E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ

২০১৪ জুলাই ০৬ ১১:১০:৪২
ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ

চৌধুরী আ. হান্নান : বর্তমানে একটি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের একজন সাবেক চেয়ারম্যান অর্থ আত্মসাতের মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা পরিচালক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মালিক ও বটে। যারা মালিক তারা কিভাবে এবং কি উদ্দেশে নিজের ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ করেন তার হিসেবটা বুঝা কঠিন।

সরকারি ব্যাংকের পরিচালকগণ ব্যাংকের মালিক নন, তারা মালিকের প্রতিনিধি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থ আত্মসাৎ আমাদের দেশে একটি পুরাতন বিষয়। এক ভাই আর এক ভাইয়ের টাকা আত্মসাৎ করেছে। যৌথ কারবার থেকে এক অংশীদার অন্য অংশীদারের অলক্ষ্যে টাকা সরিয়ে ফেলেছে। ব্যাংকের এক অসৎ কর্মচারী গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা তুলে নিয়ে গেছে। গ্রাহকদের জমাকৃত টাকা ব্যাংক হিসাবে জমা না করে পকেটে রেখেছে। টাকা আত্মসাৎ করে ক্যাশিয়ার উধাও ।

অর্থ আত্মসাতের এরূপ নানা ঘটনা প্রায় প্রতিদিন পত্রিকায় জানা যায়। কিন্তু ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা পরিচালক নিজ ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন এমন খবর আগে শুনিনি। তবে কথিত আত্মসাতের সাথে জড়িত একজন প্রতিষ্ঠিত ও সম্মানিত ব্যক্তি শাহজালাল ব্যাংকের পরিচালক মোহাম্মদ সোলায়মানকে তাৎক্ষনিক গ্রেফতারের বিষয়টি বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। তাঁর কি পালিয়ে যাওয়ার আশংকা ছিল? প্রতীয়মান হয় আত্মসাৎকৃত অর্থ আদায়ের চেয়ে তাঁকে গ্রেফতার করাই মূখ্য। আর তাছাড়া জড়িত টাকার অংক ব্যাংকিং সেক্টরে সম্প্রতিককালে সংঘটিত আত্মসাৎ সংক্রান্ত ঘটনা সমূহের তুলনায় বেশি টাকা বলা যায় না। ১৪০ কোটি টাকা মাত্র। এ অর্থকে আত্মসাৎ বলা হয়েছে। কিন্তু পত্রিকার খবরে যা বলা হয়েছে তাতে আত্মসাৎ না বলে অনিয়মিত ঋণ বলা সমীচীন হতো। বেসিক ব্যাংকে লোপাট হওয়া টাকার পরিমান চার হাজার কোটি টাকার উপর যার মূলে রয়েছেন ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান-এমন অভিযোগ রয়েছে।

বেসিক ব্যাংকে অর্থ লোপাট, আত্মসাৎ লাগামহীনভাবে সংঘটিত হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর প্রথিতযশা ব্যাংকার ইব্রাহীম খালেদ স্যার বেসিক ব্যাংকে ‘ডাকাতি’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। তারপরও বিপুল অংকের টাকা উদ্ধারের তৎপরতা তেমন দৃশ্যমান নয়। অবশ্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফকরুল ইসলামকে অপসারণ করা হয়েছে। পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের ক্ষমতার ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে তিনি ‘বলির পাঠা’ হয়ে থাকতে পারেন।

তবে একজন সদস্য এ কে এম রেজাউর রহমান বিবেকের তাড়নায় সাহসিকতার সাথে বেসিক ব্যাংকের অনিয়মের কিছুটা চিত্র গত বছর সরকারকে জানিয়েছিলেন। এ জন্য তাঁকে পুরস্কৃত করা হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি। তবে সময়মত সর্তক হলে, প্রতিকারের ব্যবস্থা নিলে বেসিক ব্যাংকে ‘ডাকাতি’ বা ‘পুকুর চুরি’ ঠেকানো যেত।

গ্রেফতার হওয়া শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক মোহাম্মদ সোলায়মান কীভাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করবেন তা জানার আগ্রহ আমাদের নেই। তবে উদ্বেগ আছে অন্যখানে, সে বিষয়ে পরে আসছি।

অনেক বড় বড় কেলেংকারী সময়ের সাথে সাথে ছোট হয়ে আসে। অর্থাৎ মানুষ ভুলে যেতে থাকে।

সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেংকারীকে ব্যাংকিং সেক্টরের সর্ব বৃহৎ জালিয়াতি বলা হয়। কিন্তু সেখানে আমরা কী দেখলাম? মূল হোতাদের আড়াল করা হলো। জালিয়াতির মূল পরিকল্পনাকারী তানভীর মাহমুদ তার জবানবন্দিতে বোমা ফাটিয়েছিলেন, বলেছিলেন-তিনি পর্ষদের এক সদস্যকে তিন কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছেন। কিন্তু মানুষ বিস্ময়ের সাথে চেয়ে চেয়ে দেখলো অভিযুক্তকে পুলিশ রিমান্ডে নেয়া তো দূরের কথা, তাকে তেমন জিজ্ঞাসাবাদই করা হলো না।
সোনালী ব্যাংকের যে পরিচালনা পরিষদের ছত্র ছায়ায় কয়েকজন দুর্বৃত্তের মাধ্যমে তিন হাজার কোটি টাকার উপর লোপাট হলো তাঁদের কোনো দায় নেই বলে জানিয়ে দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আর এক বিস্ময় সৃষ্টি করলো। বিচার না হলে অপরাধের প্রতিকার, প্রতিরোধ হবে কীভাবে?

সরকারি ব্যাংক বহু কেলেংকারীতে জর্জরিত, ক্ষেত্র বিশেষে দুর্বৃত্ত দ্বারা আক্রান্ত। কিন্তু এখন দেখছি প্রাইভেট ব্যাংকের মালিক অর্থ লিপ্সায় লালায়িত হয়ে নিজ ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের মতো অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ছেন।
অপর আর এক প্রাইভেট ব্যাংক প্রিমিয়ার ব্যাংকের এক পরিচালক কর্তৃক সই জাল করে ১৩৪ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা ও আমরা পত্রিকায় দেখেছি।

সাধারণভাবে বলা হয় জনগণের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকের গ্রাহকদের টাকা এক সময় পেয়েই যায়। কারণ গ্রাহকদের জমাকৃত টাকা ব্যাংক ফেরত দিতে বাধ্য। প্রাইভেট ব্যাংক অনুমোদন দেয়ার পূর্বেই সরকার আইনগতভাবে সে ব্যবস্থা করে রাখে। যথেষ্ট পরিমান জামানত বাংলাদেশ ব্যাংকে রাখার বাধ্যতামূলক বিধান করা আছে। কিন্তু হাজার হাজার কোটি টাকা জালিয়াতি, আত্মসাৎ এর মাধ্যমে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বের হওয়া টাকার ক্ষতিকর প্রভাবে আক্রান্ত হয় সার্বিকভাবে জনগণ-প্রতিটি নাগরিক। পরিশ্রম ছাড়া অতি সহজে যে অর্থ হাতে আসে তার ক্ষমতা ব্যাপক। এই অবৈধ,কালো অর্থের মালিক বেপরোয়া আচরণ করতে বাধ্য। তার দাপটে আশপাশের লোকের শান্তিপূর্ণ বসবাস কঠিন। এ অর্থ মুদ্রা বাজারে প্রবেশ করে করে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। অস্ত্র, মাদক ইত্যাদি অবৈধ ব্যবসা গতিশীল হয়। সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি করে। এ অতিরিক্ত অর্থে সৃষ্ট সামাজিক অস্থিরতার জ্বালা নিত্য ভোগ করে চলেছে প্রতিটি নাগরিক।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।

(এএস/জুলাই ০৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test