E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঝুঁকি ভাতাসহ পোশাক শ্রমিকদের ৮ দাবি

২০২১ নভেম্বর ১০ ১২:৪৭:৪৪
ঝুঁকি ভাতাসহ পোশাক শ্রমিকদের ৮ দাবি

স্টাফ রিপোর্টার : দেশের পোশাক খাতে বিভিন্ন অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা এবং বেআইনি কার্যকলাপ হচ্ছে অভিযোগ করে তার প্রতিকার চেয়ে আট দফা দাবি জানিয়েছে ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ কাউন্সিল।

সরকার এবং বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারী ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) কাছে এই দাবি জানানো হয়।

বুধবার (১০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত গোল টেবিল বৈঠকে এ দাবি জানান বক্তারা।

বক্তারা বলেন, করোনার সময় দেশের বিভিন্ন সেক্টরের জন্য সরকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, চিকিৎসকসহ বেশকিছু খাতে ঝুঁকি ভাতা হিসেবে বড় অংকের অর্থ প্যাকেজও ঘোষণা করে। সরকারি চাকরিজীবীরা বাসায় বসে থেকে বেতন নিয়েছে। অথচ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাওয়া পোশাক শ্রমিকদের কোনো প্রকার ঝুঁকি ভাতা দেওয়া হয়নি। উল্টো বেতন কেটে রাখাসহ বেশকিছু কারখানায় মাসের পর মাস বেতন বকেয়া রাখা হয়েছে। শ্রমিকদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে টিকার ব্যবস্থাও রাখা হয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা। এসময় তারা ৮ দফা দাবি জানান। সেগুলো হলো-

বিশেষ পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে শ্রম আইনের ১৪০(ক) ধারা অনুযায়ী পোশাক খাতে পুনরায় মজুরি হার ঘোষণা করা। ডিসেম্বর ২০২১ থেকে এটা কার্যকর করা।

১ আগস্ট কারখানা খোলার পর যেসব কারখানা লকডাউনে বন্ধের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ছুটির দিনে অতিরিক্ত কাজ করিয়েছে, সেসব কারখানা শ্রমিকদেরকে অতিরিক্ত কাজের জন্য ওভারটাইম ভাতা পরিশোধ করা।

যেসব কারখানা লকডাউনে বন্ধের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শ্রমিকদের মজুরি কর্তন করেছে, সেসব কারখানা কর্তৃপক্ষকে কর্তন করা মজুরির টাকা শ্রমিকদের ফেরত দেওয়া।

ঈদের ছুটির পর শ্রমিকরা কর্মস্থলে আসতে যে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করেছিল তা পুষিয়ে নিতে প্রত্যেক শ্রমিককে যাতায়াত বাবদ ৩ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া।

করোনাকালীন শ্রমিকদের বেতনের ২৫ শতাংশ ঝুঁকিভাতা হিসেবে পরিশোধ করতে হবে। লকভাউনে শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের মূল বেতনের ৫০ শতাংশ ঝুঁকিভাতা পরিশোধ করতে হবে।

ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে সসব প্রকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বাধা দূর করে রেজিস্ট্রেশন দিতে হবে এবং অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। একাধিক ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশনে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না।

শ্রম অধিদপ্তর (ডিওএল) ও কল-কারখানা এবং প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরকে (ডাইফে) আরও সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। দায়িত্ব পালনে তাদের অবহেলার জন্য জবাবদিহি করতে হবে। একই সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করতে হবে।

শ্রম আইন এবং শ্রম বিধিমালা আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ১৮ অনুযায়ী সংশোধন করতে হবে এবং শ্রম আইন ও বিধিতে অতীতে যুক্ত আইএলও কনভেনশনবিরোধী বিভিন্ন ধারাসহ সব ‘কালা আইন’ বাতিল করতে হবে।

শ্রম বিধিমালা সংশোধন কমিটির মতো শ্রম আইন সংশোধন কমিটিতেও আইবিসির প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

শ্রমিক নেতাকর্মী ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা বন্ধ করতে হবে এবং অতীতে দায়ের সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

ঢাকায় আরও তিনটি নতুন লেবার কোর্ট স্থাপনসহ শ্রম আদালতের বিচার ব্যবস্থাকে সহজ করতে হবে এবং পুরনো কোর্টগুলোকে পুনর্বিন্যাস করতে হবে।

দেশের সব পোশাক শিল্প অঞ্চলে সরকারি উদ্যোগে শ্রমিকদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা করতে হবে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষার জন্য সোশ্যাল সেইফটি নেট গড়ে তুলতে হবে। অ্যামপ্লেয়মেন্ট ইনজুরি ইনস্যুরেন্স, আন অ্যামপ্লেয়মেন্ট জীবিকা ভাতা নিশ্চিত করতে হবে।

আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুযায়ী আহত এবং নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের প্রতি সব প্রকার জুলুম নির্যাতন বন্ধে আইএলও কনভেনশন ১৯০ সহ ১০২ ও ১৮৯ বাংলাদেশ সরকারকে অনুসমর্থন করতে হবে।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে একযোগে কারখানা পর্যায়ে শ্রমিকদেরকে করোনার টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। শ্রমিক ছাঁটাই, শ্রমিক নির্যাতন ও প্রোডাকশন টার্গেট দিয়ে শ্রমিক হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

যে সব কারখানার মালিক শ্রমিকদের বকেয়া বেতনসহ অন্যান্য পাওনা না দিয়ে পালিয়ে যায়, সে সসব কারখানার শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের দায় বিজিএমইএ, বিকেএমইএ কিংবা সরকারকে বহন করতে হবে।

দেশের চারটি বৃহত্তর পোশাক শিল্প অঞ্চল (গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম) এলাকায় শ্রমিকদের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এছাড়াও পেশাগত দায়িত্ব পালনে অসুস্থতার জন্য ঢাকায় একটি বিশেষায়িত শ্রমজীবী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

শ্রমিক ও শ্রমিকদের সন্তানের জন্য লেবার ইনস্টিটিউট, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। প্রত্যেক কারখানায় ‘ওএইচএস’ কমিটি এবং অ্যান্টি হ্যারেসম্যান্ট কমিটি গঠন করতে হবে।

সরকারি চাকরিজীবী নারীদের মতো, পোশাক শিল্পে নিয়োজিত নারী শ্রমিকদেরও মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করতে হবে। পক্ষ অবলম্বনকারী শিল্প পুলিশকে অবিলম্বে বিলুপ্ত করতে হবে।

গোল টেবিল বৈঠকে ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ কাউন্সিলের সভাপতি মির আবুল কালাম আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল আলম রাজুসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

(ওএস/এএস/নভেম্বর ১০, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test