E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

একদিনেই বিনিয়োগ বাড়ল ১৬ হাজার কোটি টাকা

২০২১ জানুয়ারি ০৩ ১৭:৫০:৪৯
একদিনেই বিনিয়োগ বাড়ল ১৬ হাজার কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার : চাঙ্গা হয়ে উঠেছে দেশের শেয়ারবাজার। ছয় মাসের বেশি সময় ধরে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় থাকলেও নতুন বছরের প্রথম কার্যদিবস রবিবার, সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে তেজিভাব দেখা গেছে। এর ফলে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক একদিনে ৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

মূল্যসূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি ডিএসই এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই শেয়ার ও ইউনিট প্রতি দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখেয়েছে। এতে একদিনেই বিনিয়োগের পরিমান ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বেড়েছে।

এদিন লেনদেন শুরু হতেই বড় লাফ দেয় মূল্যসূচক। লেনদেনেও দেখা দেয় চাঙ্গাভাব। শুরুর মাত্র দশ মিনিটের মাঝেই ডিএসইতে দুইশ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। শুরুর এই চাঙ্গাভাব অব্যাহত থাকে দিনের শেষ পর্যন্ত। ফলে লেনদেন প্রায় দুই হাজার কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকে।

এর মাধ্যমে ২০২০ সালের ২৮ জুনের পর ডিএসইতে আজ সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। গত ২৮ জুন বহুজাতিক কোম্পানি গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনকে (জিএসকে) কিনে নেয় আরেক বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার। ফলে ওই দিন ডিএসইতে ২ হাজার ৫৪৩ কোটি ২৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শেয়ারবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। আস্থা বাড়ার কারণেই শেয়ারবাজারে এমন উত্থান দেখা দিয়েছে।

তারা বলছেন, এখন যেহেতু শেয়ারবাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে তাই বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। হুজুগে বা গুজবে বিনিয়োগ করা উচিত হবে না। কোনোভাবেই পেনিক সেল (হুজুগে বিক্রি) করা যাবে না। আবার গুজবে পড়ে অতিরিক্ত লাভের আশায় দুর্বল কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করাও ঠিক হবে না। বিনিয়োগকারীদের ভালো কোম্পানি বাছাই করে মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে।

গত বছর ও সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা। রোববারের লেনদেন শেষে এর পরিমান দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৪৮ হাজার ২৩০ কোটি টাকায়। অর্থাৎ একদিনেই ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ১৬ হাজার ২০৭ কোটি টাকা।

এর পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক আগের দিনের তুলনায় ২১৬ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৬১৮ পয়েন্টে উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারির পর সূচকটির সব থেকে বড় উত্থান হল। ওইদিন ডিএসইর প্রধান সূচক বাড়ে ২৩২ পয়েন্ট। অবশ্য প্রতিটি শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দেয়ায় ১৯ মার্চ সূচকটি ৩৭১ পয়েন্ট বেড়েছিল। সেদিন শেয়ারবাজারে মাত্র ৩০ মিনিট লেনদেন হয়।

প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বড় উত্থান হয়েছে ডিএসইর অপর দুই সূচকের। এর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ১১৪ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৭৮ পয়েন্টে এবং ডিএসইর শরিয়াগহ সূচক ৫৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৯৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

এদিন এক শতাংশের ওপরে দাম বেড়ছে ২২০টি কোম্পানির। এর মধ্যে ১৭৭টির দাম বেড়েছে ২ শতাংশের বেশি। ৪ শতাংশের বেশি দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ১০৯টি কোম্পানি। ৬৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৬ শতাংশের বেশি। আর ৯ শতাংশের বেশি দাম বেড়েছে ৩৮টির।

শেয়ারবাজারে এমন বড় উত্থানের বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক রকিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকার শেয়ারবাজার ভালো করতে বিভিন্ন ধরনের পলিসি সাপোর্ট দিচ্ছে। সেই সঙ্গে বিএসইসি বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে। এ কারণে বাজারের ওপর সব ধরনের বিনিয়োগকারীর আস্থা বেড়েছে। এ কারণেই এমন উত্থান দেখা যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান নিয়ন্ত্রক সংস্থার অধীনে কেউ অন্যায় করে ছাড় পাবে না। এই বার্তা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বারবার দিচ্ছে। যে কারণে বাজারে বড় বড় বিনিয়োগকারীরাও আসছেন। শিল্প প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদী অর্থের উৎস হবে শুধু পুঁজিবাজার। সরকার সেই ধরনের পরিকল্পনাই নিয়েছে।’

তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘বাজার এখন চাঙ্গা। বিনিয়োগকারীদের এ সময় সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। ঋণ করে, গহনা-জমি বিক্রি করে টাকা পুঁজিবাজারে আনা যাবে না। এখানে সঞ্চয়ের একটি অংশ বিনিয়োগের পরিকল্পনা করতে হবে। আর কোনো অবস্থাতেই অতিরিক্ত লোভে পড়ে হুজগে বা গুজবে বিনিয়োগ করা ঠিক হবে না।’

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ০৩, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test