E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দেশে স্থানীয় শিল্পজাত পণ্যের প্রভাব বাড়ছে

২০১৪ আগস্ট ২৫ ১৮:২৮:০৩
দেশে স্থানীয় শিল্পজাত পণ্যের প্রভাব বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশের বাজারে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য প্রভাবশালী হয়ে উঠছে। আমদানি করা বিদেশী শিল্পজাত পণ্যের প্রভাব দিন দিন কমে যাচ্ছে। স্থানীয় উৎপাদনকারীদের পণ্যমান এবং সাশ্রয়ী মূল্যের কারণে পিছু হটছে বিদেশী পণ্য। সরকারের নীতি সহায়তা পেলে সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রে দেশীয় শিল্প চাঙ্গা হয়ে উঠবে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।

স্থানীয় চাহিদা মেটানোর বিকল্প কোনো পথ না থাকায় এক সময় এ দেশে বিদেশী পণ্যের প্রাধান্য ছিলো। কিন্তু বিদেশী পণ্যের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল হওয়ার প্রবনতা থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত অনেক পণ্য বিশেষ করে তৈরি পোশাক, জাহাজ, ইলেক্ট্রনিক্স, পাট ও পাটজাত, প্লাস্টিক, আইসিটি, কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যসমূহ শুধুমাত্র নিজ দেশেই প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়নি। দেশের বাইরেও বিদেশী পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে।


সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, শিল্পজাত দ্রব্যের অভ্যন্তরীন চাহিদা বৃদ্ধির পেক্ষাপটে স্থানীয় শিল্পের বিকাশও ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ফলে স্থানীয় শিল্প রফতানীমুখি হয়ে উঠছে। সিমেন্ট, ইলেক্ট্রনিক্স ও ঔষধ শিল্পের উদাহারন দিয়ে তিনি বলেন, এই শিল্পগুলো প্রথমে স্থানীয় বাজারে বিস্তৃতি লাভ করেছে। তারপর বিভিন্ন দেশে নিজস্ব পণ্য রফতানি শুরু করেছে। তিনি আরো বলেন, অনেক শিল্প বিশেষ করে জাহাজ শিল্প রফতানি বাজারকে লক্ষ্য করে বিকাশ লাভ করেছে। স্থানীয় শিল্প ক্রমশ প্রতিযোগীতামূলক হয়ে উঠায় বিদেশী পণ্যের উপর নির্ভরতা কমে যাচ্ছে।


আর্ন্তজাতিক বাজারে স্থানীয় পণ্য পৌঁছে দেয়ার লক্ষে সম্ভাব্য ক্রেতাদের সাথে নেটওয়ার্ক তৈরি ও সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি পণ্যের মান উন্নয়নে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন এই অর্থনৈতিক বিশ্লেষক। তার মতে, স্থানীয় ক্রেতাদের রুচি আকাঙ্খা ও চাহিদার প্রতি নজর রেখে স্থানীয় উদ্যোক্তারা বিদেশে বিনিয়োগের পরিবর্তে দেশেই পন্য উৎপাদনের জন্য বিনিয়োগ করছে। যে কারনে দেশে বিদেশী পণ্যের উপস্থিতি নিরুৎসাহিত হচ্ছে।


ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম আশরাফুল আলম বলেন, শুরুতে ওয়ালটন রেফ্রিজারেটর ও টেলিভিশন প্রস্তুতিতে সীমাবদ্ধ ছিলো কিন্তু বর্তমানে রেফ্রিজারেটর প্রস্তুতিতে বৈচিত্রতা এসেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ইলেক্ট্রনিক্স ও গৃহস্থালি সামগ্রী প্রস্তুতের উপর বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য খুবই উচ্চমানের এবং অনেক ক্ষেত্রে চীনা পণ্যের চেয়েও ভালো। এক সময় চীনা অর্থনীতির প্রভাবে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা হুমকির মুখে ছিলো। কিন্তু বর্তমানে মান ও দামের বিচারে বাংলাদেশী পন্য চীনা পন্য থেকে অনেক সুবিধা জনক অবস্থানে। দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের এই এমডি বলেন, আমাদের ব্যবসার শুরুর দিকে আমরা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে রাসায়নিক দ্রব্যের মতো কিছু মৌলিক কাঁচামাল আমদানি করতাম। কিন্তু বর্তমানে এই দ্রব্যগুলো আমরা নিজেরাই উৎপাদন করছি।


বিশ্বের ১৭ টি দেশে পণ্য রফতানিকারক ওয়ালটনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্ব প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশের বিশ্ব প্রযুক্তির রাজধানী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এটা হলে বাংলাদেশ বিশ্ববাসীকে আকর্ষণীয় প্রযুক্তির পণ্য উপহার দিতে সক্ষম হবে।
বাংলাদেশ ফার্নিচার এক্সম্পোটারর্স এ্যাসোসিয়েশনের নেতা সেলিম এইচ রহমান বলেন, বিদেশী পণ্যের স্থালভিসিক্ত হচ্ছে দেশি পণ্য এটা খুবই ভাল দিক এবং এই কৃর্ত্বিত্বের দাবিদার তরুণ উদ্যোক্তাদের। কেননা তারা তাদের পণ্যে বৈচিত্রতা আনতে সক্ষম হয়েছে।
হাতিল কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রিজ ওনারস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সেলিম এইচ রহমান বলেন, রফতানির ক্ষেত্রে ক্যাশ ইনসেনটিভ সুবিধা পেলে বাংলাদেশের ফার্ণিচার রফতানির পরিমান উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড এক্সúোর্টারস এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি সাহেদুল ইসলাম হেলাল বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের প্রায় সবগুলোই এখন বাংলাদেশে প্রস্তুত হয়। বেঙ্গল প্যাসিফিক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) এর সাবেক এ সভাপতি বলেন, আমাদের দেশের ক্রেতাদের পণ্য কেনার আগে ভাবতে হবে কষ্টার্জিত আয় দিয়ে তারা বিদেশী পণ্য কিনবেন কি না।


আনন্দ শিপইর্য়াড এ্যান্ড স্লিপ ওয়েলস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক তারিক উল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিদেশী পণ্যের প্রভাব চলে যাওয়া মূলত বিশ্বায়ন ও বাণিজ্য উদারনীকরণের অংশ। তিনি রফতানির বৈচিত্রকরনের মাধ্যমে স্থানীয় শিল্পের উন্নয়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন।


শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, টেকসই শিল্পায়নের লক্ষ্য অর্জনে সরকার দেশীয় শিল্পের স্বার্থ সুরক্ষায় সম্ভব সব ধরনের নীতি সহায়তা দেবে। আগামী বছরের ফেব্রুয়াারির মধ্যে জাতীয় শিল্পনীতি-২০১৫ ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে তিনটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটি চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে সুপারিশ জমা দেবে। এর ভিত্তিতে খসড়া শিল্পনীতি প্রণয়ন করে তা সংশি¬ষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা শেষে চূড়ান্ত করা হবে। শিল্পনীতিতে দেশীয় শিল্পের প্রসারে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।


(এমএ/এএস/আগস্ট ২৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test