E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

৬ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি সহজ তামাক কর কাঠামো

২০২২ এপ্রিল ০৫ ১৬:৪৬:৩৩
৬ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি সহজ তামাক কর কাঠামো

স্টাফ রিপোর্টার : দেশে তামাকখাত থেকে রাজস্ব আহরণে কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে তামাককর কাঠামো সহজ করে একটি শক্তিশালী তামাক করনীতি গ্রহণের নির্দেশনা দেন। এরপর দীর্ঘ ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও তা বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি। কার্যকরভাবে করারোপের অভাবে তামাকপণ্য দিন দিন অত্যন্ত সস্তা এবং সহজলভ্য হয়ে পড়ছে। হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) গবেষণা ও তামাকবিরোধী অ্যাডভোকেসি সংগঠন প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স-আত্মা’র যৌথ উদ্যোগে ‘প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সহজ ও শক্তিশালী তামাক করনীতি বাস্তবায়নে বাধা এবং করণীয়’ শীর্ষক ভার্চুয়াল গোলটেবিল বৈঠকে এসব তথ্য তুলে ধরেন সংসদ সদস্য, অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এ আয়োজনের সহযোগী ছিল ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে)।

বৈঠকে জানানো হয়, বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ। এফসিটিসি আর্টিকেল ৬ ধারায় তামাকের চাহিদা হ্রাসকল্পে সরকারসমূহকে একটি সহজ তামাককর ও মূল্যনীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। বিদ্যমান তামাক কর কাঠামো অত্যন্ত জটিল, যা তামাক ব্যবহার নিরুৎসাহিতকরণে যথেষ্ট নয়।

বক্তরা বলেন, সিগারেটে বহুস্তর বিশিষ্ট অ্যাড-ভ্যালোরেম (কোনো পণ্যের ওপর সরকারের নির্ধারিত খুচরা বিক্রয় মূল্যের ওপর নির্দিষ্ট হারে কর আরোপ প্রক্রিয়া) করকাঠামো চালু থাকায় বাজারে এ তামাকপণ্যটি অত্যন্ত সস্তা এবং সহজলভ্য। ফলে ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে ভোক্তা তুলনামূলকভাবে কমদামি সিগারেট বেছে নিতে পারছে। পাশাপাশি তামাক কোম্পানিগুলো উচ্চস্তরের সিগারেট নিম্নস্তরে ঘোষণা দিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। অন্যদিকে, সম্পূরক শুল্ক না বাড়িয়ে কেবল মূল্যস্তর বাড়ানোর মাধ্যমে সিগারেটের দাম বাড়ানোর ফলে বর্ধিত মূল্যের একটি বড় অংশ তামাক কোম্পানির পকেটে চলে যাচ্ছে। এতে তামাক কোম্পানি লাভবান হলেও রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

তারা বলেন, এছাড়া করের ভিত্তি এবং করহার খুবই কম হওয়ায় বিড়ি এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য (জর্দা ও গুল) অধিক সহজলভ্য থেকে যাচ্ছে। তামাকপণ্যে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং সিগারেটের মূল্যস্তর সংখ্যা পর্যায়ক্রমে একটিতে আনা হলে বিদ্যমান জটিল কর ব্যবস্থা সহজ হবে। একইসঙ্গে সরকারের রাজস্ব বাড়বে এবং উপকৃত হবে জনস্বাস্থ্য।

গোলটেবিল বৈঠকে সহজ তামাক করনীতির অংশ হিসেবে আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সব সিগারেট ব্র্যান্ডে অভিন্ন করভারসহ (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬৫%) মূল্যস্তরভিত্তিক সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ (সম্পূরক) শুল্ক প্রচলনের সুপারিশ করা হয়। একইসঙ্গে নিম্নস্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৩২.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ, মধ্যমস্তরে খুচরা মূল্য ৭৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৮.৭৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ, উচ্চস্তরে খুচরা মূল্য ১২০ টাকা নির্ধারণ করে ৭৮.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৯৭.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়। পাশাপাশি বিড়ি এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যেও সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক প্রচলনের প্রস্তাব করা হয়। এছাড়াও মধ্যমেয়াদে (২০২২-২৩ থেকে ২০২৭-২৮) সিগারেটের ব্র্যান্ডসমূহের মধ্যে দাম ও করহারের ব্যবধান কমিয়ে মূল্যস্তরের সংখ্যা চারটি থেকে দুটিতে নামিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, সহজ কর কাঠামো প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা। প্রধানমন্ত্রী যখন কোনো ঘোষণা দেন তখন সেটা পালন করা সরকারের দায়িত্ব এবং এ দায়িত্ব পালনে যারা গাফলতি করেন তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত বলেন, সংসদ সদস্যরা আগে একসময় তামাকের কর বাড়ানোর বিপক্ষে ডিও লেটার (আধা সরকারি পত্র) দিতেন, কিন্তু এখন তারা কর বাড়ানোর পক্ষে ডিও লেটার দিচ্ছেন। আশাকরি, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) এবার ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, তামাককর সংক্রান্ত পদক্ষেপ গ্রহণে স্বাস্থ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সুরে কথা বলতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যদি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিটিং আয়োজন করে তামাককর সংক্রান্ত এ প্রস্তাব তুলে ধরে তাহলে সেটা বেশি কার্যকর হবে।

বৈঠক আলোচনায় আরও অংশ নেন- জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী ও অতিরিক্ত সচিব হোসেন আলী খোন্দকার, বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং টেলিভিশন চ্যানেল টিভি টুডে’র প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এর রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর, সিপিডির রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে)- বাংলাদেশ এর লিড পলিসি অ্যাডভাইজর মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সাবেক সমন্বয়কারী (অতিরিক্ত সচিব) মুহাম্মদ রূহুল কুদ্দুস প্রমুখ।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ০৫, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test