E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রেমিট্যান্স খাতের জাদু শেষ হতে চলেছে : ড. দেবপ্রিয়

২০২১ আগস্ট ০৮ ১৫:১৫:৪২
রেমিট্যান্স খাতের জাদু শেষ হতে চলেছে : ড. দেবপ্রিয়

স্টাফ রিপোর্টার : রেমিট্যান্স খাতের জাদু শেষ হতে চলেছে মন্তব্য করে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ’র আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, অর্থনীতির সব থেকে শক্তিশালী জায়গা বৈদেশিক খাতে এক ধরনের ভাঙন ধরেছে।

তিনি বলেন, ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমে গেছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা অর্জন করা সম্ভব হবে না। কোভিড পরিস্থিতির কারণে ৮০ শতাংশ মানুষ খাদ্য-ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে।

রবিবার (৮ আগস্ট) এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২১-২২ বাস্তবায়ন : পিছিয়ে পড়া মানুষেরা কীভাবে সুফল পাবে?’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আমাদের অর্থনীতির সব থেকে শক্তিশালী জায়গা ছিল বৈদেশিক খাত। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাসের উৎস বলছে এই বৈদেশিক খাতে এক ধরনের ভাঙন ধরেছে। আমরা দেখছি, জুলাই মাসে ১১ দশমিক ২০ শতাংশ রফতানি পতন ঘটেছে। আর রেমিট্যান্স আয়ে ২৮ শতাংশ পতন হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা একমত হবেন- রেমিট্যান্স খাতের যে জাদু সেটা সম্ভবত শেষ হতে চলেছে। কারণ মানুষ গেছে কম, এসেছে আগের চেয়ে বেশি। রফতানিতে আমরা আগের জায়গায় ফিরে যেতে পারব কি-না, সেটা নিয়ে শঙ্কাও রয়েছে।

তিনি বলেন, এসবের মধ্যে সরকার নতুন মুদ্রানীতি দিয়েছে। মুদ্রানীতি সঠিক, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ সার্বিক চাহিদা বৃদ্ধি করার জন্য আরও বেশি তারল্য অর্থনীতিতে দেয়া উচিত। বিভিন্ন ধরনের সুদের হার কমানোর যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, সঠিক বলে আমি মনে করি।

মুদ্রানীতির দুর্বলতা হিসেবে তিনি বলেন, মুদ্রানীতির সব থেকে বড় দুর্বলতা মুদ্রানীতিতে ব্যক্তিখাতের ঋণের যে প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে, তার কাছে যেতে পারছে না। ব্যবসায়িক গোষ্ঠীসহ অনেকে বলেছিলেন- সুদের হার কমিয়ে দিলে বিনিয়োগ দ্রুত বাড়বে। এই তত্ত্ব যে সঠিক ছিল না, এটা আজকে পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে। স্প্রেড চার শতাংশের নিচে নেমে গেছে। এরপরও ব্যাংকে উদ্বৃত্ত তারল্য রয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিলের রেট বাড়িয়ে এই তারল্য তুলে নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এটা রোগের সমাধান না, রোগের যে উপসর্গ আছে তা আপনি দেখাশোনা করছেন। চেষ্টাটা হতে হবে তারল্যকে অর্থনীতিতে সঞ্চালন করা।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে অর্থনীতির উচ্ছ্বাসের নিচে যে কালো ছায়া আছে, সেটা হলে আমাদের ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ কোনোভাবেই আমরা বাড়াতে পারছি না। এ বছর যে হিসাবটি প্রাথমিকভাবে এসেছে, সেটা গত বছরের থেকে আরও ২-৩ শতাংশ কমে গেছে। অর্থাৎ ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ ২১ দশমিক ৫০ শতাংশ নেমে গেছে, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে বিনিয়োগের সর্বনিম্ন হার।

ড. ভট্টাচার্য বলেন, ২০২০-২১ হিসাব বছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮ দশমিক ২০ শতাংশ, যা পরবর্তীতে সংশোধন করে ৫ দশমিক ২০ শতাংশ ধরা হয়েছে। তবে এই ৫ দশমিক ২০ শতাংশ কোনো অবস্থায়ই টিকবে না। আমরা আগেই সমালোচনা করেছিলাম প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২ শতাংশ পরিসংখ্যানটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ২০২১ সালে আমরা কিছু পুনরুদ্ধার দেখছিলাম। কিন্তু শেষ তিন মাসে এসে আমরা দ্বিতীয় ধাক্কায় পড়েছি। গত তিন মাসের যে পরিস্থিতি, লকডাউন, যে স্থবিরতা ও মৃত্যুর প্রতিফল কিন্তু নেই (প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তাতে)। সুতরাং ৫ দশমিক ২০ অবশ্যই কমবে।

এ সময় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রশংসা করেন ড. দেবপ্রিয়। তিনি বলেন, জিডিপির প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এখন পরিসংখ্যান ব্যুরো যে তত্ত্ব দিয়েছে, তাতে আমার কাছে মনে হয়েছে জাতীয় পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে সুস্থতা ফিরে এসেছে। বিবিএস’র বিশ্বাসযোগ্যতা বেড়েছে। এর মাধ্যমে জাতীয় আয়-ব্যয়ের হিসাব একমাত্র বিবিএস’র করা উচিত, তা পুনঃস্থাপিত হয়েছে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি ১৬০০ পরিবারের ওপর আমরা জরিপ চালিয়েছি, তাতে পরিষ্কার আমরা দেখতে পারছি- ৮০ দশমিক ৬০ শতাংশ মানুষ খাদ্যের ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে। ৬৪ দশমিক ৫০ শতাংশ মানুষ অন্যান্য ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে। ঋণ নিচ্ছে ৬০ দশমিক ৮০ শতাংশ। ৪৭ দশমিক ২০ শতাংশ প্রোটিন খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। তারা আর মাছ-মাংস খাচ্ছে না। কেউ কেউ তিন বেলার বদলে একবেলা বা দুই বেলা খাচ্ছেন। ১০ শতাংশ মানুষ শিশুখাদ্যও কমিয়ে দিয়েছে।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, এদেরকে যদি প্রত্যক্ষভাবে আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা না দেয় তাহলে এই মানুষগুলো শুধু দারিদ্র্য ও বৈষম্যের শিকার হবে না, পরবর্তী প্রজন্ম আরও বেশি পুষ্টিহীনতাসহ শারীরিক-মানসিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বড় হবে। এটা জাতীয় একটা বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দেবে। সুতরাং সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, সরকার এ পর্যন্ত ৩০টি বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা তৎপরতা করেছে। এর পরিমাণ এক লাখ ২৮ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে আর্থিক সহায়তা ও খাদ্য সহায়তা খুবই কম। ৩০টির মধ্যে ১৩টি আর্থিক সহায়তা নিয়ে কথা বলে এবং ৪টি খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি। এই ১৩টা ও ৪টি যোগ দিলে দেখা যাবে এক লাখ ২৮ হাজার ১৯৪ কোটি টাকার যে হিসাব দেয়া হচ্ছে তার মাত্র ২০ দশমিক ৫০ শতাংশ। বাকি প্রায় ৮০ শতাংশই হাইব্রিড অর্থাৎ সুদ ভিত্তিতে।

দেবপ্রিয় বলেন, সরকার সাম্প্রতিককালে বিশেষ করে ২০২০-২১ সালে প্রণোদনার যে বড় হিসাবটা ঢুকিয়েছে, তার ভেতরে এমন সব প্রকল্প আছে যেগুলো আদৌ প্রণোদনা হিসেবে গ্রহণযোগ্য না। সরকার একটা বড় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প করেছে। এটাকে প্রণোদনা হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। আমি এটা মেনে নিতে রাজি না। এটা সরকারের সাধারণ উন্নয়ন কর্মসূচির অংশ। সরকার যে ধান-চাল সংগ্রহ করে, সেটাকে প্রণোদনা হিসেবে দেখাতে চায়, আমি এটা গ্রহণ করতে রাজি না। স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে সরকার এই মুহূর্তে ঘর নির্মাণ করছে, এটাকে প্রণোদনার মধ্যে ঢোকানো হচ্ছে, এটা আদৌ কোভিড প্রণোদনার অংশ হতে পারে কি-না, আমার সন্দেহ আছে।

নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপ সদস্য অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্ব এতে আরও উপস্থিত ছিলেন কোর গ্রুপের সদস্য ড. মুশতাক রাজা চৌধুরী, রাশেদা কে চৌধুরী, শাহীন আনাম, ড. ইফতেখারুজ্জামান, অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, আসিফ ইব্রাহিম প্রমুখ।

(ওএস/এসপি/আগস্ট ০৮, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test