E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঋণ খেলাপিদের না বলুন

২০১৮ নভেম্বর ০৫ ১৬:০৫:৫৭
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঋণ খেলাপিদের না বলুন

চৌধুরী আবদুল হান্নান


ঋণ খেলাপিদের দৌরাত্মে ব্যাংক ব্যবস্থা ক্রমশ দুরঅবস্থা থেকে পঙ্গুত্বের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। কোন কৌশলই কাজে আসছে না, তাদের আটকানো যাচ্ছে না। এক ব্যাংকে খেলাপি ঋণ রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবি ফাঁকি দিয়ে অন্য ব্যাংক থেকে ঋণের নামে টাকা বের করে নেওয়ার নজিরও কম নেই।

একই ব্যক্তি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে বেনামে ঋণ বের করে নেওয়া অনেকের কাছে তেমন কঠিন কাজ নয়। এই ‘ঋণ বাণিজ্য’ একবার যারা রপ্ত করে ফেলেছে তাদের গতি রোধ করা সহজ নয়। ব্যাংকের টাকা আত্মসাতকারী প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ ও ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের কারণে ব্যাংক খাত আজ ধুকছে।

মার্চ, ১৮ ভিত্তিক হিসাবে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমান ৮৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং অবলোপনকৃত ঋণসহ যা দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এ ছাড়া রয়েছে বেনামী ঋণ। ঋণ মঞ্জুর হবে এক নামে, তা ভোগ করবে অন্যজন। সারা দেশে এমন বেনামী ঋণ কি পরিমান রয়েছে তা খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকও বলতে পারবে না। কারণ তাদের কাছে খেলাপি ঋণের তথ্য থাকে, বেনামী ঋণের নয়। বেনামী ঋণ যেদিন বিতরণ হয়, সেদিনই তা অনিনিয়মিত ঋণ, খেলাপি ঋণ।

বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকে অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণ রয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকার ওপর যা আদায় হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করা হয়। যাদে ঋণ অবলোপন করা হয়েছে, তারা কারা? একদা ব্যাংক পাড়া দাপিয়ে বেড়ানো, তারা এখন নিভৃতচারী, অচেনা মানুষ। সুচারু রুপে কার্যসিদ্ধি শেষে তারা এখন ভেজা বিড়াল।

অন্যদিকে খেলাপি ঋণ আদায়ে আদালতে মামলা দায়ের করেও তেমন ফল পাওয়া যায় না, বর্তমানে এমন আড়াই লক্ষাধিক মামলা বিচারাধীন। এক্ষেত্রে অপর একটি বিষফোঁড়া রয়েছে। তা হলো- আদালতে ঋণ খেলাপিদের রীট আবেদন। অনেকেই উচ্চ আদালত থেকে স্তগিতাদেশ লাভ করে থাকে, ব্যাংক তাদেরকে খেলাপি দেখাতে পারে না। ঋণ খেলাপিরা অত্যন্ত ক্ষমতাধর। ব্যাংক থেকে যারা বিপুল অর্থ অবলীলায় বের করে নিতে পারে, ফেরত দেয় না, তারা কত ক্ষমতাধর অধিকারী তা বুঝতে অসুবিধা হয় না।

প্ররিশ্রম ছাড়া সহজে যে অর্থ হাতে আসে, ফেরত দিতে হয় না, তার ক্ষমতা ব্যাপক। এ বিপুল অর্থ এক সাময় অবৈধ, কালো টাকার ভূমিকা গ্রহণ করে এবং এর মালিক বেপরোয়া আচরণ করতে বাধ্য। তার দাপটে আশপাশের লোকের শান্তিপূর্ণ বসবাস সম্ভব নয়। এ অর্থ মুদ্রা বাজারে প্রবেশ করে দ্রব্যমূল্যে বাড়তি চাপ সৃষ্টি কওে, পুঁজি বাজার অস্থির করে। অবৈধ অস্ত্র, মাদক ইত্যাদি ব্যবসা গতিশীল হয়। এ অতিরিক্ত অর্থে সৃষ্ট সামাজিক অস্থিরতার জ্বালা ভোগ করতে হয় নাগরিকদের।

সরকারের নানাবিধ উন্নয়ন লক্ষনীয়। কিন্তু রাষ্ট্রের অর্থ ভান্ডার ব্যাংক খাত দুর্বৃত্তের কবলে রেখে নিশ্চিত থাকা যায় না। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে খেলাপি ঋণ আদায়ের এক বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে। নির্বাচনে ঋণ খেলাপিরা যাতে অংশ নিতে না পারে, ব্যাংকগুলো সে উদ্যোগ গ্রহণ করবে। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামে খেলাপি ঋণ থাকলে তা নির্বাচন কমিশনে জানিয়ে দিতে হবে। প্রার্থীতা বাতিল হওয়ার আশংকা থাকলে তারা ঋণ পরিশোধ করে ব্যাংকের ছাড়পত্র নিতে বাধ্য হবে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকে এক্ষেত্রে মূল দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রতিটি ব্যাংক নিজ নিজ ক্ষেত্রে এ কাজে কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অর্পণ করবে এবং একটি মনিটরিং সেল গঠন করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কেন্দ্রীয়ভাবে তথ্য সংগ্রহসহ নির্দেশনা দেবে।

সব কাজ সরকার করে দেবে না, সরকার এখন নির্বাচন নিয়ে অতিরিক্ত ব্যস্ত, ঋণ আদায়ের উদ্যোগটা এককভাবে ব্যাংকারদেরই নিতে হবে। ব্যাংকগুলো আন্তরিক হলে খেলাপি ঋণ আদায়ের এক উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কতটা সফলতা আসবে তা নির্ভর করবে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সকল ব্যাংকের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার ওপর।


লেখক : সাবেক ব্যাংকার

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test