E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বরগুনার গ্রামীণ অর্থনীতিতে অবদান রাখছে তালের শাস

২০১৪ জুন ০১ ১৫:১৫:০৩
বরগুনার গ্রামীণ অর্থনীতিতে অবদান রাখছে তালের শাস

বরগুনা প্রতিনিধি : সারি সারি তালগাছ। রাস্তার দু’ধারে কিংবা বিলের আঁইলে এমন দৃশ্য এখন খুব একটা চোখে পড়ে না। তাল গাছে ‘কানা বগীর ছা’ ও ‘বাবুই পাখির বাসা’ও নেই আগের মতো। কালের বিবর্তনে অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। তবে ‘এক পায়ে দাঁড়িয়ে’ থাকা তালগাছের কদর এখন বেড়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি তাল শাস ও পাকা তালের চাহিদা রয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত তাল শাসের চাহিদা রয়েছে। মওসুমি ফল হিসেবে ‘তাল শাস’ গ্রামীণ অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।

তালগাছ মালিক এবং তাল শাস ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে। এলাকা ভেদে একটি তাল শাস চার থেকে সাত টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
তাল শাস ব্যবসায়ী পরিমল চট্রপাধ্যায় বলেন, একটি গাছের তাল ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পাইকারি দরে কেনা হচ্ছে। ঢাকায় নিয়ে এক হাজার তাল শাস আট থেকে নয় হাজার টাকা বিক্রি করছি।
পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা আলআমীন বলেন, কেউ একটু তরল, কেউ একটু শক্ত শাস পছন্দ করেন। প্রতিদিন ৬০ থেকে ৮০ কাঁদি তাল বিক্রি করছি।
মালেক গাজি জানান, এখন পুরোপুরি তাল শাসের মওসুম চলছে। একটি তাল পাঁচ থেকে সাত টাকা বিক্রি করছি। প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার তাল শাস বিক্রি হচ্ছে। তিনি জানান, এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত তাল শাস বিক্রি করা যাবে।
এ বছর তালের ভালো ফলন হয়েছে জানিয়ে বরগুনা সদর উপজেলার খেজুরতলা গ্রামের মনিরুল হক বলেন, তাল শাস খাওয়ার প্রবণতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। তাল শাসের কদর বেড়ে যাওয়ায় ‘পাকা তাল’ কমে যাচ্ছে। এতে করে ‘তালবড়া’, ‘পাতা পোড়া’, ‘চুষি’, ‘তালক্ষীর’, ‘তালমিছরি’সহ বিভিন্ন পিঠাপুলি তৈরি কমে গেছে।
কবি ও ছড়াকার খান মুহম্মদ মঈনুদ্দীনের ‘কানা বগীর ছা’ ছড়ার প্রসঙ্গ টেনে বরগুনা সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক পরিমল কর্মকার বলেন, ঐ দেখা যায় তাল গাছ/ ঐ আমাদের গাঁ/ ঐ খানেতে বাস করে/ কানা বগীর ছা। কবির এই অসাধারণ বর্ণনায় তালগাছ আরো জীবন্ত হয়েছে এবং এর প্রয়োজনীয়তাও বেড়েছে। পরিমল কর্মকার আরো বলেন, কবি রজনীকান্ত সেনের ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতায় তালগাছে বাবুই পাখির বর্ণনাও অসাধারণ।
বরগুনা জেলার সিভিল সার্জন ডা. জহির উদ্দিন বলেন, একটি তালে শাসে যে পরিমাণ পুষ্টিগুণ রয়েছে, ওই পরিমাণ ভাতেও সেই পুষ্টি নেই। তাল শাসে শর্করা, স্নেহ ও আমিষ জাতীয় গুণ ছাড়াও অন্যান্য পুষ্টিগুণ রয়েছে। আর পাঁকা তালে ভিটামিন ‘এ’সহ অন্যান্য উপাদান রয়েছে। বাজারজাতকৃত বিভিন্ন পানীয়, তথাপি ফাস্টফুড জাতীয় খাবার না খেয়ে ‘তাল শাস’ খাওয়া অনেক স্বাস্থ্যসম্মত ও উপকারি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ড. সফি উদ্দিন বলেন বলেন, কাঁচা (শাস) ও পাকা তাল গ্রামীণ অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। তাছাড়া দুর্যোগ সহিষ্ণুতার কথা বিবেচনা করে দেশে বেশি বেশি তালগাছ লাগানো প্রয়োজন।
(এমএইচএম/এএস/জুন ০১, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test