E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ক্যাবল নেটওয়ার্কে নিজস্ব চ্যানেল সম্প্রচার করায় সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব

২০১৪ আগস্ট ১৯ ১৬:৪৮:২৫
ক্যাবল নেটওয়ার্কে নিজস্ব চ্যানেল সম্প্রচার করায় সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব

মাদারীপুর প্রতিনিধি : ১৫ আগস্ট মাদারীপুরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ভাষণ ব্যাঙ্গচিত্র করে ভিডিও প্রকাশ করায় ওমর ফারুক (২৫) নামের এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। আটক ঐ যুবক সদর উপজেলার পানিছত্র এলাকার করিম খানের ছেলে।

মাদারীপুর থেকে প্রচারিত বেসরকারি ক্যাবল চ্যানেল ‘ইজমা চ্যানেল’-এ ভিডিও প্রকাশ করে ঐ যুবক। বিষয়টি নিয়ে শহরে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এই ঘটনার পর থেকে মাদারীপুরের অনেকের মধ্যে এই নিজস্ব চ্যানেলগুলো নিয়ে নানা ধরণের তর্ক-বিকর্ত শোনা যাচ্ছে।
খোজ নিয়ে দেখা যায়, সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই মাদারীপুর জেলায় কেবল নেটওয়ার্কে নিজস্ব চ্যানেলের সমপ্রচার চালাচ্ছে কেবল অপারেটররা। তারা এসব চ্যানেল প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বিজ্ঞাপনও প্রচার করছে। ফলে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে।
অপরদিকে মানহীন নাটক, বিদেশী বিতর্কিত সিনেমা প্রচারের ফলে তরুণ-তরুণীরা বিপদগামি হচ্ছে। সামাজিক অবক্ষয়ের আশঙ্কা করছে অভিভাবকরা।
স্পর্শকাতর এ বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে চলে এলেও এবিষয়ে মাদারীপুর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের সহায়তায় এসব বেআইনি কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এসব অবৈধ ক্যাবল সংযোগে অনুমোদিত স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর মতোই নির্দিষ্ট নাম, লোগো, এমনকি অনুষ্ঠানসূচি অনুসারে সমপ্রচার চালানো হচ্ছে।
মাদারীপুর জেলায় ইমেজ, গাঙচিল প্রভৃতি নামে অনেকগুলো অবৈধ চ্যানেলের সমপ্রচার কার্যক্রম চলছে। অধিকাংশ চ্যানেলে ২৪ ঘণ্টাই নানা ধরনের অনুষ্ঠান সমপ্রচার করা হয়।
নির্বাচিত গান, নাটক, নতুন-পুরনো দেশ-বিদেশি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রচার করা হয়ে থাকে এসব চ্যানেলে।
সম্প্রতি স্থানীয় একটি চ্যানেল বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আপত্তিকর তথ্যচিত্র প্রচার করে। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন স্থরের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও কিছুদিন আগে স্থানীয় একটি চ্যানেলে এক গৃহবধুর নগ্ন ভিডিও প্রচার করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।
অন্যদিকে ভিডিও চ্যানেলগুলোতে অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন ফাস্টফুড, চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, বিউটি পার্লার, বুটিক সপ, হাসপাতাল, ডাক্তার, হাকীম-কবিরাজ, হারবাল, যৌন চিকিৎসা, কোচিং সেন্টার এবং কিন্ডার গার্টেন স্কুল-কলেজসহ ছোট-বড় নানা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া খোদ র‌্যাব কর্তৃপক্ষও বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। জনসচেতনতামূলক সাইনবোর্ড লাগিয়ে বিজ্ঞাপনগুলো নিয়মিত প্রচারিত হচ্ছে। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কেবল অপারেটররা প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
সূত্র জানায়, ফ্রিকুয়েন্সি ডিক্লারেশন অ্যাক্ট ও কেবল টিভি নেটওয়ার্ক সমপ্রচার আইন-২০০৯ অনুযায়ী, ডিস প্রযুক্তির মাধ্যমে আঞ্চলিক টিভি চ্যানেল বা স্থানীয়ভাবে ডিস চ্যানেল প্রতিষ্ঠা সম্পূর্ণ বেআইনি ও শাস্তিযাগ্য অপরাধ। এধরনের বেআইনি চ্যানেল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অনুষ্ঠানমালা এবং বিজ্ঞাপন প্রচারও সমানভাবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এছাড়াও ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক (পরিচালনা ও লাইসেন্সিং) বিধিমালা, ২০০৬-এর ৫.৫ ধারার (১২) তে বলা হয়েছে কোন ডিস্ট্রিবিউটর বা সেবা প্রদানকারী সরকার অনুমোদিত চ্যানেল ব্যাতীত নিজস্ব কোন অনুষ্ঠান যথা: ভিডিও, ভিসিডি প্রভৃতির মাধ্যমে বা অন্য কোন উপায়ে কোন চ্যানেল বাংলাদেশে বিপনন, সঞ্চালন ও সম্প্রচার করতে পারবে না।
অথচ ক্যাবল অপারেটরা তাদের নেটওয়ার্কে অবাধে প্রচার করছে বিজ্ঞাপন এবং বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নবিদ্ধ ছবি, নাটক, অনুমোদনহীন বিদেশী ছায়াছবি, বিতর্কিত তথ্যচিত্র। বিধিমালায় এই ধারা লংঘন দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হবে। সম্প্রতি ক্যাবল অপারেটরদের পরিচালিত অনুমোদিত চ্যানেলসমূহ বন্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
কিন্তু মাদারীপুরে অনেকদিন ধরে বেআইনিভাবে অনুষ্ঠানমালা ও বিজ্ঞাপন প্রচার করা হলেও সরকার এসব অবৈধ টিভি চ্যানেল সমপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।
ক্যাবল ব্যবসায়িদের এক সূত্রে জানা যায়, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রচলিত টিভি চ্যানেলের মতো অনুষ্ঠান সম্প্রচারও চালিয়ে যাচ্ছে এসব চ্যানেলগুলো। এসব অবৈধ টিভি চ্যানেলে মাসের পর মাস বিজ্ঞাপন প্রচার হয়ে আসছে। বিজ্ঞাপন বাবদ প্রতি মাসে আয় হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অনেকেই এভাবে মোটা অঙ্কের অর্থ কামিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছে রূপান্তর হয়েছেন।
এদিকে অবৈধ এসব চ্যানেলের কারণে স্থানীয় পত্রিকা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ একাধিক পত্রিকার প্রকাশকের।
তাদের অভিযোগ, ক্যাবল ব্যবসায়িরা নিজস্ব ভিডিও চ্যানেলে নাটক ও চলচ্চিত্র প্রচার করার পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে বিজ্ঞাপন প্রচার করায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ি এসব চ্যানেলের সমপ্রচার আইনত দন্ডনীয় বলে স্বীকার করেছেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তবে সব ক্যাবল অপারেটরই এ ধরনের চ্যানেল সমপ্রচারের সঙ্গে জড়িত নয়। এজন্য তিনি কিছু অবৈধ ব্যবসায়িকে দায়ী করেন।
সচেতনমহলের দাবি, প্রশাসন থেকে যেন দ্রুত জেলার সকল বেসরকারি এই চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দেয়া হোক।

(এএসএ/এএস/আগস্ট ১৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test