E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১৫ আগস্ট ১৯৭৫ : পর্ব ০২

২০১৮ আগস্ট ২৯ ২৩:২১:১৪
১৫ আগস্ট ১৯৭৫ : পর্ব ০২

সুচিন্ত্য সাহা


আমরা তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন মুখ, সবেমাত্র প্রথম বর্ষের ছাত্র। জগন্নাথ হলের ছাত্র রাজনীতির ফাঁক ফোকর কিছুই বুঝতে পারছি না।

জগন্নাথ হলের সব ছাত্রদের মধ্যে প্রকাশ্যে ভীষন বন্ধুত্ব, কিন্তু ভেতরে ভেতরে জাতীয় ছাত্রলীগে অন্তর্ভুক্ত থেকেও ছাত্র ইউনিয়নের দাদারা নিজেদের মতো করে থাকেন জগন্নাথ হলের নর্থ হাউসে। বলা বাহুল্য, নর্থ হাউস বা উত্তর বাড়ি হলো এক কক্ষ বিশিষ্ট। জগন্নাথ হলের ভালো ছাত্রদের জন্য বরাদ্দ দেয়া হতো ওই নর্থ হাউস। আর ওই নর্থ হাউস তথা উত্তর বাড়ি ছিল ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের দখলে। বাকশালের নেতৃত্বে তার অঙ্গ সংঘটন হিসেবে জাতীয় ছাত্রলীগের যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তার ২১ সদস্যের পলিটব্যুরোর সদস্যের মধ্যে জগন্নাথ হলের ছিল তিন জন। এরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবি ছাত্র ছাত্রলীগ নেতা পদার্থ বিজ্ঞানের নিমচন্দ্র ভৌমিক আর ছাত্রলীগের তাত্বিক নেতা হিসেবে পরিচিত ছোটখাট মানুষ হরে কৃষ্ণ দেবনাথ । ছাত্র ইউনিয়ন থেকে ছিলেন সেই সময়ে জগন্নাথ হলে মিষ্ট ভাষী হিসেবে পরিচিত অজয় দাসগুপ্ত। বলা হয়ে থাকে বঙ্গবন্ধু নিজে জাতীয় ছাত্রলীগের এই কমিটি গঠন করেছিলেন । এ ছাড়াও সেই সময় জগন্নাথ হলের জাতীয় ছাত্রলীগের অন্যান্য পরিচিত নেতাদের মধ্যে ছিলেন ছাত্রলীগের স্বপন সাহা, মুকুল বোস, দ্বিজেন্দ্র নাথ সাহা, সঞ্জয়দা, সতেন্দ্র নাথ ভক্ত এবং ছাত্র ইউনিয়নের কার্তিক চ্যাটার্জি, মৃণাল সরকার, সনৎ ঘোষ, বিনয় ভূষন মজুমদার প্রমুখ।

আমরা তখনো প্রথম বর্ষের ছাত্র হিসেবে সব নেতাদের কাছে তেমন পরিচিত তথা ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠতে পারিনি। এমনই এক পর্যায়ে হরে কৃষ্ণ দেবনাথদার সাথে একদিন পরিচয় হয়ে গেল। প্রথম পরিচয়েই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। উনার প্রতি আলাদা একটা শ্রদ্ধাবোধ অনুভব করলাম। আর এই পরিচয় পর্বটি হয়েছিল আঞ্চলিকতার কারণে ঘনিষ্ঠ দ্বিজুদার কল্যাণে। দ্বিজেন্দ্র নাথ সাহা অর্থাৎ দ্বিজুদার বাড়ি আর আমাদের বাড়ি একই এলাকায়। তৎকালীন যশোর জেলার মাগুরা মহকুমার নাকোল গ্রামে আমাদের বাড়ি; দ্বিজুদার বাড়ি ফরিদপুর জেলার কামারখালিতে। নাকোল আর কামারখালির মাঝদিয়ে বয়ে চলেছে মধুমতি নদী; আমরা দুইজন মধুমতির এপার আর ওপারে বাসিন্দা। দ্বিজুদা কামারখালির একটা শিক্ষিত উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন । এটা সেই সময়ের জগন্নাথ হলের অন্য নেতারা না বুঝলেও শেখ কামাল বুঝেছিলেন ঠিকই। শেখ কামাল জগন্নাথ হলে এলেই হলের সাউথ হাউসের সামনে নিজের খোলা জিপে দাড়িয়ে চমৎকার করে ডাকতেন 'দ্বিজু খান' 'দ্বিজু খান' বলে।

১৫ আগস্ট সকাল বেলা বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন। পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সপ্তাহ ধরে চলছে সাজ সাজ রব। জগন্নাথ হলের সবার মধ্যে আলাদা একটা উত্তেজনা। কারণ জগন্নাথ হলের শহীদ মিনার গেট দিয়ে বঙ্গবন্ধু প্রবেশ করবেন, আর উত্তর বাড়ির গেট দিয়ে বেরিয়ে সামসুননাহার হলের সামনে দিয়ে ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র তথা টিএসসিতে যাবেন।১৪ আগস্ট সারা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে শেখ কামালের নেতৃত্বে জাতীয় ছাত্রলীগের অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক সদস্য সজাগ রয়েছেন। এই অবস্থার মধ্যেও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দিনের বেলা তিনটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি এলাকায় যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত ছিল তাদের মধ্যে একজন শেখ কামালের কর্মীদের হাতে ধরা পড়ে।

পরবর্তীতে অবশ্য জানা যায়, এটা জাসদের গণবাহিনীর কাজ ছিল।

হঠাৎ করেই ১৪ আগস্ট দিবাগত রাত বারোটার দিকে শেখ কামালের খোলা জিপ জগন্নাথ হলের সুধীরদার ক্যান্টিনের পাশে এসে থামে।

আমি মন্ত্রী হবো নাটকের সেই ভরাট গলায় শেখ কামাল ডাক দিলেন 'দ্বিজু খান' 'দ্বিজু খান'! শেখ কামালের উপস্থিতি জানতে পেরে ইস্ট হাউস ও সাউথ হাউস থেকে সব নেতাকর্মীদের বেরিয়ে আসতে থাকে। এটা দেখে তাদের দিকে হাত উঁচিয়ে শেখ কামাল বললেন, তোমরা সবাই সাবধানে থেকো। আবার আগামী কাল দেখা হবে । মূহূর্তের মধ্যে শেখ কামালের জিপটা ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটির স্টাফ কোয়ার্টার দিকে চলে গেল।

[চলবে]

লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও সমাজ সচেতন প্রবাসী ব্যবসায়ী।

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test