E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

একজন সাদা মনের মানুষ

২০১৭ অক্টোবর ১৭ ০৭:৫৮:৪১
একজন সাদা মনের মানুষ

মানুষটিকে চিনি মাত্র একবছর। পড়াশোনার বেশ বিরতির পর ফের যখন সাংবাদিকতা নিয়ে নতুন যাত্রা শুরু করি তখনই পরিচয় মানুষটির সাথে। স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ফ্যাকাল্টি রুমেই প্রথম দেখা। প্রথম দেখায় মনে হয়েছিল হয়তো আমার চেয়ে কয়েক বছরের সিনিয়র কোন বড় ভাই। ভাবিনি কখনও এতোটা শ্রদ্ধাবোধ কাজ করবে মানুষটির জন্য।

বিগত একবছরে মানুষটিকে শুধু দেখেছি, আর শিখেছি। কিভাবে মানুষ হতে হয়, কিভাবে মানুষ হয়ে মানুষের মতোন আচরণ করতে হয়, শিখেছি কিভাবে মনুষ্যত্ব তৈরি করতে হয় নিজের মধ্যে, কিভাবে আগুনের ফুলকিতে নিজেকে ঠান্ডা বরফ করে রাখতে হয়।

ঢাকায় আসার পর স্কুলের সবচেয়ে শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক ছিলেন আনাম স্যার। এর আগে যখন মফস্বলে ছিলাম তখন ছিলেন, কামাল স্যার। কামাল স্যার এখন মুন্সিগঞ্জের একটি সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। আমার হাতের লেখার ভূয়সী প্রশংসা করেন অনেকেই যার পুরোটার কৃতিত্বই কামাল স্যারের। নিজে হাতে কলম ধরে ধরে শিখিয়েছে কিভাবে 'অ' লিখতে হয়, কিভাবে 'আ' লিখতে হয়...

আনাম স্যার এখনো রাজধানী স্কুলেই আছেন, গণিতের সিদ্ধ হস্তের মানুষ তিনি। বিনয়ী আর হাসিখুশি স্বভাবের আনাম স্যারের বদৌলতেই এযাবৎ কালের সকল অংক পরীক্ষায় ফাটিয়ে দিয়েছি। সমাজ, বাংলায় ডাব্বা মারলেও অংকে ছিলাম বেশ পটু।

কলেজ জীবনে সবচেয়ে শ্রদ্ধাভাজন ছিলেন দিলীপ স্যার, কনক স্যার। দিলীপ স্যার এখন আছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কনক স্যার আছেন ওই কলেজে।

কখনোই কোন স্যারকেই জানানো হয়নি, স্যার, আপনাকে আমি অনেক শ্রদ্ধা করি, ভালবাসি। মাঝে মাঝে আফসোস হতো, ঈশ ! যদি ফিরে যেতে পারতাম স্কুল আর কলেজ জীবনে...

এখন সেই ইচ্ছেটা কমে গেছে প্রায় অর্ধশতাংশের বেশি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ১ বছর শেষ, ভাবতে কষ্ট হয় সেই ‘বড় ভাই’ মনে করা মানুষটিকে সরাসরি শিক্ষক হিসেবে পাবো আর ৩ বছর মাত্র। আসলে শুরুতে আমার বোঝায় ভুল ছিল, তিনি আমার শিক্ষক বড় ভাই নন। মানুষটিকে যতো দেখি ততোই মুগ্ধ হই। ফ্যাকাল্টি রুমের প্রতিটি শিক্ষক শিক্ষিকাকেই সম্মান করি। কিন্তু এই মানুষটিকে দেখলে কেন জানি স্থির হয়ে যাই, মুখে হাসি আনতেই ভয় হয় !! এমনটাও আবার না যে, তিনি খুব রাগান্বিত থাকেন। বিগত এক বছরে তাঁকে আমি এক সেকেন্ডের জন্যও রাগতে দেখিনি, কারো দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকাতেও দেখিনি।

কেউ অন্যায় করলেও কেমন হাসি মুখে তাঁকে বোঝানোর ক্ষমতা তাঁকে যেন স্বয়ং ঈশ্বর দিয়েছেন। ঈশ্বর তাঁকে হয়তো নিজ হাতে নিজের মতোন করে গড়েছেন। প্রচলিত আছে, ওয়ান পিস মেড, কারিগর ডেড। মানুষটির জন্যই হয়তো কথাটি সত্য। এমন মানুষ সত্যি আর হয়তো পৃথিবীতে নেই। অমায়িক, আর মাটির মানুষ।

মানুষটির চোখের দিকে তাকাতে ভয় হয়, ভয়টা সম্মানের। মানুষটির সামনের চেয়ারে বসতে ভয় হয়, ভয়টি সম্মানের। মানুষটিকে সবসময় হাসতে দেখলে ভয় হয়, না জানি কি কষ্ট বুকে চেপে আমার সাথে হাসছে, কথা বলছে।

আজ পর্যন্ত কোন কিছু নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নিরাশ হইনি, নেগেটিভ কোন রিয়াক্ট পাইনি। স্যারের অবস্থানটা এমন, যে আপনি যেকোন কাজে তার সাহায্য চেয়ে নিরাশ হবেন না। সে হোক কোন পড়াশোনার বিষয়, হোক কোন ব্যক্তিগত ব্যাপার, হোক পারিবারিক ব্যাপার। স্যার এতো সহজভাবে বিষয় গুলো সলিউশন করে ফেলেন যা অবচেতন মনেও হয়তো আপনার কাছে আসেনি।

সৌভাগ্য হয়েছে, স্যার সরাসরি ক্লাস নিয়েছিলেন। শুধু মুগ্ধ হয়ে থাকতাম মানুষটার ক্লাসে, অপেক্ষায় থাকতাম কখন কবে স্যারের কাঙ্ক্ষিত ক্লাস আসবে। একমুখ হাসি নিয়ে ক্লাসে ঢুকবেন, ঢুকেই ‘কেমন আছেন আপনারা ?’

চোখে রিমলেস চশমা, ফরমাল প্যান্ট, ফরমাল শার্ট আর সাবলিল ভঙ্গিতে পুরো ডিপার্টমেন্টে তার বিচরণ যা মুগ্ধ করে প্রতি মুহূর্তে। যতো দেখি ততোই মুগ্ধ হই। নতুন করে শিখি আর নিজেকে মনে মনে বলি, মানুষ হতে ঢের বাকি পাঞ্জেরী।

স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সাংবাদিকতা বিভাগের প্রতিটি সদস্যই বুঝে গিয়েছেন আমি কার কথা বলছি। মানুষটি সম্পর্কে লিখে শেষ করতে পারবো না। পাতার পর পাতা শেষ হয়ে যাবে তবে শেষ হবে না প্রিয় ‘সজীব সরকার’ স্যারের কথা। সাদা মনের মানুষ আমি দেখিনি, দেখেছি সজীব স্যারকে।

নামের সার্থকতা রেখেছেন তিনি, ‘চিরসবুজ’ একজন মানুষ। স্যার, সত্যি অনেক বেশি ভালোবাসি আপনাকে। অনেকসময় আপনার সামনে কথা বলতেও ভয় হয়, তাকাতেও ভয় হয়। স্যার, সবসময় এমন থাকবেন। আমি গর্বিত আমি সজীব স্যারের শিক্ষার্থী।

একজন সজীব সরকার পৃথিবীতে একটাই হয়...

(ব্লগ থেকে নেয়া)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test