E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অন্তত ৬ মাস জ্বালানির মূল্য না বাড়ানোর প্রস্তাব সিপিডির

২০২২ জুন ১০ ১৮:০১:৩১
অন্তত ৬ মাস জ্বালানির মূল্য না বাড়ানোর প্রস্তাব সিপিডির

স্টাফ রিপোর্টার : প্রস্তাবিত বাজেটে নেওয়া কৌশল ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব আছে বলে মনে করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। মূল্যস্ফীতি কমানো, ডলার মার্কেটে ভারসাম্য আনা ও ভর্তুকি বিষয়ে বাজেটে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবকে যথাযথ নয় জানিয়ে সংগঠনটি বলছে অর্থমন্ত্রী অসুখের লক্ষণ ধরতে পারলেও এর ওষুধ সম্পর্কে ধারণা নেই তার। এছাড়াও অন্তত ৬ মাস জ্বালানির মূল্য না বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে সিপিডি।

বাজেট ঘোষণার পরদিন শুক্রবার (১০ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পর্যালোচনা করেন সিপিডির গবেষকরা। এসময় তারা এই প্রস্তাব করেন।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, অর্থমন্ত্রী অসুখের লক্ষণ ধরতে পেরেছেন, কিন্তু যে ওষুধ দরকার- তা তার কাছে পর্যাপ্ত নেই বা ওষুধ জানা নেই অথবা যে মাত্রায় ওষুধের ডোজ দেওয়া দরাকার সে মাত্রায় প্রয়োগ হয়নি। যেসব চ্যালেঞ্জের কথা বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন সেটির সাপেক্ষে যে ধরনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার, আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেটা অপ্রতুল বা অপর্যাপ্ত দেখতে পেয়েছি।

তার মতে, এখন এমন একটি সময় যাচ্ছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেয়ে মূল্যস্ফীতি জনিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আমরা জানি এটি বাহির থেকে আগত। মূল্যস্ফীতি জনিত অভিঘাতগুলো আসছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ওপর, সে বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়া উচিত ছিল।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে যেসব প্রস্তাব করা হয়েছিল তার মধ্যে ছিল করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানো। দরিদ্র নয় কিন্তু সীমিত আয়ের মানুষদের কিছুটা আয়ের সাশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। দ্বিতীয় একটা দিক ছিল সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়ানো। দুর্ভাগ্যবশত বাড়ানোতো হয়নি, অনেকক্ষেত্রে বাজেটে বরাদ্দ কমানোর ঘোষণা রয়েছে। এটা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে ওষুধের ডোজের ক্ষেত্রে এখানে বড় সমস্যা রয়েছে।

এই গবেষক আরও বলেন, সাবসিডির (ভর্তুকি) ক্ষেত্রে যেসব ব্যবস্থাপনা করা হবে অর্থমন্ত্রী সেখানে ঠিক ডোজই নিয়েছেন, সেখানে সাবসিডি বাড়িয়েছেন। সঙ্গে এটাও বলছেন পুরো সাবসিডি দিয়েওে তিনি বিদ্যুৎ বা জ্বালানি খাতের মূল্য সমন্বয় না করে থাকতে পারবেন না। তার মানে হচ্ছে ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি ও তেলের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা আসতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা জোরালোভাবে বলতে চাই, এখন যে পরিস্থিতি তাতে জ্বালানির মূল্য বাড়লে ভোক্তার প্রকৃত আয়কে আরও কমিয়ে দেওয়ার প্রকৃত সময় নয়। যদি জ্বালানি সাশ্রয় গুরুত্বপূর্ণ হয় তাহলে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট দেখে, জ্বালানি তেলের উঠানামার বাজেট দেখে অন্তত ছয় মাস পরে এই ধরনের মূল্য সংক্রান্ত বিষয়টি যেন অর্থমন্ত্রী বিবেচনা করেন। তার আগে যেন বিষয়টি (দাম বৃদ্ধি) না হয়।

কোভিডের কারণে স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে ক্ষতি হলেও বাজেটে এর বরাদ্দ কমেছে। বলা হয়েছে, ডলারের মার্কেটে ভারসাম্য আনা হবে কিন্তু সেটা করতে গিয়ে যে ওষুধ সাজেস্ট করা হয়েছে এটা একটি ভুল ওষুধ। বাইরে পাচার হওয়া টাকা করের মাধ্যমে দেশে আনার সুযোগ দেওয়া হলে তা ইতিবাচক হবে না। এটা যারা সৎ করদাতা ও কর ব্যবস্থায় যারা বিশ্বাস করেন তাদের প্রতি স্রেফ চপেটাঘাত বলেও মন্তব্য করেন গোলাম মোয়াজ্জেম।

অনুষ্ঠানে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বর্তমান চড়া মূল্যের বাজরে অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতি পাঁচ দশমিক ৬ শতাংশে রাখার যে প্রাক্কলন করেছেন তা বাস্তবতার সঙ্গে কোনো মিল নেই। সরকারি হিসাবেই এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছয় দশমিক ২৯ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসের দাম বাড়ছে। কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করার পর থেকেই বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বাড়ছে।

আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি কীভাবে কমে যাবে সে বিষয় নিয়ে বাজেটে সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাজেটে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির হিসাব কীভাবে এলো, এটা কীভাবে কমবে তা বলা হয়নি।

বাজেটে বিত্তশালীদের জয় হয়েছে জানিয়ে সিপিডি সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, আসলে সম্পদশালী, বড় উদ্যোক্তা, টাকা পয়সা বাইরে পাচার করেছেন তাদের জয়টাই বেশি দেখা যাচ্ছে। সেই অর্থে গরীব মানুষের জন্য বর্ধিত হারে সুযোগ সুবিধা আসেনি। সবচেয়ে বড় উপেক্ষিত জনগোষ্ঠী হলো মধ্যবিত্ত। কর ছাড়ের বিষয়টা সেখানে আসেনি। তিনি কোভিড সুরক্ষাসামগ্রী ও প্রযুক্তি পণ্যের ওপর বাড়তি কর প্রয়োগের সমালোচনা করেন।

তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, সরকার ধরে নিয়েছে কোভিড চলে গেছে। কোভিড চিকিৎসা সামগ্রীর ওপর তাড়াহুড়ো করে কর আরোপের দরকার ছিল না। আরেকটা ওয়েভ আসলে সেখান থেকে ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেবে।

(ওএস/এসপি/জুন ১০, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test