E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিশ্বকাপের ডামাডোলে টিভি বিক্রির ধুম

২০১৪ জুন ০২ ১৬:০৬:২৭
বিশ্বকাপের ডামাডোলে টিভি বিক্রির ধুম

স্টাফ রির্পোটার : বিশ্বকাপ ফুটবল আসরকে সামনে রেখে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে টেলিভিশন বাজার। ব্যাপক হারে বিক্রি হচ্ছে সিআরটি, এলসিডি এবং এলইডি টেলিভিশন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে দেশীয় ব্র্যান্ডের টিভি। ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে ওয়ালটন ও মার্সেলের মতো দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো নিয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

ক’দিন পরই ব্রাজিলে শুরু হচ্ছে দি গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ- বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ টেলিভিশনের পর্দায় সরাসরি উপভোগ করবেন এই খেলা। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের ফুটবল পাগল মানুষেরাও। খেলা দেখতে হবে তাই যাদের বাসায় টিভি নেই, কিংবা টিভিটা পুরনো হয়ে গেছে- তারা ছুটছেন টেলিভিশনের দোকানে।
ফুটবল উন্মাদনায় টেলিভিশনের বাড়তি চাহিদা সামলাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে টিভি উৎপাদনকরী ও বিক্রেতারা। উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে কয়েকগুন। স্বাভাবিকের চেয়ে মজুদ বাড়ানো হয়েছে। সেইসঙ্গে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে দাম কমানোসহ নানা অফারও দেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, দেশের শীর্ষ টিভি উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন টেলিভিশন উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। কারখানায় কাজ চলছে দিন-রাত। বাড়তি চাহিদা মোকাবেলায় তাদের এই উদ্যোগ। উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় ওভারহেড কস্ট কমে যাওয়ায় দামও কমিয়েছ ওয়ালটন। বেড়েছে পণ্যের গুনগত মানও। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষের চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে ওয়ালটন ব্যাপক হারে সিআরটি টিভি তৈরি করছে। ওয়ালটন সব ধরনের টিভিতে এনেছে নতুন নতুন মডেল।
বাংলাদেশ টিভি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর ১২ থেকে ১৩ লাখ টেলিভিশন দেশে উৎপাদন ও সংযোজন হয়। প্রায় ২ লাখ টেলিভিশন সরাসরি আমদানি হচ্ছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশে টিভি বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৪৪ হাজার। চলতি অর্থবছরে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে বিক্রি হয়েছে ৭ লাখ ৩৮ হাজার।
আর বি গ্রুপের হেড অব মার্কেটিং এমদাদুল হক সরকার বলেন, ওয়ালটনের টেলিভিশন বিক্রি গত এপ্রিল মাসের তুলনায় মে মাসে ৪১ শতাংশ বেড়েছে। উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি মজুদও বেড়েছে। আগে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টিভি মজুদ করা হতো। এবার ১ লাখ ৭০ হাজার থেকে দুই লাখ টিভি মজুদ রেখেছি। তিনি আরো জানান, দাম ক্রেতাদের হাতের নাগালে রাখার পাশাপাশি মডেলে বৈচিত্র আনা হয়েছে ওয়ালটন টেলিভিশনে।
ওয়ালটন টেলিভিশনের বিপণন বিভাগের ইনচার্জ মওদুদ পারভেজ মামুন জানান, আগামী ৪৫ দিনে ৭০ হাজার টিভি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তাদের। ইতিমধ্যে ১৪ ইঞ্চি সিআরটি টেলিভিশনের ১০টি, ২১ ইঞ্চির ৮টি মডেল বাজারে ছাড়া হয়েছে। ক্রেতাদের দীর্ঘদিনের চাহিদা অনুযায়ি ১৪ ইঞ্চি টিভির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ হাজার ৬০০ টাকা, ২১ ইঞ্চির দাম ১০ হাজার ৯৫০ টাকা। ১৪ থেকে ৫৫ ইঞ্চি এলইডি টিভির একাধিক মডেল বাজারে ছাড়া হয়েছে। প্রত্যেকটি মডেল ক্রেতাদের রুচি ও চাহিদা অনুযায়ি তৈরি করা হয়েছে। দামও কমানো হয়েছে উল্লেখ্যযোগ্য হারে। ৩২ ইঞ্চি এলইডি টিভির দাম কমে এখন দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৯০০ টাকায়।
তিনি আরো জানান, বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি ফোর-কে ইউএইচডি এলইডি টিভি শিগগিরই বাজারে আনবে ওয়ালটন। ক্রেতাদের জন্য ওয়ালটন দিয়েছে আরেকটি সুখবর- ১ জুন থেকে ওয়ালটনের টেলিভিশন কিনলে সঙ্গে একটি পলো শার্ট উপহার দেয়া হচ্ছে। বিশ্বকাপ চলাকালে কারো টিভির সমস্যা হলে তার খেলা দেখায় যেন বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য বিকল্প ব্যবস্থা রেখেছে ওয়ালটন। পাশাপাশি প্যানেল, রিমোটের দাম কমানো হয়েছে। ৪৫ টি স্থানে চালু করা হয়েছে সার্ভিস সেন্টার। বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্তে বসে সেবা মিলবে।
মার্সেল ব্র্যান্ডের বিপণন বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা শামীম আল মামুন জানান, তারাও ক্রেতাদের বাড়তি চাহিদা মেটাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। দাম কিছুটা কমানোর পাশাপাশি টিভির সঙ্গে ক্রেতাদের দেয়া হচ্ছে আকর্ষণীয় পলো শার্ট।
বাংলাদেশ টিভি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান বলেন, দেশে বর্তমানে শতাধিক উদ্যোক্তা টেলিভিশন কারখানা স্থাপন করেছেন। তিনি বলেন, সরকারের সহায়তা পেলে এ খাতের উন্নয়ন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
সরেজমিনে রাজধানীর কয়েকটি ইলেকট্রনিক পণ্যের বাজার ঘুরে দেখা যায়, ফুটবল বিশ্বকাপ সামনে রেখে অনেক ব্র্যান্ডের টেলিভিশনে ছাড় ও পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে টিভি বিক্রি এখন দ্বিগুনেরও বেশি। জুন মাসের বেতন পেলে আরো বেশি সংখ্যক চাকুরিজীবী ক্রেতা টিভি কিনবেন বলে তাদের প্রত্যাশা।
দেশীয় ব্র্যান্ডের পাশাপাশি অনেক বিদেশী ব্র্যান্ডও এরইমধ্যে প্রস্তুতি নিয়েছে। সনি ব্র্যান্ডের আমদানিকারক র‌্যাংগস ইলেকট্রনিক্সের ন্যাশনাল সেলস ম্যানেজার সারোয়ার জাহান বলেন, প্রতি মাসে সনি ব্র্যান্ডের দু-আড়াই হাজার টেলিভিশন বিক্রি হয়। তবে ফেব্রুয়ারিতে তা চার হাজারে পৌঁছে। চলতি মাসে বিক্রি পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জানা গেছে, দ্রুত বর্ধনশীল টিভি তৈরি খাত নিয়ে সংশ্লিষ্টরা ভীষন আশাবাদী। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে বাংলাদেশে তৈরি টেলিভশন। চাহিদার বিচারে টেলিভিশন প্রস্তুত শিল্পে বিশ্বের অন্যতম দ্রুত অগ্রসরমান বাজার বাংলাদেশ।
ওয়ালটন, মার্সেল ছাড়াও রাজধানীর শোরুমগুলোতে যেসব ব্র্যান্ডের টিভি বেশি বিক্রি হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে- সনি, স্যামসাং, এলজি, সিঙ্গার, প্যানাসনিক, ট্রান্সটেক ইত্যাদি।
(এএস/জুন ০২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test