E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নিষিদ্ধই কি সমাধান ?

২০১৪ মার্চ ০৬ ১৩:৪৭:২৮
নিষিদ্ধই কি সমাধান ?

প্রবীর কুমার : সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সন্ত্রাস বিষয়ক গবেষনা প্রতিষ্ঠান I. H. S কর্তৃক Global Terrorism and Insurgency Attack Index 2013 শিরোনাম শীর্ষক এক তথ্য উপাত্ত নির্ভর সেমিনারে বাংলাদেশী ছাএসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরকে বিশ্বের তৃতীয় বিপদজনক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে চিহ্নিত করেছে। যা কিনা এতদিন বাংলাদেশী মানুষদের কাছে পরিচিত ছিল, এখন তা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও বিদৃত। এটা আমাদের দেশের জন্য অবশ্যই বিব্রতকর ও অসম্মানজনক। এমনিতেই আমাদের দেশের, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নানা নেতিবাচক ধারণা বিদ্যমান। তার উপর সম্প্রতি শিবিরের এই তকমা রাষ্ট্রের জন্য অনেক ক্ষতির পূর্বাভাস। “এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা আর তারপর থেকেই রাষ্ট্রযন্ত্র, রাষ্ট্রের দর্পণ (!) সুশীল সমাজ নড়েচড়ে বসেছে। শিবিরকে নিষিদ্ধের দাবি উঠছে। আসলে শুধু শিবিরকে নিষিদ্ধ করলে কতটুকু ফলদায়ক হবে সেটা কি ভাববার বিষয় নয়?

কারণ ওরা বরাবরই নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবার জন্য হেন কোন কাজ নেই যা অদ্যাবধি করে নাই বা করছে না। এ কথা অস্বীকার করার কোন কারন নেই যে শুধু মাত্র ৩% জনসমর্থন নিয়ে থোড়াই-কেয়ার অতীতের ন্যায় এখনো করছে কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র কিচ্ছু করতে পারছে না ! তাহলে এদের শক্তি কত গভীরে।

এদের শক্তির উৎস কোথায়?

এটা কি ভাববার বিষয় নয়? সুদূর অতীতে তাকালে দেখা যায় বাংলাদেশ সৃষ্টির পরে বঙ্গবন্ধুর জমানায় ১৯৭৩ সালে এই সংগঠনটি নিষিদ্ধ হয়েছিল, যদিও তখন শিবির নয় ইসলামী ছাত্রসংঘ নামীয় পূর্বতন সংগঠন বাংলাদেশের স্বাধীকার আন্দোলনে বিরোধীতাই শুধু নয় রাষ্ট্রকে মেধাশূন্য-দিকপালশূন্য করতে পাকিসেনাদের সাথে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞে লিপ্ত হয়েছিল। শুধু কি তাই? ব্যাপকহারে ধর্ষন, অগ্নি সংযোগ, লুন্ঠন, সংখ্যালঘু নিধনে অগ্রসেনাণীর ভূমিকায় ছিল।

কিন্তু জাতি কি দেখেছে? জাতির জনককে স্ব-পরিবারে হত্যার পরে পেছন দরজা দিয়ে সঙ্গীন উচিয়ে ক্ষমতায় আসা জেনারেল জিয়া জামাত-ছাত্রসংঘকে নিষিদ্ধের ঠিক পাঁচ বছরের মাথায় রাজনীতি করার সুযোগ দেয়। নাম-ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় ইসলামী ছাত্রশিবির আর তাইতো দেশের এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবি(!) জেনারেল জিয়াকে বহুদলীয় গনতন্ত্রের প্রবক্তা বলে আত্মতৃপ্তির ঢেকুড় তোলবার সুযোগ পায়।

এটা কি জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা নয়?

যদিও আমার প্রশ্নটা অন্য জায়গায়, এখন যদি শিবির কে নিষিদ্ধ করাই হয় তাহলে ভবিষ্যতে আবার কোন জিয়া এসে তাদের রাজনীতি করবার সুযোগ দেবে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে? এখানে আর একটি বিষয় ভাববার আছে তাহলো তৎকালীন ছাত্রসংঘ মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে থ্রি-নট-থ্রি এর প্রশিক্ষন নিয়েছিল। অর্থনৈতিকভাবেও ততটা শক্তিশালী অবস্থান ছিল না । আর্থিক দিকটা বরাবরেই মুখাপেক্ষি থাকতে হতো তাদের সাবেক প্রভুদের উপর।

জনসমর্থন? তাও ছিল নাম কা-ওয়াস্তে। বর্তমানে?

অস্ত্রের ট্রেনিং টা তালেবান আফগানিস্তানের কল্যানে থ্রি-নট-থ্রি এর পরিবর্তে এ-কে ৪৭, এম ১৬, কালাশনিকভ সহ হালের এমন কোন অত্যধুনিক অস্ত্র নেই যা তাদের করায়ত্ত, তালিম নেয়া নেই। শুধু কি তাই? তারা এখন অত্যন্ত শক্তিশালী বোমা, হাত গ্রেনেড বানাতে পারঙ্গম। আর প্রয়োগ ? সেটা তো হরহামেশাই ঘটছে।

অর্থ?

তার জন্য এখন আর বিদেশী প্রভুদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়না। বিগত জোট সরকারের কল্যানে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল, টিভি, পত্রিকা, শিল্প প্রতিষ্ঠান আর কোচিং বানিজ্যের নেপথ্যে সশস্ত্র প্রশিক্ষন তো আছেই। এ যে তুঘলকী কান্ড।

জনসমর্থন?

হোক না মোট জনসংখ্যার ৩% এরাই বাকি ৯৭% কাভার দিতে সক্ষম। কারন তাদের যারা আছে সচিবালয় থেকে শুরু করে মাঠ প্রশাসন, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিষ্টার, শিক্ষক থেকে সাবান ফ্যাক্ট্ররীর মালিক পর্যন্ত তারাই। আর মহাজোটের মন্ত্রী-পাতিনেতাদের কল্যানে স্বাস্থ্য-সহকারী পর্যন্ত তাদেরই আধিক্য। তারা শুধু মাসিক বায়তুল-মাল এ অর্থ প্রদান করে ক্ষান্ত হয় না, দলের দাওয়াতও দেয়। শুধু কি তাই? দলের প্রয়োজনে পেট্রোল-বোমাও মারে। এদের সাথে কি বাকি ৯৭% এর তুলনা? এরা তো আর ছাত্রলীগ নয়। তাই এই আদার বেপারীর বলা-যে, শুধু কয়লা ধুলেই চলবে না, তা ঘষে ঘষে নিঃশেষ করার উপায় বের করতে হবে। তাহলেই যদি কেবল এই পাপ পদ্মা, মেঘনা,যমুনায় বিলীন হয় নচেৎ পুরোনো মদ নতুন বোতল জাতের মাধ্যমে বাজারজাত করার সম্ভাবনা থেকেই যাবে।

লেখক : ছাত্র

ই-মেইল : [email protected]

(/এইচআর/মার্চ ০৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test