E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

'শিল্পবোধ নেই, ডুব দেখতে যাবেন না'!

২০১৭ অক্টোবর ২৮ ১২:০৫:৪৬
'শিল্পবোধ নেই, ডুব দেখতে যাবেন না'!

মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ 


ডুব দেখতে হলে যাওয়ার আগে আপনার কিছু করনীয় আছে।

নিজেকে দশ মিনিট সময় দিন। চোখ বুজে কয়েকটা নাম মনে করার চেষ্টা করুন। ‘তারেক মাসুদ’, মনে মনে পড়ছে? ওকে আগান।

আলমগীর কবির, চিনছেন না? তাইলে থামুন। আপনার ডুব দেখার দরকার নাই। ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউট যার ছবিকে সেরা দশ ছবির তালিকায় রাখে তাকেই চেনেন না। ডুব দেখে কী করবেন?

তাও দেখতে চান? ওকে, চোখ বন্ধ করুন। এবার ভাবুন ‘জহির রায়হান’। চিনতে পারছেন? ওকে আগান।

এবার চোখ বুজে ভাবুন ‘ঋত্বিক কুমার ঘটক’। নাম মনে পড়ছে? তার কোনো ছবির নাম মনে পড়ছে না? ঠিক আছে ছাড়। আগান।

ভাবুন সত্যজিৎ রায়। খুব মনে পড়ছে? হীরক রাজার দেশে দেখেছেনও? ঠিক আছে, পাশ। আগান।

ঋতুপর্ণা ঘোষ? ঐ যে কেমন করে যেন কথা বলে..। ঠিক আছে আগান।

একটু দম নিয়ে ভাবুন ‘আব্বাস কিয়ারোস্তামি’। অন্ধকার? কিছুই মনে পড়ে না? তাকান। একটু আলো নিন। আবার চোখ বন্ধ করুন।

এরপর আসবে জঁ লুক গদারের নাম, আসবে মোহসেন মাখমালবাফ, রোবের ব্রেসোঁ, ফেদেরিকো ফেলিনি, ফ্রাংক কাপরা, রোমান পোলানস্কি। এইসব নামগুলোর সাথে পরিচয় না থাকলে আপনার ডুব দেখার দরকার নেই।

কেননা আপনি শুধু মুখের ভাষা পড়তে পারেন। নৈশব্দের ভাষা আপনার জানা নেই। আর পরিচালক বলেছেন, ‘ডুব’ নৈশব্দের সিনেমা। ‘কুত্তারবাচ্চা, তোকে আজ খেয়ে ফেলবো কুত্তারবাচ্চা’ টাইপ ডায়ালগের সিনেমা না। আমি মোস্তফা সারওয়ার ফারুকীকে এইসব পরিচালকের সমকক্ষ মনে করছি না, তবে তিনি উনাদের ঘরানার।

অনেকেই বলেছেন ‘ডুব’ চলচ্চিত্র হয়ে ওঠেনি। আসলেই তাই। কালা বন্দুক না থাকলে সেটা আবার চলচ্চিত্র হয় নাকি? ভিলেন নায়কের বোনকে রেপ করবে। আমরা নায়কের পক্ষে হলেও চাইবো একটু ভালো করে, সময় নিয়ে যেন দেখায়। নায়ক এসে ভিলেনকে পেটাবে। আমার বোনের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে আয় ডিশকাঁও... এসব না থাকলে আসলেই তো সিনেমা হয় না।

শিল্পবোধ নেই, আপনি দৌড়ে চলে গেলেন ডুব দেখতে। আপনার কারণে একজন শিল্পের সমঝদার দর্শক টিকেট পেল না, এমন দর্শক সম্ভবত পরিচালক নিজেও চান না।

ডুব হুমায়ূন আহমেদের জীবনের ঘটনা নিয়েই। নতুন কিছু নেই। আমরা যা জানি তাই। মেয়ের বান্ধবীর সাথে প্রেম... দুই পরিবারের টানাপোড়ন, মেয়ে বাবার দূরত্ব সৃষ্টি, বাবাকে প্রচণ্ড ভালোবাসা থেকে ঘৃণা করার চেষ্টা, মেয়েকে প্রচণ্ড ভালোবাসার টানে ভালোবাসার চেষ্টা... এসবই তো। যা আমরা জানি তাই।

তারপরও, সারি সারি কৃষ্ণচূড়া গাছ। কুচি কুচি সবুজ পাতা। তার মাঝে আগুনলাল ফুল। সেই গাছের নিচ দিয়ে কেউ হেঁটে যাচ্ছে। আপনি তা দেখছেন গাছের উপর থেকে। পাখির মতো করে। এমনটা কখনো দেখেছেন? দেখার লোভ হয়? তাহলে ডুব দেখতে হবে।

চলচ্চিত্রের দুইটি ধারা আছে।
এক, জনপ্রিয় ধারা। আমরা যা দেখে অভ্যস্ত। কাজি মারুফের কালা বন্দুক। ‘তোর বোধহয় জানা নেই, শুধু বাঘই থাকে না’ টাইপ ডায়ালগে যা দেখি তাই কমার্শিয়াল ধারা।

আরেকটা হলো শৈল্পিক ধারা। যাকে বলে আর্টফিল্ম।

আর্ট ফিল্মের সংজ্ঞা হতে পারে এমন, বাণিজ্যিক মুনাফাকে পেছনে ফেলে নির্দিষ্ট শ্রোতা-দর্শকদের লক্ষ্যে নান্দনিক গতিশীলতায় পরীক্ষামূলক প্রকৃতি বা একটি রীতিবিরুদ্ধ অথবা অত্যন্ত প্রতীকী বিষয়বস্তু দ্বারা নির্মিত চলমান ছবিকেই বলা হয় আর্ট ফিল্ম।

এখন সিদ্ধান্ত নেন, আপনি কোন ছবির দর্শক?
বালাকৃষ্ণের ঘোড়া স্লিপ কেটে ট্রাকের নিচ দিয়ে যায় সেই ছবির দর্শক, নাকি বাবার কফিনের পাশে বাকরুদ্ধ মেয়ে ফিসফিস করে বলছে, ‘বাবা- তোমাকে ভালোবাসি। ভীষণ ভালোবাসি’, সেই ছবির দর্শক।

এরপর আসেন গল্প করি, ডুব কেমন ছবি। আদৌ ছবি হয়েছে কি না।

লেখক : সাংবাদিক।

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test