E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

এক লাখ বিনিয়োগে দেড় মাসে লাভ সাড়ে ৫ লাখ টাকা

২০২০ আগস্ট ২৯ ১৫:৫১:২৪
এক লাখ বিনিয়োগে দেড় মাসে লাভ সাড়ে ৫ লাখ টাকা

স্টাফ রিপোর্টার : এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করে দেড় মাসেই সাড়ে ৫ লাখ টাকা লাভ, কথাটা শুনতে হয়তো অস্বাভাবিক লাগছে। কিন্তু এটাই বাস্তব। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জিল বাংলা সুগার মিলের শেয়ার বিনিয়োগকারীদের এমন অস্বাভাবিক মুনাফা দিয়েছে।

শেয়ার বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় দেড় মাস ধরে হু হু করে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ছে। এতেই কিছু কিছু বিনিয়োগকারীর কাছে কোম্পানিটির শেয়ার রূপকথার আলাউদ্দিনের চেরাগের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাত্র দেড় মাসেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ৫৩৩ শতাংশ। ফলে এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করেই দেড় মাসে লাভ পাওয়া গেছে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা।

জানা গেছে, চলতি বছরের ৯ জুলাই কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৩১ টাকা ৬০ পয়সা। সেখান থেকেই টানা বেড়ে বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ২০০ টাকা ২০ পয়সায়। অর্থাৎ দেড় মাসের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ১৬৮ টাকা ৬০ পয়সা বা ৫৩৩ শতাংশ।

এ হিসাবে একজন বিনিয়োগকারী ৯ জুলাই বা তার আগে জিল বাংলা সুগার মিলে এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে বর্তমানে তার বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ছয় লাখ ৩৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ এক লাখ টাকা দেড় মাস বিনিয়োগ করেই মুনাফা পাওয়া গেছে ৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।

বিনিয়োগকারীদের এমন মুনাফা দিলেও, কোম্পানিটির শেয়ারের এই দাম বাড়াকে স্বাভাবিক ভাবে দেখছেন না বিশ্লেষকরা। কারণ জিল বাংলা সুগার মিল বছরের পর বছর ধরে লোকসানে নিমজ্জিত। লোকসানের ফলে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিতে পারছে না।

সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসের ব্যবসায় শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৪৪ টাকা ৭২ পয়সা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যে কোম্পানি বছরের পর বছর বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয় না এবং সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনে বড় অঙ্কের লোকসানে রয়েছে, সেই কোম্পানির শেয়ার দাম দেড় মাসে ৫০০ শতাংশের ওপরে বৃদ্ধি পাওয়া কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারে না। এই দাম বাড়ার পেছনে কোনো চক্র আছে কি না তা নিয়ন্ত্রক সংস্থার ক্ষতিয়ে দেখা উচিত।

এদিকে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে গত দেড় মাসে দুই দফায় বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে তথ্য প্রকাশ করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। কোম্পানি কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ২০ আগস্ট ও ১৯ জুলাই এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

জিল বাংলা সুগার মিল কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুই দফাতেই ডিএসই জানায়, জিল বাংলা সুগার মিলের শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। এই অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পেছনে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।

তবে ডিএসইর এ সতর্ক বার্তা যে কাজে আসেনি তা কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ার চিত্র দেখলে সহজেই অনুমান করা যায়। সতর্ক বার্তা দূরে ঠেলে হু হু করে শেয়ারের দাম বাড়লেও ১৯৮৮ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি কবে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়েছে সে সংক্রান্ত কোনো তথ্য ডিএসইর ওয়েবসাইটে নেই।

তবে ডিএসইর ওয়েবসাইটে ২০১৫ সাল থেকে কোম্পানিটির লাভ-লোকসানের তথ্য রয়েছে। ২০১৫-২০১৯ এই পাঁচ বছরের প্রতিটি বছরেই কোম্পানিটি বড় অঙ্কের লোকসান করেছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালে ১০৩ টাকা ৯০ পয়সা, ২০১৮ সালে ৮০ টাকা ৮২ পয়সা, ২০১৭ সালে ৫৪ টাকা ৯ পয়সা, ২০১৬ সালে ৬২ টাকা ৫৬ পয়সা এবং ২০১৫ সালে ৫৬ টাকা ৮৯ পয়সা শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে।

ডিএসইর এক সদস্য বলেন, জিল বাংলা সুগার মিল জুলাই-জুন হিসাব বছর গণনা করে। সে হিসাবে কিছুদিনের মধ্যে হয়তো কোম্পানিটির লভ্যাংশ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। কিন্তু ২০১৯-২০ হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটি যে পরিমাণ লোকসান করেছে, তাতে অনুমান করে নেয়া যায় আবারও বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হবেন।

তিনি বলেন, যে কোম্পানি বছরের পর বছর বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না। আবার ২০১৯-২০ হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসে শেয়ারপ্রতি প্রায় ৪৫ টাকা লোকসানে রয়েছে, সেই কোম্পানির শেয়ার দাম ৫০০ শতাংশের ওপরে বাড়া কীভাবে স্বাভাবিক হতে পারে? বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উচিত বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা।

(ওএস/এসপি/আগস্ট ২৯, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test