E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নওগাঁর বরেন্দ্র অঞ্চলে আমের বাম্পার ফলন

২০১৪ জুন ১৬ ১৭:৫৩:০৬
নওগাঁর বরেন্দ্র অঞ্চলে আমের বাম্পার ফলন

নওগাঁ প্রতিনিধি : উত্তরের ঠা-ঠা বরেন্দ্র অঞ্চল খ্যাত নওগাঁ জেলায় অনাবাদি জমিতে আম চাষ করে বিরাট সাফল্য পেয়েছেন এলাকার কৃষকরা। জেলার পোরশা, সাপাহার, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলা উপজেলায় আমের বাগান করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন এলাকার অনেক অস্বচ্ছল কৃষক পরিবার । বরেন্দ্র এলাকার শক্ত-এঁটেল মাটি আমচাষের উপযোগী হওয়ার ফলে এখানে সুস্বাদু আমচাষ এবং বিশাল বাজার গড়ে উঠার উজ্জল সম্ভাবনা লক্ষ্য করছেন স্থানীয় কৃষি গবেষকরা।

সমতল থেকে প্রায় ৩/৪ ফুট উচু হওয়ার ফলে নওগাঁ জেলার ৪টি উপজেলা পোরশা, সাপাহার, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলাকে ঠা-ঠা বরেন্দ্র এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভুমির অসমতল, শক্ত এঁটেল, এবং সেচ সংকট থাকার ফলে এ এলাকার হাজার হাজার একর জমি বিগত ৫/৬ বছর আগেও স্থানীয় কৃষকের কোন কাজে আসছিল না । এসব জমির মধ্যে কিছু সেচ সুবিধার আওতায় আনা হলেও বেশির ভাগ ছিল পরিত্যক্ত । কিন্ত বিগত ৬/৭ বছর আগে এখানে কিছু ব্যক্তি পরিক্ষামুলক ভাবে ও বানিজ্যিক আকারে অনাবাদি এসব জমিতে বাগান তৈরি করে ক্ষিরসাপাত, গোপালভোগ, মোহন ভোগ, ল্যাংরা, মল্লিকা, রুপালী, চষা, স্বর্নলতা বিভিন্ন জাতের আম চাষ শুরু করেন। শক্ত এঁটেল মাটির ফলে মাত্র দেড়-দুই বছরের মধ্যেই আমগাছ থেকে আম আসতে শুরু করে। তবে গত ৩ বছর থেকে হাঁড়ি ভাঙ্গা আম সাপাহারে ব্যাপক হারে চাষ শুরু করেছে স্থানীয় চাষীরা । সাপাহার মধইল গ্রামের আম চাষী মোহিনী কান্ত জানান, তিনি এবার ২০ টি আম গাছে হাঁড়িভাঙ্গা জাতের আম চাষ করে ব্যাপক ফলন পেয়েছেন । প্রতিটি আম দু’শ’ থেকে ৩ শ’ গ্রাম হয়েছে । এ ছাড়া পত্নীতলা উপজেলার নির্মইল ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের আমচাষী আলাউদ্দিন জানান, ২০০৩ সালে তার বাড়ি সংলগ্ন আড়াই বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের ৩শ’ আম গাছ রোপন করেন তিনি । মাত্র তিন বছর পর থেকে আম ধরা শুরু করে । চলতি বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকার কারণে ভাল আম হয়েছে । বর্তমান তার ২৫৫ টি আম গাছ থেকে ৩শ’ মন আম পাবেন বলে আশা করছেন তিনি। বেশ কয়েকজন পাইকার তার বাগানের দাম বলেছে ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা । এ অবস্থায় ৮ লাখ টাকা দাম হাঁকছেন বাগান মালিক আলাউদ্দিন। । গেল বছর তিনি বাগান টি বিক্রি করেছিলেন সাড়ে ৩ লাখ টাকায় । এবার আমের ফলন বেশি এবং আমের আকার বড় হয়েছে। ফলে, দিগুন ফলন হওয়ার কারণে দামও হাঁকছেন দ্বিগুন ।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও আম গবেষক ড. আবুল হায়াৎ মো. ইসমাইল হোসেন গত প্রায় ১ দশক ধরে এ অঞ্চলের আম নিয়ে গবেষনা করছেন । তিনি জানান, বরেন্দ্র এলাকার মাটিতে এক ধরনের শুস্ক খনিজ উপাদান রয়েছে, যা আমের মিষ্টতা বাড়াতে অত্যন্ত সহায়ক। তিনি মনে করেন, খুব দ্রত বরেন্দ্র এলাকায় আমের বিপুল বাজার সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ রয়েছে। চলতি বছর নওগাঁয় ৮হাজার ৪শ’ ২৫ হেক্টর জমিতে গড়ে ওঠা আম বাগান এর মধ্যে শুধু বরেন্দ্র এলাকা সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর পত্নীতলায় আম বাগান গড়ে উঠেছে সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম নুরুজ্জামান মন্ডল জানান, অন্যান্য ফসলের চেয়ে আম চাষকে অধিক লাভজনক মনে করে এখানে এগিয়ে আসছেন চাষীরা । তিনি বলেন, মিষ্টি আমের জন্য এ অঞ্চলের মাটি অত্যন্ত সহায়ক । এ কারণে আমের সাইজ যেমন বড় তেমনই সু-স্বাদু। । চলতি বছর শুধু বরেন্দ্র এলাকা থেকে প্রায় ৭৫ কোটি টাকার আম বিক্রির মুনাফা পাবে চাষীরা। স্থানীয় এলাকা বাসী জানায়, মাটির গুন অনুযায়ী এখানকার আম চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের মত সু-স্বাদু হওয়ায় বাজারে এসব আমের ব্যাপক কদর দেখা দিয়েছে। আম চাষে আরো উদ্বুদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসে এলাকার অসংখ্য চাষী । চলতি বছর অনুকুল আবহাওয়ার ফলে বরেন্দ্র এলাকায় আমের বাগান গুলোতে ব্যাপক আম ধরেছে । দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেপারী এসে এসব বাগান থেকে আম কিনছে । মাত্র এক বিঘা পরিমান একটি বাগান থেকে দেড় থেকে দু’লাখ টাকা আয় করছে এখানকার আম চাষীরা। বিপুল সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় অনেক শিক্ষিত বেকার যুবকরাও বরেন্দ্র এলাকায় আম বাগান করতে এগিয়ে এসেছে।
(বিএম/এএস/জুন ১৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test