দাম কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, চালের এই দাম পরিকল্পিতভাবে বাড়ানো হয়েছে। কারণ চালের দাম নিয়ন্ত্রণে র‌্যাব অভিযানে নামার পর বড় বড় চাল কোম্পানির চাল পাওয়া যাচ্ছে না। রশিদের চাল ১০ দিনের বেশি হয়ে গেছে আমরা কিনতে পারছি না। চালের বাজারের বড় অংশই নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এই ব্যবসায়ীর।

চালের দাম বাড়ার বিষয়ে একই ধরনের অভিযোগ করেন খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী মো. জানে আলম ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘চালের দাম সবার আগে বাড়িয়েছে রশিদ। আর রশিদের চালের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সব ধরনের চালের দাম বেড়ে গেছে। এখন তো রশিদসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠানের চাল পাওয়া যাচ্ছে না। বারবার অর্ডার দিয়েও রশিদের চাল পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে চালের এমন সরবরাহ কম থাকলে দাম কমার খুব একটা সম্ভাবনা নেই।’

এদিকে করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে চালের পাশাপাশি পেঁয়াজ ও আলুর দামও বাড়িয়ে দেয় এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা। তবে ভোক্তা অধিদফর ও র‌্যাব দফায় দফায় অভিযান চালানোর পর বর্তমানে এ দুটি পণ্যের বাড়তি দাম অনেকটাই কমে গেছে। ৮০ টাকায় উঠে যাওয়া পেঁয়াজের কেজি এখন বাজার ও মানভেদে ৩৫-৪৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আর ২৮ টাকায় উঠে যাওয়া আলুর দাম কমে ২০ টাকায় চলে এসেছে।

এ বিষয়ে মালিবাগের বাসিন্দা আরিফুল বলেন, ‘ভোক্তা অধিদফতর ও র‌্যাবের অভিযানের পর পেঁয়াজ ও আলুর দাম কমে গেছে। এ থেকে বোঝা যায়, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালালে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।’

তিনি বলেন, চালের ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আরও কঠোর অভিযান চালাতে হবে। এটা করা গেলে হয়তো চালের বাড়তি দামও কমে আসবে।

মালিবাগের এই বাসিন্দা আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে সরাবিশ্ব এখন এক ধরনের সমস্যার মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের কবলে পড়েছে। এমন সংকটের সময় বড় বড় ব্যবসায়ীরা দেশ ও সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা। কিন্তু আমাদের দেশে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন দৃশ্য। এক শ্রেণির মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীরা সংকটকে পুঁজি করে মুনাফা হাতানোর পায়তারা করছে। সরকারের উচিত এদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া। কিছুতেই এদের ছাড় দেয়া উচিত না।’

(ওএস/এসপি/মার্চ ২৮, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test