E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আলুর বাম্পার ফলন, তবুও লোকসানের শঙ্কা

২০২২ এপ্রিল ০৫ ১৭:০১:২১
আলুর বাম্পার ফলন, তবুও লোকসানের শঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার : আলুর জন্য বিখ্যাত ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা মুন্সিগঞ্জ। জেলার সিরাজদিখান ও শ্রীপুরে প্রতি বছরের মতো এবারও আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে বাম্পার ফলনের মাঝেও লোকসানের শঙ্কা মাথায় নিয়েই চলছে আলু তোলা। মূলত আলুর দাম আর উৎপাদন খরচের বিপরীতমুখী আচরণের কারণেই এ শঙ্কা তৈরি হয়েছে কৃষকদের। এবার আলু উৎপাদনে তুলনামূলক খরচ বেশি হয়েছে। তবে সেভাবে দাম বাড়েনি।

কৃষকদের মতে, প্রতি কানি (১৪০ শতাংশ) জমিতে আলু চাষে গত বছর কৃষকদের খরচ হয়েছিল এক লাখ ৫০ থেকে এক লাখ ৬০ হাজার টাকার মতো। এ বছর ডিজেল, বীজ, সার, কীটনাশক, শ্রমিকসহ অন্যান্য সবকিছুর দাম বাড়ায় প্রতি কানিতে এক লাখ ৮০ হাজার থেকে এক লাখ ৯০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। অর্থাৎ কানিপ্রতি খরচ বেড়েছে প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা।

কৃষকরা জানান, এ বছর দুবার খরচ করতে হয়েছে বীজ কিনতে। এক দিকে বীজের দাম বেশি অন্য দিকে দুবার রোপণ করাতে লোকসানে পড়তে হবে। প্রথমে আলুর বীজ রোপণ করা হলেও বৃষ্টির পানিতে জমি তলিয়ে যায়। এতে আলুক্ষেত নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে আবারও আলুর বীজ কিনে রোপণ করতে হয়। আবার প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) আলু কোল্ড স্টোরে রাখতে মাসে ১০০ টাকা করে গুণতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে আলুতে খরচ বেড়েছে।

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান ও শ্রীপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে এসব এলাকার কৃষক আলু উত্তোলনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দুই উপজেলা আলুর বেশিরভাগ এলাকায় কানিপ্রতি (১৪০ শতক) ৪০০ থেকে ৫০০ মণ আলু উৎপাদন হয়েছে।

মুন্সিগঞ্জের সিরজাদিখান খিলগাঁও এলাকার কৃষক লাল মিয়া বলেন, বর্তমান বাজার দর হিসেবে প্রতি মণ আলু ৬০০ থেকে ৬৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উৎপাদনের খরচ এবার অনেক বেশি। লেবার ৭০০ টাকা। খাবার ও অন্যান্য খরচ মিলে ৮২০ টাকা দিতে হচ্ছে।

তার দেওয়া তথ্যমতে, এক কানি জমি থেকে আলু পাওয়া যাচ্ছে ২ লাখ ৪০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার। কিন্তু আলু উপাদনেই খরচ হয়েছে প্রায় দুই লাখ টাকা। এরপর কোল্ডস্টোরসহ অন্যান্য খরচ রয়েছে।

এ নিয়ে ওই কৃষক বলেন, নিজের জমি পড়ে থাকে তাই চাষ করছি। নিজের জমি না হলে লোকসান দিয়ে এভাবে চাষ করতাম না।

একই কথা জানান শ্রীপুর এলাকার কৃষক গৌতম ঘোষ। তিনি বলেন, এ বছর উৎপাদিত আলুর ন্যায্য দাম পাওয়া যাচ্ছে না। আলু রোপণের শুরুতে বৃষ্টির পানি জমে সব আলুর ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায়। এতে লেবার খরচ ও আলুর বীজে বাড়তি টাকা চলে গেছে। পুনরায় বীজ রোপণ ও লেবার নিতে হয়েছে। ডাবল খরচ গেছে এখানে। তাছাড়া ডিজেলের দাম বেশি, বীজের দাম এবার তুলনামূলক বেশি ছিল।

আলুর মৌসুমে কর্মসংস্থান অন্য জেলার মানুষের

মুন্সিগঞ্জের শ্রীপুর, বিক্রমপুর, সিরাজদিখান এলাকায় আলুর উৎপাদনের তুলনায় স্থানীয় শ্রমিক সংকট থাকে। এ কারণে এলাকার বাইরে থেকে শ্রমিক আনতে হয়। আলু ও ধান মৌসুমকে কেন্দ্র করে রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী এলাকার মানুষ আসেন কয়েক মাসের জন্য।

এ নিয়ে কথা হয় কুড়িগ্রাম থেকে আসা মমিনুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা একসঙ্গে কুড়িগ্রাম থেকে তিন বাসে করে ২০০ জন এসেছি। আমরা এখানে তিন মাসের জন্য ঘর ভাড়া নিয়েছি, নিজেরাই রান্না করে খাই। তবে আমাদের অনেকেই গেরস্তের (জমির মালিক) বাড়িতে রাতে থাকেন। কাজ শেষে অন্যজনের বাড়িতে আবার চলে যাবেন। আমরা আলুর কাজ শেষে ধানের কাজ করি। প্রতি বছর এই তিন মাসে আমাদের গড়ে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা আয় হয়। এলাকার মানুষ কাজ শেষে বখশিশ হিসেবে গ্রামে যাবার জন্য গাড়ি ভাড়াও দিয়ে দেন।

ঘুরতে আসা মানুষ নিচ্ছেন তাজা আলুর ঘ্রাণ

দেশের অন্যতম বৃহৎ প্রকল্প পদ্মা সেতুর কাজ প্রায় শেষ। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়ার অপেক্ষা। আবার পদ্মা সেতুর কাছেই মাওয়া ঘাটে তাজা ইলিশের ঘ্রাণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এজন্য প্রতিদিনই এই এলাকাতে ঘুরতে আসেন অগণিত মানুষ। সুযোগ বুঝে তাদের অনেকে মাঠ থেকে তাজা আলু কিনে নিয়ে যান। সতেজ আলুর বাড়তি কদর থাকে তাদের কাছে।

এ নিয়ে কথা হয় গণমাধ্যমকর্মী সেবিকা দেবনাথের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা সিরাজদিখানে একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে এসেছিলাম। এলাকাটির চারপাশে শুধুই আলুক্ষেত। এখন কৃষকের আলু সংগ্রহের ব্যস্ততা আর নতুন আলু দেখে লোভ সামলাতে পারিনি। তাই আমরা এখান থেকে এক ঝুড়ি (৫০ কেজি) আলু নিয়েছি ৫০০ টাকায়।

মুস্তাফিজ নামে অন্য একজন বলেন, আমরা পদ্মা সেতু এলাকা ভ্রমণে গিয়েছিলাম। আসার পথে গ্রামের পথ ধরে এসেছি আলু নিতে। এখানে দামে সস্তা আর সতেজ আলু পাওয়া যায়। প্রতি বছরই আমরা মাঠ থেকে বেশি করে আলু কিনে নেই।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ০৫, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test