E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাংলাদেশ ব্যাংকের কলংক তিলক

২০১৮ মার্চ ১২ ১৮:৩১:১০
বাংলাদেশ ব্যাংকের কলংক তিলক

চৌধুরী আবদুল হান্নান


ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন মহাব্যবস্থাপককে ৫৪ লাখ টাকার আত্মসাতের অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় শাস্তি হিসেবে দু’টি বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বন্ধ করা হয়েছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সমকাল পত্রিকা ‘গুরু পাপে, লঘু দন্ড’ শিরোনামে এ বিষয়ে খবর ছেপেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের ব্যাংকার এবং অন্যান্য সকল ব্যাংকের ব্যাংকার হিসাবে কাজ করে এবং এটি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আলাদা মর্যাদা ভোগ করে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের মত তাদের বিদেশে কোনো শাখা নেই কিন্তু দেশের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে।

কেবল মর্যাদার আসনে আীিন থাকলেই তো চলে না, কিছু ভাল কাজ করেও দেখাতে হয়। বর্তমানে কারও অজানা নয় যে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে ব্যাংকিং খাত নিয়ন্ত্রনে তাদের ব্যর্থতা এখন চরমে।

ব্যাংকিং এখন অরাজকতা আর আতংকের নাম। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে ব্যাংকের অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধ করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যতম কাজ। সেই সংস্থারই একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের এ ঘটনা প্রকাশের পর ব্যাংক খাতে ব্যাপক সমালোচনা জন্ম দেয়। বলা হয় , বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য আইন, বিধি-বিধানের অভাব নেই, অভাব রয়েছে তা প্রয়োগ করার সক্ষমতা। আইন আছে, প্রয়োগ নেই।

এ খাতের বিশেষজ্ঞগণ অনবরত বলে আসছেন, তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। প্রতারণামূলক কাজে জড়িত একজন মহাব্যবস্থাপক মোঃ খুরশির আলমের মত একজন অবিশ্বাসী কর্মকর্তাকে দিয়ে কিভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, তা এক বড় প্রশ্ন।

আত্মসাৎকৃত অর্থের পরিমান বড় বিষয় নয়, বড় বিষয় হচ্ছে নৈতিকতা। সততা, বিশ্বাস মানদন্ডে যারা উত্তীর্ন নয়, তারা ব্যাংকের জন্য বিপদজনক।

দেখা যায়, অডিট টিম যখন ব্যাংকের কোনো শাখা পরিদর্শনে যায়, ব্যাংক খোলার পূর্বেই শাখায় হাজির হয়ে যায় । তারা প্রথমেই দু’টি বিষয় যাচাই করে থাকে শাখার বিদ্যমান ক্যাশ এবং চিঠি পত্র বিতরণের রেজিষ্ট্রার ও সংশ্লিষ্ট পোষ্টাল ষ্টাম্প, ক্যাশ। একটি শাখার চিঠি পত্র বিতরণের ক্ষেত্রে সামান্য অর্থ গরমিলের কারণে গুরুদ- হওয়ার নজির কম নেই।

বার্তা একটাই নৈতিকতা, সততা সর্বাগ্রে। অর্থ আত্মসাতের বা নৈতিকতা স্খলনের এমন ‘অভাক বিচার’ বাংলাদেশ ব্যাংকে ইতিপূর্বে কেউ দেখেনি। এমন কি অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও এমন হাস্যকর বিচার খুঁজে পাওয়া কঠিন । এর খারাপ প্রভাব সমাজের প্রতিটি স্তরে সংক্রামিত হবে এবং প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীন নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা শিতিল হতে থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ‘সততা সন্দেহজনক’ এমন এক মহাব্যবস্থাপককে কীভাবে ব্যাংকের জন্য অপরিহার্য বিবেচনা করলেন?

‘রিজার্ভ চুরির’ পর পর ব্যাংকিং খাতে নানাবিধ সংকটের মধ্যে ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ফজলে কবির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাদশ গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন । ব্যাংকের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ ব্যাকের নানা পদক্ষেপ সত্ত্বেও কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষনীয় নয়। বরং ক্ষেত্র বিশেষ ব্যাংকিং খাত বাইরের দুর্বৃত্তের দ্বারা আক্রান্ত।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরে যদি অর্থ আত্মসাতকারীদের কঠোর হস্তে দমন করা না হয়, তাহলে কীভাবে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তারা জোরালো ভুমিকা রাখবে সে প্রশ্ন গভর্নরের নিকট আমরা করতে পারি।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test