E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শেরপুরে কৃৃষি ব্যাংকের কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা : তদন্তে নেমেছে পুলিশ

২০১৪ এপ্রিল ০৯ ১৭:৩০:১৫
শেরপুরে কৃৃষি ব্যাংকের কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা : তদন্তে নেমেছে পুলিশ

শেরপুর প্রতিনিধি : বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক শেরপুর শাখার সুপারভাইজার ও সিবিএ নেতা মিজানুর রহমান ঋণ আদায়ের প্রায় দেড় কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ ও ব্যাংকের বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। শেরপুর সদর থানায় ব্যাংক ম্যানেজারের দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) বন্দে আলী মিয়া ৯ এপ্রিল বুধবার দুপুরে শহরের খরমপুর এলাকায় ব্যাংক শাখাটি পরিদর্শণ করেছেন। এসময় তিনি ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে কথা বলেন, ঘটনাস্থলের নকশা প্রণয়ন করেন এবং সুপারভাইজার মিজানুর রহমানের তত্বাবধানে থাকা ঋণ হিসাবের তথ্যাবলি পর্যবেক্ষণ করেন।

এদিকে, এ ঘটনায় কৃষি ব্যাংকের ৪ সদস্য বিশিষ্ট বিভাগীয় তদন্ত কমিটিও বুধবার থেকে তাদের অনুসন্ধান ও তদন্তকাজ শুরু করেছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে বিভাগীয় তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্ট প্রদান করবে বলে তদন্ত কমিটির প্রধান সহকারী মহা ব্যবস্থাপক (এজিএম) রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন। তিনি বলেন প্রাথমিকভাবে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে বাংকের ঋণ আদায়ের ৫২ লাখ টাকা এবং বাড়ী তৈরী ঋণের ৩০ লাখ টাকা সরকারী অর্থ আত্মসাতের হিসাব পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে আরও অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন টাঙ্গাইল-জামালপুর-শেরপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয় পৃথকভাবে কৃষি ব্যাংক শেরপুর শাখার সিবিএ নেতা মিজানুর রহমানের অর্থ আত্মসাতের ঘটনাটি তদন্ত করবে জানিয়েছেন শেরপুর সদর থানার ওসি মাজহারুল করিম। তিনি বলেন, এ ঘটনায় ব্যাংকের আরও কেউ জড়িত আছে কিনা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কৃষি ব্যাংক শেরপুর শাখার সুপারভাইজার আওয়ামী লীগ পন্থী সিবিএ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন শেরপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান গত ২৩ মার্চ থেকে ব্যাংকে অনুমোদিতভাবে অনুপস্থিত রয়েছেন। তার ঋণ আদায় হিসাব পর্যালোচনা করে ব্যাপক গড়মিল ও কোটি টাকা আত্মসাতের তথ্য গত দুই দিন আগে ফাঁস হলে তোলপাড় শুরু হয়। তিনি শেরপুর সদর উপজেলার বেতমারী, ঘুঘুরাকান্দি এবং পৌর এলাকার তাতালপুর, মোবারকপুর, মিরগঞ্জ, নৌহাটা, গৌরীপুর, সজবরখিলা এলাকায় ঋণ বিতরণ ও আদায়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। গত ১৮ দিন ধরে তার কোন হদিস মিলছেনা।
তদন্ত সূত্রগুলো জানিয়েছে, ঋণ গ্রহীতাদের কাছ থেকে আদায়কৃত অর্থ ব্যাংকে জমা না করে খুব কৌশলে ধাপে ধাপে মোটা অংকের অর্ত আত্মসাত করা হয়েছে। গ্রাহকদের নিকট থেকে ঋণ আদায় করে তাদের রশিদ দেওয়া হলেও রশিদ বইয়ের মুড়িতে সেটি উল্লেখ করা হয়নি। দশ/বারোটি ঋণ আদায়ের পর পরবর্তী দশ/বারোটির অর্থ জমা না করে তিনি নিজের কাছে রেখেছেন। প্রায় দুই-আড়াই বছর ধরে তিনি এভাবে ঋণ আদায়ের অর্থ আত্মসাত করেছেন।
সূত্র মতে, ব্যাংকগুলোতে সিবিএ’র দাপটে সাধারন কর্মচারীরাতো বটেই খোদ কর্মকর্তাও থাকেন অসহায়। কৃষি শেরপুর আঞ্চলিক অফিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সিবিএ নেতাদের দাপটে কর্মকর্তাদের সবসময় তটস্থ থাকতে হয়। তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রথমদিকে তেমন আমলে নেওয়া সম্ভব হয়না। তিনি বলেন, সিবিএ নেতারা ঠিকমতো অফিস করেন না। তারা সর্বদা একে ওকে বদলি আর ঋণ নিয়ে তদবিরে ব্যস্ত থাকেন। রাজনৈতিকভাবে তারা শক্তিশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলেই নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। এই সিবিএ নেতার ক্ষেত্রেও এমন ঘটনাই ঘটেছে। এতে করে ট্রাস্টেড প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের ক্ষতি হচ্ছে।
এদিকে, শহরের নবীনগর মহল্লায় লাপাত্তা হওয়া সিবিএ নেতা মিজানুর রহমানের বাসায় গিয়ে জানা যায়, তিনি প্রায় ১৮ দিন যাবত বাসায়ও কোন কিছু না বলে নিখোঁজ রয়েছেন। এনিয়ে পরিবারের সদস্যদের মাঝেও উদ্বেগ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। তার স্ত্রী ফরিদা ইসলাম জানান, বাসায় কাউকে কিছু না জানিয়েই গত ১৮ দিন যাবত তার স্বামী নিখোঁজ রয়েছেন। বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাড়ীতে খোাঁজাখুজি করেও তার কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছেনা। তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রয়েছে।
(এইচবি/এএস/এপ্রিল ০৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test