E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সরকার কৃষক বান্ধব কিন্তু ব্যাংকগুলোর বৈরিতা কেন?

২০১৮ নভেম্বর ০৯ ১৭:৩৫:২৭
সরকার কৃষক বান্ধব কিন্তু ব্যাংকগুলোর বৈরিতা কেন?

চৌধুরী আবদুল হান্নান


গত ৭ সেপ্টেম্বর একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, মামলার জালে আটকা ২ লাখ কৃষক। কৃষি ঋণ আদায়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংক এসব মামলা করেছে। অন্য এক খবরে আছে পাঁচশ’ কোটি টাকা আদায়ের জন্য এক লাখ ৬৫ হাজার কৃষককে আসামি করে ইতিপূর্বে মামলা করা হয়েছিল যা আজও আমীমাংসিত। এ পরিমান অর্থ দেশের এক-দু’জন দুর্নীতিবাজ লোকের পকেটে কালো টাকা হিসেবে পাওয়া যাবে।

কৃষকের বিরুদ্ধে মামালা করতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বেশি উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়। অনেক ব্যাংকার মনে করেন কৃষকের বাড়িতে পুলিশ নিয়ে গেলে টাকা আদায় হয় দ্রুত। কারণ কৃষকেরা পুলিশের ভয়ে পাওনা পরিশোধ করে দেন। পুলিশের ভয়ে বাড়িছাড়া হবে, পালিয়ে বেড়াবে। এক সময় দুধের গাভী, কলসি, জমি বিক্রয় করে দেনা পরিশোধ করে নিস্কৃতি পাবেন। অথচ বিপরীত চিত্র অন্য ঋণের ক্ষেত্রে। বড় ঋণের ক্ষেত্রে ঋণ পরিশোধ করলেও তাদের কিছু হয় না। বড় বড় ঋণ খেলাপি, ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের দাপটে ব্যাংক খাত এখন ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এক জনসভায় একবার বলেছিলেন- আমাদের উচিৎ কৃষকদেও সালাম করা। আমাদের কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলে থাকেন-আমরা কৃষকদের মুখে হাসি দেখতে চাই। সম্প্রতি মাননীয় কৃষিমন্ত্রী ৭ লাখ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদেও জন্য ৮০ কোটি টাকার প্রনোদনা ঘোষণা করেছেন, এ অর্থ কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাজেট বরাদ্দ থেকে দেওয়া হবে (সমকাল, ৮/১০/১৮)। কৃষিমন্ত্রী বলেন-গ্রীষ্মকালীন আবাদে কৃসকদের উৎসাহিত করতেই এ প্রনোদনা। এর ফলে প্রাকৃতিক কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করছি।

বর্তমান সরকার যেখানে কৃষি ও কৃষক বান্ধব, সেখানে ব্যাংকগুলোতে বিপরীত সুর বাজে কী করে? ব্যাংকের নীতিনির্ধারকেরা কী সরকারের মনোভাব বুঝতে পারেন না? ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঋণ আদায়ে আইনি বাধ্যবাধকতা থাকায় তাদের মামলায় যেতে হয়। আইন কী কেবল প্রান্তিক কৃষকদের বেলায়? যারা ব্যাংক থেকে ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে, ফেরত দেয়ার নাম নেই, আইন কী তাদের বেলায় নীরব থাকবে?

আমরা কেন ভাবতে পারি না, বার বার ভাবতে পারি না যে কৃষকরাই আমাদের খাদ্যের যোগানদাতা। দেশেকে শষ্য ভান্ডারে পরিণত করে দিয়েছে, রপ্তানির তালিকায়ও স্থান পাচ্ছে। এই সাফল্যের অণ্যতম কারণ কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। বিভিন্ন ফসলের উচ্চ ফলনশীল জাত ও উন্নত উৎপাদন প্রযুক্তি দেশের কৃষিকে কাংখিত মাত্রায় পৌঁছাতে সহায়ক ভূমিকা রেখে চলেছে। এর পেছনের মূল চালিকা শক্তি যারা তাদের সালাম করতে না পারি, তাদের প্রতি নির্মমতা একেবারেই মানায় না।

আমাদের মনে রাখতে হবে দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তির অন্যতম হলো কৃষি ও কৃষক। কৃষকদের অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে হবে। ব্যপক দুর্নীতির কবলে নিপাতিত বাংলাদেশে কৃষকগণ দুর্নীতিমুক্ত এক বিপুল জনগোষ্ঠী। এখন যারা দেশে-বিদেশে উচ্চ পদে আসীন তাদের অনেকেই কৃষক পিতার ঘাম ঝরানো অর্থে এক সময় লেখাপড়া করেছেন।

একটি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জন্য ঋণ খেলাপি কৃষকের প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার নানা পথ খোলা থাকে ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকদের কাছে। কেবল প্রয়োজন অনুকূল মানসিকতার। সামান্য টাকা পরিশোধ করতে অসামর্থের কারণে পূর্ব বিবেচনা না করে কৃষকের নামে মামলা দায়ের আমাদেও জন্য কেবল লজ্জাই নয়, ব্যর্থতাও।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test