E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শুস্ক মৌসুমে ব্যস্ত কক্সবাজারের শুঁটকি মহালগুলো

২০১৫ ডিসেম্বর ০৭ ১২:৩৪:৪৮
শুস্ক মৌসুমে ব্যস্ত কক্সবাজারের শুঁটকি মহালগুলো

কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহি খাবার সামুদ্রিক শুটকি। সমগ্র বাংলাদেশের এমনকি বিদেশেও শুটকির জন্য বিখ্যাত কক্সবাজার। বাঙ্গালী বলতেই শুটকি খেতে পছন্দ করেন। বাংলাদেশের শুটকি প্রক্রিয়াজাত মূলত সাগর তীরবর্তী কক্সবাজার নির্ভর। বছরের এ সময় আবহাওয়া শুঁটকি তৈরি জন্য সবচেয়ে উপযোগী হওয়ায় কক্সবাজার উপকূলে এখন চলছে শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণের কাজ। তাই এখন কর্মব্যস্ত কক্সবাজারের সমুদ্র তীরবর্তী উপকূলের শুঁটকি মহালগুলো। ফলে মানসম্মত শুঁটকি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে।

এ সময়ে সাগর থেকে ধরে আনা শুটকি মাছের মধ্যে রয়েছে রূপচাঁদা, ছুরি, লাক্কা, কোরাল, সুরমা, শৈল, কাচকি, চিংড়ি, মলা, লইট্ট্যা, গইন্যা, বাইলা, ফাইস্যাসহ প্রায় ২০ প্রজাতির মাছ। কক্সবাজারে শুটকি শুকানোর সবচেয়ে বড় মহাল কক্সবাজার শহর সংলগ্ন পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের তীরে নাজিরারটেক এলাকা।

সরেজমিনে জানা যায়, সাগর হতে আহরিত এসব কাঁচা মাছ ৪ থেকে ১২ দিন রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় হরেক রকমের শুঁটকি। কেউ সাগর থেকে আনা মাছ ধুয়ে নিচ্ছেন, কেউ কাটছেন আবার কেউ তা বাঁশের মাচায় বেধে রোদে দিচ্ছেন। এসব কাঁচা মাছকে মাছি ও পোকামাকড় থেকে রক্ষা করার জন্য প্রকৃতিকভাবে সুর্য্যরে প্রখর তাপ ব্যবহার করা হয় বলে শুটকী উৎপাদনের সাথে জড়িতরা জানান।

বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী নাজিরারটেকের প্রায় ১শ' বিশ একর এলাকা জুড়ে দেখা গেছে শতশত বাঁশের মাচায় নানা জাতের কাঁচা মাছ শুকানোর ব্যস্ততা। শুধু নাজিরারটেকের উপকূলে নয়, শুটকি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে এ অঞ্চলের হাজারো মানুষের জীবিকা। কক্সবাজার জেলার সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, টেকনাফ সেন্টমার্টিন এলাকায় শুটকি উৎপাদনের পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত ও উৎপাদন হয়ে থাকে। তাছাড়া সামুদ্রিক মাছের সংকটের কারণে কাঁচা মাছের বাজারদাম চড়া হলেও শুটকি উৎপাদনের প্রবণতা হ্রাস পায়নি মোটেও।

কক্সবাজারের শুঁটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে বলে জানালেন নাজিরারটেক মৎস্য ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি সাইদুল্লাহ।

কক্সবাজার জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক অমিতোষ সেন জানালেন, কীটনাশক মুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত শুঁটকি তৈরিতে সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে।

কক্সবাজার নাজিরারটেক শুটকি মহালে গত বছর ৫শ’ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদিত হয়। এছাড়া জেলার ২৯টি কারখানায় উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির শুঁটকি বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।
উৎপাদিত এসব শুটকী মাছ অনেকের কাছেই অত্যন্ত আকর্ষণীয় সুস্বাদু খাবার।

শুটকি রপ্তানীকারকদের সুত্রে আরো জানা গেছে, গরমের সময় অর্থাৎ ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক এ তিন মাস যখন দক্ষিণের বাতাস শুরু হয় তখন মাছির ডিম পাড়ার মৌসুম। এসময় মাছি বসলেই ৬ ঘন্টার মধ্যে বাচ্চা ফোটা শুরু হয় এবং শীত মৌসুমে বাতাস যখন উত্তর থেকে প্রবাহিত হয় মাছি বসলেও ডিম হয় না। তাই এসময়ে শুটকী উৎপাদনকারীরা কীটনাশক বিহীন শুটকি মাছ উৎপাদন করেন।

ব্যবসায়ীদের সুত্রে জানা গেছে, শুটকি মূলত রপ্তানী হয় মধ্যপ্রাচ্য ও হংকং এ। কীটনাশক ঔষধ ব্যবহার বন্ধ স্বাস্থ্য সম্মত শুটকী তৈরী, বর্ষা মৌসুমে শুটকি তৈরীর প্রযুক্তি সরবরাহ এবং এখাতে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ নিশ্চিত করা গেলে শুটকি রপ্তানীতে অনায়াসে ১শ কোটি টাকার অধিক বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে বলে এ সম্পর্কিত ব্যবসায়ীরা মনে করেন।

(একেডিএইচ/এইচআর/ডিসেম্বর ০৭, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test