E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

একটি খোলা চিঠি

২০১৮ জুন ১৫ ২০:৫৬:৩৯
একটি খোলা চিঠি

সঙ্গীতা ইমাম


আমি একজন নগন্য মানুষ। প্রিয়জন, সুজন, ভালো মানুষের অপঘাতে মৃত্যু আমাকে কাঁদায়,অস্থির করে, বুক বেদনার চাপ ধরে থাকে। মরছে কারা? মারা হচ্ছে কাদের? যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বাংলাদেশ চেয়ে উচিত কথা বলতে ভয় পান না। যাঁরা দেশটাকে পাকিস্তান বা আরব দেশে পরিণত করার চক্রান্তকে প্রতিহত করায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তাদেরকেই।

এদেশটা সোনার বাংলা হলে যাদের উদ্দেশ্য সফল হবে না, এদেশটা বাহাত্তরের সংবিধানের আদর্শে চললে যে পরাজিত শক্তি আজ আবার স্বরূপে শক্তি প্রদর্শনের সাহস দেখাচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ হবে না, তারাই ধরে ধরে বেছে বেছে জন্মভূমিকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসা মানুষদের নৃশংসভাবে খুন করার ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে। তাদের ছায়ায় আরো কারা না জানি নিজের কাজ হাসিল করে নিচ্ছে, রাগ বিদ্বেষ মিটিয়ে নিচ্ছে কে জানে।

ঘাতকরা একতাবদ্ধ। তারা উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নানা নামে, নানা রূপে জোট বাঁধছে। তারা জনগণকে যা খুশি তাই বুঝাচ্ছে, ঢাল হিসাবে নিয়েছে ধর্মকে। এরা নানা সময়ে ক্ষমতায় থাকায় বা ক্ষমতাসীনদের লোভ দেখিয়ে প্রশাসনের নানা পর্যায়ে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, প্রতিরক্ষার নানা বাহিনীতে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আজ। তাদেরই ছত্রছায়ায় ঘাতকেরা, সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের সৈনিক লেখক,মুক্তচিন্তক, শিল্পী, শিক্ষকদের ধরে ধরে সুকৌশলে এবঙ নৃশংসভাবে খুন করছে। যাতে মানুষ ভয় পেয়ে কোন কিছুর কোন প্রতিবাদ না করে।

আমরা কি প্রতিবাদ করি না? করি কিন্ত একই রাস্তায় পাঁচিশজন করে পাঁচটা মঞ্চ করে। একেকজনের মাইক থেকে ঘাতকের বিরুদ্ধে যত না কথা বলা হয় তার চেয়ে বেশি বিষোদগার করা হয় একই আদর্শের ক্ষুদ্র স্বার্থে বিভাজিত হওয়া ভাইবোনদের প্রতি। এভাবেই আমরা একান্ত ব্যক্তিগত ক্ষুদ্র স্বার্থে বিভাজিত হচ্ছি মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সন্তান, আদতে দেশপ্রেমী মানুষ। তাতে স্বার্থসিদ্ধি হচ্ছে কাদের একবারও ভেবে দেখেছি কি? একাত্তরে যাদের পরাজিত করতে আমাদেরই বাবা, মায়েরা প্রাণ দিয়েছিলেন বা জীবনবাজি রাখতে একবারও ভাবেননি যে প্রজন্ম তারাই আজ পরাজিত হচ্ছেন আমাদের এই ক্ষুদ্র স্বার্থের খেয়োখেয়িতে। হেরে যাচ্ছে প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ। উল্টো পায়ে চলছে আমাদের ই জন্মভূমি।

জানি ক্ষুদ্র এই আমার কোন যোগ্যতা নেই এ কথা বলার তবু আমিই আমার পিতৃমাতৃতুল্য সংস্কৃতিজন, যাঁরা একাত্তরে এক হয়েছিলেন কেউ হাতে অস্ত্র কেউবা কন্ঠে গান, নাটকের সংলাপ, কবির জ্বালাময়ী কবিতা ধারণ করে দেশটা শত্রুমুক্ত করেছেন তাদের প্রতি আহ্বান; আহ্বান সেই জেষ্ঠ্য ভাই বোনদের যারা যুদ্ধ বিদ্ধস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে নিজেদের স্বপ্নের তারুণ্যকে উৎসর্গ করেছেন; আহ্বান সকল বন্ধু সমবয়সী সহযোদ্ধাদের প্রতি যারা আমরা মুক্তিযুদ্ধ করতে পারিনি বলে আজও আক্ষেপ করি;
আহ্বান তোমাদের প্রতি যাদের চোখে ভবিষ্যতের সোনার বাংলা দেখবো বলে জেগে স্বপ্ন দেখি;
গুরুজনের আদেশ দিন একতাবদ্ধ হবার আপনাদের পায়ের কাছে বসে মন্ত্রণা নেবো আমরা। আপনাদেরই নির্দেশে পরের দুই প্রজন্ম সব হীন স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে যুথবদ্ধ হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি আরেকটি মুক্তিযুদ্ধে। যে যুদ্ধ আমাদের জন্মভূমিকে মুক্ত করবে সকল মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি ও চেতনার কবল থেকে।

আরেকবার কেউ সেই অবিস্মরণীয় ডাকটি দেন যে ডাকে আমরা যার যা আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বো। এবারে লড়াইটাও বাঁচার লড়াই। আর আমরা পথে ঘাটে রেলরাস্তায়, নিজের ঘরে, কাজের জায়গায় অপঘাতের লাশ হয়ে পড়ে থাকতে চাই না। একটা যুথবদ্ধ সাংস্কৃতিক আন্দোলনই দিতে পারে আমাদের স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা।

মুক্তিযোদ্ধা পিতামাতারা ডাক দিন, বন্ধু আর অনুজরা আমরা প্রস্তত হই। আবার বাঁচার লড়াইয়ে এক হই।

লেখক: শিক্ষক ও সংস্কৃতি কর্মী

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test