E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আমেনা থেকে এভ্রিল এবং আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি

২০১৭ অক্টোবর ০৩ ২০:০১:০১
আমেনা থেকে এভ্রিল এবং আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি

শাহেদ খান: আমরা যতটা না প্রতিহিংসাপরায়ণ তার চেয়ে বহুগুণ হুজুগে। তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে  প্রতিহিংসাপরায়ণতা এবং হুজুগে ভাব আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ঘটনা খোলসা করে বললে সহজে বুঝবেন। গত কয়েক মাস আগে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মারা যাবার দিন দু'এক আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আমারা তাকে মৃত ঘোষণা করেছিলাম। গত কয়েকদিন আগে ঢাকা উত্তরের মেয়র জনাব আনিসুল হক সাহেবও আমাদের হুজুগে স্বভাবের শিকার হয়েছিলেন, সেটা সকলের'ই কম বেশি জানার কথা।

মূল প্রসঙ্গে আসি গত দু'দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবচেয়ে আলোচিত এবং সমালোচিত বিষয়টি হচ্ছে 'মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ'। এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে অন্তর শোবিজ ও অমিকন এন্টারটেইনমেন্ট নামের দুটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে এবারই প্রথম ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’-এর ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে এসেছে প্রতিষ্ঠান দুটি। সমালোচিত হবার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা মারফত জানা যাচ্ছে বিচারকগণের পছন্দের বাইরে আয়োজকদের পছন্দানুযায়ী ‘জান্নাতুইল নাঈম’কে প্রথম ঘোষণা করা হয়েছে।

ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এ বিষয়ে আয়োজকদের নিয়ে সমালোচনা প্রাসঙ্গিক। কিন্তু যে মেয়েটি প্রথম হয়েছে তার দোষ কোথায়? তবে কেন আমরা তাকে নিয়ে ট্রল করছি? বিভিন্নভাবে হেয় করছি এক কথায় তার চরিত্র হননে উঠে পড়ে লেগেছি! তার দোষ এই যে সে তার জীবনে ঘটে যাওয়া বাল্যবিবাহ নামক একটা দুর্ঘটনার কারণে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার তথাকথিত অযোগ্যতার তথ্য লুকিয়েছেন।এজন্য প্রতিযোগিতার নিয়মানুযায়ী তার তথ্য গোপনের শাস্তি হতে পারে। তবে আমেনা থেকে এভ্রিল হওয়াতে দোষের কিছু দেখি না, আমরা যে সালমান শাহ বা উত্তম কুমারকে চিনি এগুলোও কিন্তু তাদের পরিবর্তিত নাম। ঘটনা প্রবাহে গ্রামীন একটা প্রবাদ মনে পড়ে গেল, ‘গরিবের বউ সবার ভাবি’। ঘটনা এমন দাড়িয়েছে তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দু'কলম না লিখলে বা এক আধটু ট্রল না করলে জাতে ওঠা যাবে না।

একটু লক্ষ্য করুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে আমরা যেটা করছি সেটি কতটুকু যুক্তিসংগত। আমার মতে সে অন্য সকল প্রতিযোগী থেকে আলাদা কারণ তার নিজের একটি গল্প রয়েছে। তার সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি তাতে মনে হয়েছে আমাকে যদি তাকে জাজ করার সুযোগ দেওয়া হতো তবে এ আসরের মত ভুলে নয়, আমি সুস্থ সজ্ঞানে তাকেই প্রথম নির্বাচিত করতাম এবং এটি আমার ব্যক্তিগত অভিমত।

একটু চিন্তা করে দেখুন আজ আমরা যাকে আমেনা থেকে এভ্রিল হয়েছে বলে তিরস্কার করছি, তাকে কতটা বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। কত প্রতিকূল পরিবেশের সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছে এ মঞ্চ পর্যন্ত আসতে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে যার বিয়ে হয়েছিলো, দু'মাস সংসারও করেছিল। সে সেই বাল্যবিবাহ নামক অভিশাপকে জয় করে এসে হাইস্পীডে বাইক চালায়, দেশের সেরা উইমেন বাইকার। শুধু তাই নয় মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি ইয়ামাহার মত কোম্পানির ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়েছেন। কতটুকু আত্মবিশ্বাস আর দৃঢ় প্রত্যয় থাকলে তার পক্ষে এভাবে ঘুড়ে দাড়ানো সম্ভব।

তার জীবনে ঘটে যাওয়া বাল্যবিবাহ নামক একটি দুর্ঘটনার কারণে তিনি ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার তথাকথিত যোগ্যতা হয়তো হারিয়েছেন! কিন্তু আমার মতে মেয়েটার সাহস আর আত্মবিশ্বাসই তার সবচাইতে বড় সৌন্দর্য্য, বড় যোগ্যতা। আমি মনে করি তাকে ট্রল না করে আরো বেশি উৎসাহিত করা উচিত, যাতে তাকে দেখে আমাদের সমাজের মেয়েরা এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা পায়।
হয়ত প্রতিযোগিতার নিয়মের অযুহাতে তার মুকুট কেড়ে নেওয়া হতে পারে। তবে সকল সামাজিক প্রতিকূলতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসে তিনি সমাজের বাল্যবিবাহের শিকার সকল মেয়েদের অনুপ্রেরণার যে মুকুট পেয়েছেন সেটা আজীবনের জন্য শুধুই তার।

লেখক: ছাত্র, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test